সরাইলে নদের পাশে নিচু জমিতে গৃহ নির্মাণের উদ্যোগ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার নোয়াগাঁও গ্রামের দক্ষিণে হাওর এলাকায় লাহুর নদের পাশে ৩০ শতাংশ এলাকার নিচু খাসজমি ভরাট করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় এখানে গৃহনির্মাণ করা হবে। ১ ডিসেম্বর দুপুরে তোলা
প্রথম আলো

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার লাহুর নদের পাশে ১০ ফুট গভীর নিচু জমি ভরাট করে আশ্রয়ণ প্রকল্প-২-এর গৃহ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। প্রশাসন বলছে, সেখানে প্রতিরক্ষাদেয়াল নির্মাণ করা হবে। তবে স্থানীয় লোকজনের আশঙ্কা, সে দেয়াল কাজে আসবে না, বরং বর্ষা এলেই এ ঘর নদের স্রোতে বিলীন হয়ে যাবে।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বিশেষ বরাদ্দে নির্মিতব্য এসব গৃহ পাবেন ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষেরা। উপজেলায় এমন ১০২টি পরিবারকে ওই প্রকল্পের আওতায় নেওয়া হয়েছে। এখন চলছে স্থান নির্ধারণ ও গৃহ নির্মাণের প্রক্রিয়া। আগামী জানুয়ারি মাসের মধ্যে এ প্রকল্পের কাজ শেষ করার নির্দেশনা রয়েছে।
প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তাঁদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, এই প্রকল্পের জন্য এমন কোনো জায়গা নির্ধারণ করা যাবে না, যেখানে নতুন করে মাটি ফেলতে হবে।
গত মঙ্গলবার সরেজমিন দেখা গেছে, নোয়াগাঁও ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামের দক্ষিণে হাওর এলাকায় লাহুর নদের পাশে ৩০ শতাংশের নিচু একটি খাসজমি খননযন্ত্র দিয়ে মাটি ভরাট করা হচ্ছে। প্রায় ১০ ফুট গভীর এ ভূমি ভরাটের জন্য লাহুর নদের তলদেশ থেকে মাটি আনা হচ্ছে। ছয় লাখ টাকার চুক্তিতে মাটি ভরাটের কাজটি করছেন নোয়াগাঁও গ্রামের মাঞ্জু মিয়া নামের এক ব্যক্তি।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, লাহুর নদের পাশে ১০টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা সম্ভব হবে। প্রতিটি পরিবারের জন্য ২ শতাংশ জমির মধ্যে ৩৯৪ বর্গফুট আয়তনের দুই কক্ষের একটি সেমি পাকা গৃহের পাশাপাশি থাকবে একটি টয়লেট ও একটি রান্নাঘর। প্রতিটি গৃহের নির্মাণ ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা। অর্থাৎ এখানে ১০টি গৃহ নির্মাণে ব্যয় হবে ১৭ লাখ ১০ হাজার টাকা।
উপজেলা প্রকৌশলী নিলুফা ইয়াছমীন জানান, নদের ভাঙন থেকে ওই ঘরগুলো রক্ষা করতে সেখানে প্রতিরক্ষাদেয়াল নির্মাণ করতে হবে। এর জন্য ব্যয় হবে ২৮ লাখ ৫ হাজার টাকা।
স্থানীয় কয়েকজন অভিযোগ করে বলেন, নদের পাশে নতুন মাটিতে আশ্রয়ণ প্রকল্পের গৃহ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া মোটেও ঠিক হয়নি। একদিকে গৃহ নির্মাণ ব্যয়ের দ্বিগুণ ব্যয় করতে হবে মাটি ভরাট ও প্রতিরক্ষার জন্য। অন্যদিকে নদের পাশে এ এলাকায় অবস্থিত গৃহে হতদরিদ্র পরিবারগুলোর জন্য বসবাস করা কঠিন হবে। কারণ, সেখানে নেই বিদ্যুৎ ও পানীয় জলের কোনো ব্যবস্থা, নেই নিরাপত্তাব্যবস্থাও। আর বন্যার সময় নদে প্রচুর পানি ও স্রোত হয়। সেখানে প্রতিরক্ষাদেয়াল টিকবে বলে তাঁদের মনে হয় না।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) সাইফুল ইসলাম রয়েছেন গৃহ নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সদস্যসচিবের দায়িত্বে। তিনি বলেন, ‘স্থান নির্ধারণের বিষয়টি আমাদের নয়, আমরা শুধু গৃহ নির্মাণকাজের সঙ্গে যুক্ত।’

এ প্রকল্পের স্থান নির্বাচন ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান হলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)। ইউএনওর দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফারজানা প্রিয়াংকা বলেন, ওই ইউনিয়নে আর কোনো খাসজমি না থাকায় এ এলাকা বেছে নিতে হয়েছে। মাটি ভরাট শেষে সেখানে প্রতিরক্ষাদেয়াল নির্মাণ করে গৃহ নির্মাণ করা হবে।
এ বিষয়ে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন ঠাকুর বলেন, কমিটি কেন ওই স্থান নির্ধারণ করেছে, তারাই ভালো বলতে পারবে। তারা উপজেলা পরিষদের তহবিল থেকে প্রতিরক্ষার জন্য অর্থ বরাদ্দ চেয়েছে, তিনি পাঁচ লাখ টাকা দিতে সম্মত হয়েছেন। কিন্তু এখানে প্রতিরক্ষাদেয়ালের জন্য ৩০ লাখ টাকার প্রয়োজন। তা না হলে তিনি শতভাগ নিশ্চিত, পানির স্রোতে ঘরগুলো অল্প দিনের মধ্যে বিলীন হয়ে যাবে।