সময়সীমা শেষ হতেই পটুয়াখালীর বাজারে প্রচুর ইলিশ, দামও কম
প্রজনন মৌসুমে ইলিশ শিকারের ওপর নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা গতকাল বুধবার রাত ১২টায় শেষ হয়েছে। এদিকে নিষেধাজ্ঞা শেষ হতেই আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে পটুয়াখালীর বাজারগুলোতে প্রচুর ইলিশ উঠেছে। অধিকাংশই বড় আকারের মা ইলিশ। এ ছাড়া ছোট আকারের প্রচুর ইলিশ বাজারে চলে আসায় দামও অনেকটা কমে গেছে। ক্রেতারা বেশ ইলিশ কিনে নিচ্ছেন।
ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমকাল ১৪ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বর—এই ২২ দিন সরকারের নির্দেশে সারা দেশে ইলিশ মাছ আহরণ, পরিবহন, মজুত, বাজারজাতকরণ, ক্রয়, বিক্রয় ও বিনিময় নিষিদ্ধ ছিল।
গতকাল মধ্যরাতে ইলিশ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার পরপরই আজ সকালে পটুয়াখালী শহরের নিউমার্কেটে গিয়ে দেখা যায়, প্রচুরসংখ্যক ইলিশ চলে এসেছে। বেশির ভাগ ইলিশ ককসিটের কার্টনে বরফজাত করা অবস্থায় এসেছে। ব্যবসায়ীরা আড়তদারদের কাছ থেকে দরদাম করে কিনে এনে কার্টন খুলে বরফজাত করা ইলিশ বের করে সাজিয়ে রাখছেন। প্রচুর ইলিশ বাজারে চলে আসায় বিক্রি হচ্ছে দেদার এবং দামও তুলনামূলক কম। তবে এখনো বড় ইলিশের পেটে পরিপক্ব ডিম রয়েছে বলে জানিয়েছেন মাছ ব্যবসায়ীরা।
বাজারের মাছ ব্যবসায়ী মনির হোসেন বলেন, হঠাৎ করে প্রচুর ইলিশ চলে আসায় দাম তুলনামূলকভাবে কমে গেছে। ছোট ইলিশের কেজি বিক্রি হয়েছে ২৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকায়। এই ইলিশ আগে বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ৩৫০ টাকা থেকে ৪৫০ টাকায়। ৫০০ গ্রাম আকারের ইলিশ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকায়, ৬০০ গ্রাম থেকে এক কেজি আকারের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকা থেকে এক হাজার টাকায়। তবে প্রতিটি বড় ইলিশ মাছের পেটে ডিম রয়েছে বলে জানান বিক্রেতারা।
এদিকে এই অল্প সময়ে এত ইলিশ কীভাবে চলে এল জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাজারে ইলিশ নিয়ে আসা এক জেলে বলেন, আগে নদীতে জাল ফেললে দু-একটা ইলিশ ধরা পড়ত। কিন্তু এখন নির্দিষ্ট এলাকার নদীতে জাল ফেলতে পারলে ডিমওয়ালা ইলিশের সঙ্গে ছোট ইলিশ প্রচুর ধরা পড়ছে। তাই গোপনে অনেকেই নদীতে জাল ফেলে ইলিশ ধরে বরফজাত করে রেখেছেন। এখন নিষেধাজ্ঞা শেষ, তাই বাজারে নিয়ে এসেছেন।
বাজারের মাছের এক আড়তদার বলেন, গ্রামগঞ্জে বিদ্যুৎ আছে। সেখানে ফ্রিজও আছে। জেলেরা নিষিদ্ধ সময়ে গোপনে ইলিশ ধরেন। কিন্তু প্রকাশ্যে বিক্রি করতে পারেন না। এই সুযোগে গ্রামের কিছু ব্যবসায়ী জেলেদের কাছ থেকে খুব কম দামে ইলিশ কিনে ফ্রিজে রেখে দেন। নিষেধাজ্ঞা শেষে সেসব ইলিশ বাজারে পাঠিয়েছেন বিক্রির জন্য। দীর্ঘদিন ধরে ইলিশ বিক্রি করতে না পারায় আজকে একসঙ্গে প্রচুর ইলিশ বাজারে চলে এসেছে। তাই দামও কমে গেছে। তবে দু-এক দিনের মধ্যে ইলিশের দাম আবারও বেড়ে যাবে বলে মনে করছেন তিনি।
ভরা মৌসুমে মা ইলিশ সাগর থেকে অবাধে নদীতে চলে আসতে থাকে। আর এই সুযোগে জেলেরা নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে সুযোগ বুঝে ইলিশ শিকার করেন। জেলা মৎস্য বিভাগ থেকে অভিযান চালিয়ে জাল, মাছ জব্দ করা হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালত জেল–জরিমানা করেছেন।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোল্লা এমদাদুল্যাহ বলেন, নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ইলিশ শিকার করায় ৬৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ৯৫টি মামলা হয়েছে। জরিমানা আদায় করা হয়েছে ৩ লাখ ১৮ হাজার টাকা। অভিযানে ১ দশমিক ৭৮ মেট্রিক টন ইলিশ জব্দ করা হয়েছে। জাল জব্দ করা হয়েছে ৫ লাখ ৪৩৪ হাজার মিটার, যার মূল্য ১ কোটি ১২ লাখ ৮৪ হাজার টাকা।