সাংবাদিক রোজিনার মুক্তির দাবিতে বগুড়ায় সিপিবির প্রতিবাদ সমাবেশ
সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে হেনস্তা ও হয়রানিমূলক মামলা দিয়ে কারাগারে আটকে রাখা গণতন্ত্রহীনতা এবং মানুষের বাক্স্বাধীনতা হরণের জ্বলন্ত উদাহরণ। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতিবাজদের মুখোশ খুলতে গিয়ে রোজিনা ইসলাম সরকারের রোষানলে পড়েছেন। করোনা মহামারি সাধারণ মানুষের জীবন বিপর্যস্ত করে তুললেও স্বাস্থ্য খাতে কেনাকাটার নামে রাষ্ট্রের শত শত কোটি টাকা লুটপাট চলছে। রোজিনা ইসলাম দুর্নীতিবাজদের মুখোশ খুলে দেওয়ায় তাঁদের রোষানলে পড়েছেন। এই অপকর্মে জড়িতদের শাস্তি দিতে হবে।
আজ শনিবার বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) বগুড়া জেলা কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত মানববন্ধন ও সমাবেশ থেকে এসব কথা বলেন বক্তারা। রোজিনা ইসলামকে অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি এবং হেনস্তাকারীদের শাস্তির দাবিতে বেলা সাড়ে ১১টা দিকে শহরের সাতমাথায় এই মানববন্ধন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সিপিবি বগুড়া জেলা কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা জিন্নাতুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন ও সমাবেশে বক্তব্য দেন দলের বগুড়া জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ফরিদ, প্রবীণ নেতা মাহফুজুল হক, উদীচী বগুড়া জেলা শাখার সহসভাপতি লুৎফর রহমান, সিপিবি বগুড়া জেলা কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক দুলাল কুন্ডু, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন বগুড়া জেলা কমিটির সহসভাপতি অখিল পাল, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন বগুড়া জেলা সংসদের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন বগুড়া জেলা সংসদের সাংগঠনিক সম্পাদক সাব্বির হোসেন প্রমুখ।
সমাবেশে বীর মুক্তিযোদ্ধা জিন্নাতুল ইসলাম বলেন, প্রথম আলোর অনুসন্ধানী সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম পেশাগত দায়িত্ব পালনে তথ্য সংগ্রহে সচিবালয়ে গিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতিবাজদের হেনস্তার শিকার হয়েছেন। তাঁকে সচিবালয়ে একটি কক্ষে ছয় ঘণ্টা এবং থানায় আরও পাঁচ ঘণ্টা আটক রেখে নানাভাবে শারীরিক ও মানসিকভাবে হয়রানি ও নির্যাতন করা হয়েছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে রোজিনার কলম থামাতে অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। জামিনযোগ্য মামলা হলেও তাঁকে জামিন না দিয়ে কাশিমপুর কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে।
জিন্নাতুল ইসলাম বলেন, সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম একের পর এক দুর্নীতির নানা রিপোর্ট করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতিবাজ আমলা ও কর্মকর্তাদের মুখোশ খুলে দিয়েছেন। এটিই তাঁর অপরাধ। সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার করে নিতে হবে। সাংবাদিক হেনস্তাকারীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি দিতে হবে। অবৈধ সম্পদের অর্জনকারী আমলাদের শাস্তি দিতে হবে। বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে নির্যাতনকারীদের শাস্তি দিতে হবে।
সিপিবির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ফরিদ বলেন, দুর্নীতির প্রশয়দাতা স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও স্বাস্থ্যসুরক্ষা সচিবের পদত্যাগ করতে হবে। রেজিনাকে হেনস্তা ও হত্যাচেষ্টাকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধকারী অফিশিয়াল সিকিউরিটি অ্যাক্ট, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ সব কালাকানুন বাতিল করতে হবে।
রোজিনা ইসলামকে হেনস্তা ও আটকের প্রতিবাদে এবং নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলাতেও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন স্থানীয় সাংবাদিকেরা। দুপচাঁচিয়া প্রেসক্লাবের আয়োজনে শনিবার বেলা ১১টায় উপজেলা সদরের সিও অফিস বাসস্ট্যান্ড চত্বরে প্রেসক্লাবের সামনে এই মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী এই মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন প্রেসক্লাবের সভাপতি গোলাম ফারুক। বক্তব্য দেন প্রেসক্লাবের সহসভাপতি ও দুপচাঁচিয়া পৌরসভার সাবেক মেয়র বেলাল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক, সাংবাদিক ফিরোজ হোসেন, মতিউর রহমান দেওয়ান, কে এম বেলাল, অসীম কুমার দাস প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে হেনস্তা ও হয়রানি স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য রীতিমতো হুমকি। রোজিনাকে অপদস্থকারী স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতিবাজ আমলাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে।