সরকারি চালে ‘অনিয়মকারী’কে সমাজসেবা সম্মাননা নিয়ে যা বললেন কমিটির চেয়ারম্যান
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় করোনাকালে সরকারি চাল বিতরণে অনিয়ম করা আওয়ামী লীগের নেতা শাহ আলমকে সমাজসেবা সম্মাননা দেওয়ার বিষয়ে ব্যাখ্যা হাজির করেছে সম্মাননা কমিটি। বিষয়টির ব্যাখ্যা দিতে আজ বুধবার দুপুর ১২টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করে ওই কমিটি। সেখানে কমিটির চেয়ারম্যান জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল–মামুন সরকার বলেন, শাহ আলমকে সম্মাননা দেওয়ার ক্ষেত্রে কমিটির সবার ঐকমত্য ছিল। সমাজসেবায় বিশেষ অবদানের জন্য তাঁকে সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে।
আল–মামুন সরকার বলেন, ‘পুরস্কার প্রদানের আগে জেলা প্রশাসকের মৌখিক সম্মতি ছিল। এখন জেলা প্রশাসক শোকজ করেছেন। অথচ সম্মাননা প্রদানের দিন সকালেও জেলা প্রশাসক শাহ আলমকে নিয়ে হিজড়া ও প্রতিবন্ধীদের মধ্যে কম্বল বিতরণ করেন। সকালে শাহ আলম ভালো ছিলেন। আর বিকেলেই কি খারাপ হয়ে গেলেন?’
পুরস্কার প্রদানের আগে জেলা প্রশাসকের মৌখিক সম্মতি ছিল। এখন জেলা প্রশাসক শোকজ করেছেন। অথচ সম্মাননা প্রদানের দিন সকালেও জেলা প্রশাসক শাহ আলমকে নিয়ে হিজড়া ও প্রতিবন্ধীদের মধ্যে কম্বল বিতরণ করেন। সকালে শাহ আলম ভালো ছিলেন। আর বিকেলেই কি খারাপ হয়ে গেলেন?
শাহ আলম পৌরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউতলী এলাকার বাসিন্দা। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক। তিনি একই সঙ্গে এফবিসিসিআইয়ের সদস্য, ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক। তাঁর বিরুদ্ধে চাল বিতরণে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে আল–মামুন সরকার বলেন, করোনার সময়ে সরকারি চাল নিয়ে অনিয়মের বিষয়ে শাহ আলমের বিরুদ্ধে প্রকাশিত সংবাদ সঠিক নয়। তিনি ১৯৯৬ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত পৌরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের ওএমএস ও টিসিবির ডিলারের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তাঁর বিরুদ্ধে খাদ্য ও পণ্যসামগ্রী অবৈধ পথে বিক্রয়, আত্মসাৎ কিংবা অনিয়ম বা দুর্নীতির কোনো অভিযোগ নেই। করোনার সময়ে ১০ নম্বর ওয়ার্ডের জন্য প্রণীত ওএমএস চালের তালিকায় তাঁর ও ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কিছু পারিবারিক সদস্য তালিকাভুক্ত ছিলেন। অভিযোগ এতটুকুই।
আল-মামুন সরকার বলেন, খাদ্যশস্য বিতরণ নীতিমালায় ডিলার বা ওয়ার্ড কাউন্সিলরের পরিবারের কোনো সদস্য পাওয়ার উপযুক্ত হলে তালিকাভুক্ত করা যাবে না, এ রকম নির্দেশনা ছিল না। অভিযোগ ওঠার সঙ্গে সঙ্গে তালিকা সংশোধন করা হয়। চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। আর তাঁর প্রস্তাবে শাহ আলমের ডিলারশিপ বাতিল করা হয়। পরে শাহ আলম উচ্চ আদালতে রিট আবেদন করেন, যা এখনো বিচারাধীন।
আল–মামুন সরকার আরও বলেন, ‘সংবাদ দেখে জেলা প্রশাসক সমাজসেবার উপপরিচালককে শোকজ করেছেন। কমিটির সবার সম্মতিক্রমে সম্মাননার জন্য শাহ আলমের নাম প্রস্তাব করা হয়। বিষয়টি জেলা প্রশাসক মহোদয়কেও অবহিত করা হয়। এ ব্যাপারে তাঁর মৌখিক সম্মতি ছিল। এরপরই ২ জানুয়ারি জাতীয় সমাজসেবা দিবসে শাহ আলমকে সম্মাননা প্রদান করা হয়। এর বেশি কিছু ব্যাখ্যা করে নতুন কোনো বিতর্ক সৃষ্টি করতে চাই না।’
শাহ আলমকে সম্মাননা প্রদানের বিষয়টি আমি জানতাম না। যাঁরা দায়িত্বে ছিলেন, তাঁরা যথাযথ ও সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেননি। তাই আমি চিঠি লিখেছি। এখন আর অহেতুক কথা বাড়িয়ে লাভ নেই।
আল-মামুন সরকার উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘একজন ব্যক্তি যদি কাগজের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে ও সমাজে ভুল বার্তা যায়, সেখান থেকে কীভাবে উদ্ধার পেতে পারেন—এ বিষয়ে তিনি আপনাদের সহযোগিতা চেয়েছেন।’
এদিকে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গত রোববার সন্ধ্যায় কোন প্রক্রিয়ায় এবং কীভাবে শাহ আলমকে সম্মাননার জন্য মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, সমাজসেবাকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে লিখিত ব্যাখ্যা দিতে বলেন জেলা প্রশাসক। জবাতে সন্তুষ্ট হতে না পেরে জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খান গতকাল মঙ্গলবার সমাজসেবা মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে চিঠি পাঠান। চিঠিতে কোনো দাপ্তরিক প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে একজন বিতর্কিত ব্যক্তিকে সম্মাননা প্রদান করায় দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেন।
জেলা প্রশাসন ও খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, করোনার সময় বিশেষ ওএমএস কার্যক্রমের আওতায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভায় চাল দিতে ছয় হাজার দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষের তালিকা করা হয়। তালিকায় শাহ আলমের স্ত্রী মমতাজ আলম, মেয়ে আফরোজা বেগমসহ তাঁর পরিবারের ১৩ জন সদস্যের নাম পাওয়া যায়। গত বছরের ১৩ মে জেলা ওএমএস কমিটির সভায় শাহ আলমের ওএমএস চালের ডিলারশিপ বাতিল করা হয়।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘শাহ আলমকে সম্মাননা প্রদানের বিষয়টি আমি জানতাম না। কাউকে সম্মাননা দিতে হলে একটি কমিটি ও দাপ্তরিক প্রক্রিয়া থাকতে হবে। মুখের কথায় তো আর হবে না। যাঁরা দায়িত্বে ছিলেন, তাঁরা যথাযথ ও সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেননি। তাই আমি চিঠি লিখেছি। এখন আর অহেতুক কথা বাড়িয়ে লাভ নেই।’