সহিংসতা দেখা সেই ৪ ইউপিতে জিতেছেন নৌকার প্রার্থীরা

চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার খাগরিয়া ইউপি নির্বাচন চলাকালে দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি অস্ত্র হাতে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। গতকাল সোমবার খাগরিয়া গনিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের পাশের কৃষিজমিতে
ছবি: প্রথম আলো

ভোটের সময় গতকাল সোমবার চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় সহিংসতার ঘটনা ঘটা চার ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে জয় পেয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। সাতকানিয়ার ইউপি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও থানা-পুলিশের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।

গতকাল ভোটের দিন উপজেলার বাজালিয়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান তাপস কান্তি দত্ত এবং বিদ্রোহী প্রার্থী মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ চৌধুরীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে গোলাগুলি ও পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনা ঘটে। ওই ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের বোর্ড অফিস কেন্দ্রে প্রতিপক্ষের গুলিতে আবদুস শুক্কুর (৪০) নামের এক বহিরাগত ব্যক্তি নিহত হন। এই ইউনিয়নে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী তাপস কান্তি দত্ত।

আরও পড়ুন

নলুয়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী লেয়াকত আলী ও বিদ্রোহী প্রার্থী মিজানুর রহমান চৌধুরীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও অস্ত্র নিয়ে হামলার ঘটনা ঘটে। ওই ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বোর্ড অফিস কেন্দ্রের পাশে দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার সময় আওয়ামী লীগের প্রার্থীর লোকজনের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে মো. তাসিব (১৩) নামের এক স্কুলছাত্র নিহত হয়। এই ইউনিয়নে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী লেয়াকত আলী।

আরও পড়ুন

সোনাকানিয়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জসিম উদ্দীন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। গতকাল ভোটের দিন আওয়ামী লীগের প্রার্থীর লোকজন ভোট গ্রহণের শুরু থেকে দুপুর পর্যন্ত কেন্দ্র দখল, প্রভাব বিস্তারসহ বিদ্রোহী প্রার্থী ও কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলা করেন। তাঁরা বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রের বাইরে আতঙ্ক সৃষ্টি করার জন্য গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটান।

চরতী ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী রুহুল্লাহ চৌধুরী ও বিদ্রোহী প্রার্থী মঈনুদ্দিন চৌধুরীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে ভোটের শুরু থেকে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, কেন্দ্র দখল ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। ওই ইউনিয়নে নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী রুহুল্লাহ চৌধুরী।

আরও পড়ুন

এদিকে আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে গোলাগুলি ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে খাগরিয়া ও কাঞ্চনা ইউনিয়নে। এই দুই ইউনিয়নের তিনটি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। তাই এই দুই ইউপি নির্বাচনের ফল ঘোষণা স্থগিত আছে।

সাতকানিয়া থানা-পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) সুজন কুমার দে বলেন, শুরু থেকে সাতকানিয়ায় ইউপি নির্বাচনের পরিবেশ উত্তপ্ত ছিল। গত সোমবার নির্বাচনের দিন ৫-৬টি ইউনিয়নে গোলাগুলি ও সহিংসতার ঘটনা ঘটে।

আরও পড়ুন

উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল উপজেলার ১৬ ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। চারটি ইউনিয়নে আগেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। ১২টি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সঙ্গে ১৭ জন বিদ্রোহী ও ৯ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ৩৮ জন ও সাধারণ সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন ১৪২ জন।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নির্বাচনে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের দিন ২২ জানুয়ারি থেকে সাতকানিয়ায় নির্বাচনী পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। নির্বাচনের দিন সোমবার সকাল থেকে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী, বিদ্রোহী প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থক এবং বহিরাগতরা কেন্দ্র দখল ও প্রভাব বিস্তারের জন্য গোলাগুলি ও মারামারিতে জড়িয়ে পড়ে। উপজেলার ১৬ ইউনিয়নের মধ্যে খাগরিয়া, বাজালিয়া, কাঞ্চনা, চরতী, নলুয়া ও সোনাকানিয়া ইউনিয়নে সহিংসতার ঘটনা বেশি ঘটে।