২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

সহিংসতা, নৈরাজ্যের মধ্য দিয়ে শেষ হলো চট্টগ্রামের ভোট

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের একটি ভোটকেন্দ্রে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করা হয়েছে
ছবি: প্রথম আলো

খুন, দফায় দফায় সংঘর্ষ, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, ভোট গ্রহণ স্থগিত, এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়ার মধ্য দিয়ে শেষ হলো চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোট গ্রহণ। গোপনকক্ষে অবস্থান নিয়ে নির্দিষ্ট প্রতীকে ভোট দিতে বাধ্য করা হয়েছে ভোটারদের। নির্বাচন নিয়ে এই নৈরাজ্যকর অবস্থার কারণে সকালের পর থেকে কেন্দ্রে কেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি কমতে শুরু করে।

আজ বুধবার সকাল আটটা থেকে ভোট গ্রহণ শুরু হয়ে বিকেল চারটা পর্যন্ত চলে। কেন্দ্র নিয়ন্ত্রণের জেরে কাউন্সিলর প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যে একের পর এক সংঘর্ষের খবর আসতে থাকে। বিএনপি অভিযোগ করে, আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা ভোটকেন্দ্র থেকে ধানের শীষের এজেন্টদের বের করে দিয়েছে। আর নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে বিএনপি পরিকল্পিতভাবে হামলা করছে বলে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেছে আওয়ামী লীগ।

চট্টগ্রাম নগরের ১৩ নম্বর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের ইউসেফ আমবাগান স্কুল কেন্দ্রের বাইরে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী ওয়াসিম উদ্দিন চৌধুরী ও বিদ্রোহী প্রার্থী মাহমুদ উল্লাহর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ ও গোলাগুলি হয়। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আধিপত্য বিস্তারের জেরে এই সংঘর্ষ হয়। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন মো. আলাউদ্দিন।

চট্টগ্রাম নগরের বহদ্দারহাটের এখলাছুর রহমান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোটকেন্দ্র
ছবি: সৌরভ দাশ

চট্টগ্রাম নগরের পাথরঘাটা ওয়ার্ডে দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে সংঘর্ষের জেরে দুটি ভোটকেন্দ্রে ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। ভোট গ্রহণ শুরু হলে ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের পাথরঘাটা বালিকা উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ–সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী পুলক খাস্তগীর ও বিএনপি-সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী মো. ইসমাইলের সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। একপর্যায়ে লাঠিসোঁটা নিয়ে কয়েক শ উত্তেজিত নারী-পুরুষ ভোটকেন্দ্রে হামলা চালান। তাঁরা ইভিএম মেশিন, কেন্দ্রের দরজা-জানালা ও নিরাপত্তারক্ষীদের গাড়ি ভাঙচুর করেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ১০টি ফাঁকা গুলি ছোড়ে। এই ঘটনায় বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থী মো. ইসমাইলকে আটক করে পুলিশ।

নির্বাচনে ভোটারদের দীর্ঘ সারি
ছবি: প্রথম আলো

এদিকে ১৪ নম্বর লালখান বাজার ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থীর সমর্থক ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে থেমে থেমে সংঘর্ষ চলে। এখানে প্রায় ২০ জন আহত হয়েছেন। সকাল ১০টার দিকে লালখান বাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দিদারুল আলম মাসুমকে পুলিশ থানায় নিয়ে গেছে।

এ ছাড়া নগরের বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে ভোট গ্রহণের সময় বেশ কিছু অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে। চট্টগ্রামের বাকলিয়া টিচার্স ট্রেনিং কলেজ কেন্দ্র, ওয়াপদা কলোনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রসহ বিভিন্ন কেন্দ্রে ইভিএমে ভোট দেওয়ার গোপনকক্ষে প্রত্যেক ভোটারের সঙ্গে একজনকে থাকতে দেখা গেছে। একজন ভোটার জানিয়েছেন, তাঁর ভোট আগেই দেওয়া হয়ে গেছে। এ ছাড়া বিএনপির এক নারী এজেন্ট অভিযোগ করেন, তাঁকে হকিস্টিক দিয়ে মারধরের পর কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে।

আজ বুধবার সকালে আওয়ামী লীগের মেয়র পদপ্রার্থী মো. রেজাউল করিম চৌধুরী নগরের বহদ্দারহাটে এখলাছুর রহমান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এবং বিএনপি প্রার্থী শাহাদাত হোসেন নগরের বাকলিয়ায় টিচার্স ট্রেনিং কলেজে ভোট দেন। আওয়ামী লীগ প্রার্থী জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী হলেও কেন্দ্র থেকে এজেন্টদের বের করে দেওয়ার অভিযোগ করেন শাহাদাত হোসেন।

এদিকে নগরের বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনার জন্য বিএনপিকে দায়ী করেছে আওয়ামী লীগ। মেয়র প্রার্থীর প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট ইব্রাহিম হোসেন দাবি করেন, নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে বিএনপি পরিকল্পতিভাবে এসব হামলা করছে। মানুষ নিজের ইচ্ছায় ভোট দিতে পারছেন বলে দাবি করেন তিনি।