মাদারীপুর-৩ আসনের সাংসদ ও আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপের বিরুদ্ধে ইউপি নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। আজ বুধবার দুপুরে মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার ছয় ইউপি চেয়ারম্যান প্রার্থী আলাদাভাবে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দেন।
অভিযোগে বলা হয়, ইউপি নির্বাচনের আচরণবিধির তোয়াক্কা না করে সাংসদ গোলাপ তাঁর নিজ বাসভবনে বসে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী এবং ইউনিয়নে তাঁর নেতা-কর্মীদের নিয়ে সভা করে নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করছেন। দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাইছেন ও কৌশলে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
লিখিত অভিযোগ দেওয়া প্রার্থীরা হলেন শিকারমঙ্গল ইউপির স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী এম এ কুদ্দুস ব্যাপারী, কয়ারিয়া ইউপির স্বতন্ত্র প্রার্থী তোফায়েল আহমেদ, কামরুল হাসান নুর মোহাম্মদ মোল্লা, চরদৌলতখান ইউপির আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মিলন মিয়া, সাহেবরামপুর ইউপির আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মাহবুবুর রহিম এবং গোপালপুর ইউপির স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. ফরহাদ মাতুব্বর।
এম এ কুদ্দুস ব্যাপারী তাঁর লিখিত অভিযোগে বলেছেন, ১ নভেম্বর থেকে সাংসদ নির্বাচনী এলাকার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের উদ্বোধনের নামে নিজ এলাকায় অবস্থান করছেন। তাঁর প্রকাশ্য মদদে কালকিনি ও ডাসার উপজেলার ১৩টি ইউপিতে সহিংসতা বেড়েছে। আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সমর্থক গোষ্ঠী দ্বারা স্বতন্ত্র ও বিদ্রোহী প্রার্থীর বাড়িঘরে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেছে। এমনকি প্রতিপক্ষের লোকজন ভোটকেন্দ্রে এজেন্টদের নিয়োগ না দেওয়ায় হুমকিও দিচ্ছেন।
অভিযোগে বলা হয়, ইউপি নির্বাচনের আচরণবিধির তোয়াক্কা না করে সাংসদ গোলাপ তাঁর নিজ বাসভবনে বসে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী এবং ইউনিয়নে তাঁর নেতা-কর্মীদের নিয়ে সভা করে নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করছেন।
সাংসদের অনৈতিক হস্তক্ষেপ থেকে পরিত্রাণ পেতে আবেদন জানিয়েছেন কয়ারিয়া ইউপির স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী তোফায়েল আহমেদ। তিনি লিখিত অভিযোগে বলেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাকির হোসেন জমাদ্দার প্রচারণার দিন থেকেই তাঁকে হুমকি, উসকানিমূলক বক্তব্য, ভোটারদের হুমকিসহ নানাভাবে চাপে রেখেছেন। এসব অনৈতিক কর্মকাণ্ডে সমর্থন দিচ্ছেন স্থানীয় সাংসদ। সাংসদের এমন আচরণ ইউপি নির্বাচনের বিধিমালা ২০১৬ বিধি ৩০-এর পরিপন্থী। সাধারণ জনগণের নিরাপত্তার স্বার্থে সাংসদের অনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধের দাবিও জানান তিনি।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ১ নভেম্বর দুপুরে সাংসদ আবদুস সোবহান গোলাপ ঢাকা থেকে মাদারীপুর সদরে আরেক সাংসদ শাজাহান খানের বাসায় আসেন। ওই দিন বিকেল পাঁচটায় সাংসদ গোলাপ মাদারীপুর সদর থেকে চলে যান তাঁর নির্বাচনী এলাকায়। অবস্থান করেন তাঁর গ্রামের বাড়ি রমজানপুর এলাকায়। এরপর আজ সকালে কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে আসেন সাংসদ। দলীয় কার্যালয়ে জেলহত্যা দিবসে আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন তিনি। সাংসদের নির্বাচনী এলাকার কর্মসূচি থেকে জানা যায়, ৪ ও ৫ নভেম্বর সাংসদ আবদুস সোবহান গোলাপ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন এবং ৬ নভেম্বর জাতীয় সমবায় দিবস উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় যোগ দেবেন।
কালকিনি উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ফরিদ সরদার বলেন, ‘সাংসদ আবদুস সোবহান গোলাপ এলাকায় খুব কম আসেন। ইউপি নির্বাচনে তৃণমূল থেকে কাউকে মনোনয়ন না দিয়ে তিনি তাঁর “নিজস্ব ম্যানদের” মনোনয়ন দিয়েছেন। তাঁদের বিজয়ী করতে সাংসদের নিজ এলাকায় এত বড় লম্বা সফর। এর আগে কখনোই সাংসদকে একটানা এত দিন থাকতে দেখি নাই আমরা।’
কালকিনি উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা দিপক বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘নির্বাচনী আচরণ বিধিমালা অনুযায়ী সাংসদ এলাকায় থাকতে পারেন না। শুধু ভোট দিতে আসতে পারবেন। তবে তিনি কী উদ্দেশ্যে নিজ এলাকায় এসেছেন, তা আমরা বলতে পারব না। সাংসদের অবস্থান অবশ্যই আইনের পরিপন্থী। এসব বিষয় দেখার জন্য নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেওয়া আছে। তাঁরাই এগুলো দেখবেন।’
কালকিনির ১৩টি ইউপিতে দায়িত্বরত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও কালকিনি উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘সাংসদ এলাকায় এসেছিলেন, সেটা আমি জানি। তবে এখনো এলাকায় অবস্থান করছেন কি না, সেটা আমার জানা নাই।’ প্রার্থীদের অভিযোগের বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রার্থীরা অভিযোগ দিয়েছেন কি না, এটাও আমার জানা নাই।’
আবদুস সোবহান গোলাপের মুঠোফোনে পাঁচবার কল করলেও তিনি ধরেননি। সাংসদের স্থানীয় প্রতিনিধি ও কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবুল কালাম আজাদ মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাংসদ এলাকায় আছেন। কারণ, তিনি উন্নয়নমূলক কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। এ ছাড়াও তিনি সরকারি কিছু সভা-সেমিনারে যোগ দিয়েছেন। তবে তিনি কোনো নির্বাচনী প্রচারণা চালান নাই। প্রচারণামূলক কোনো কাজেও তিনি নেই।’