শিক্ষক-কর্মচারীদের আন্দোলনের মধ্যেও নির্ধারিত রিজেন্ট বোর্ডের সভা আর হলো না। ঝুলে রইল ১০২ জনের নিয়োগ প্রক্রিয়া ও পদোন্নতি। রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে এক সপ্তাহ ধরে তালা ঝুলছে। শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন ঝুলে আছে সেশন জটে। সব ঝুলিয়ে রেখে আর নানা অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ নিয়ে আজ রোববার পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এম রোস্তম আলী মেয়াদ শেষ করলেন।
উপাচার্য অবশ্য মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই অনেকটা চুপিসারে ক্যাম্পাস ছেড়েছেন গত ২৬ ফেব্রুয়ারি। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে আছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তারা। কর্মকর্তাদের চলমান আন্দোলনের পাশাপাশি আজ রোববার সকালে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ঝাড়ুমিছিল করে উপাচার্যকে ধিক্কার জানিয়েছেন।
এর আগে ২৬ ফেব্রুয়ারি পদোন্নতিসহ ১৭ দফা দাবি তুলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা পরিষদ (অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন) রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়েছে। সে তালা খোলার জন্য কোনো আলোচনা হয়নি। এক সপ্তাহ ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ আছে।
এ প্রসঙ্গে কর্মকর্তা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সোহাগ হোসেন বলেন, ‘উপাচার্য পদে পদে অনিয়ম করেছেন। তিনি স্বেচ্ছাচারিতা করে চলে গেছেন। আমরা এর বিচার চাই। ১৭ দফা দাবি বাস্তবায়ন ও উপাচার্যের বিচার না হওয়া পর্যন্ত রেজিস্ট্রার কার্যালয় তালাবন্ধ থাকবে।’
প্রত্যক্ষদর্শীদের কয়েকজন বলেন, বিভিন্ন সমস্যা ঝুলিয়ে রেখে মেয়াদ শেষের আগেই উপাচার্য ক্যাম্পাস ছাড়ায় কয়েক দিন ধরে শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ ছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় রোববার সকালে ক্যাম্পাসে এসে বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে থাকেন। দুপুর ১২টার দিকে তাঁরা শ্রেণিকক্ষ ছেড়ে ক্যাম্পাসের স্বাধীনতা চত্বরে জমায়েত হয়ে ঝাড়ুমিছিল বের করে।
বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, উপাচার্য রোস্তম আলী গত চার বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক, প্রশাসনিক ও আর্থিক নানা অনিয়ম–দুর্নীতি করেছেন। নিয়োগে স্বজনপ্রীতি করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় অদক্ষ ও মেধাশূন্য কর্মকর্তা–কর্মচারীতে ভরে গেছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ইউজিসির তদন্তে তাঁর অনিয়ম প্রমাণিত হয়েছে। তাঁর অদক্ষতার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ে সেনশনজট মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। একাডেমিক মান হয়েছে নিম্নগামী।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এম আবদুল আলীম বলেন, উপাচার্য তাঁর মেয়াদকালে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুধু নিজের স্বার্থ হাসিল করেছেন। শেষ বেলায় বিশ্ববিদ্যালয়কে মহাসংকটে ফেলে চুপিসারে ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে গেছেন। এটা কোনো অবস্থাতেই মেনে নেওয়ার মতো নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে উপাচার্যের প্রতিটি অনিয়ম–দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির তদন্ত সাপেক্ষে বিচার হওয়া প্রয়োজন।
এ প্রসঙ্গে জানতে উপাচার্য রোস্তম আলীর মুঠোফোনে একাধিকবার কল করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। কয়েক দিন ধরে তিনি জেলায় কর্মরত গণমাধ্যমকর্মীদের ফোন ধরছেন না বলে জানা গেছে।
রেজিস্ট্রার (চলতি দায়িত্ব) বিজন কুমার ব্রহ্ম প্রথম আলোকে বলেন, খুব খারাপ একটা অবস্থার মধ্য দিয়ে উপাচার্য মহোদয়ের মেয়াদকাল শেষ হলো। প্রতিটি বিষয় ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় অবগত আছে। কিন্তু রোববার পর্যন্ত কোনো দপ্তর থেকেই কোনো নির্দেশনা আসেনি। অন্যদিকে কার্যালয় বন্ধ থাকায় দাপ্তরিক কোনো কাজকর্মও হচ্ছে না। অসহায়য়ের মতো বসে দিন কাটাতে হচ্ছে।
মেয়াদ শেষের আগে ১০ ফেব্রুয়ারি উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয় রিজেন্ট বোর্ডের ৬০তম সভা আহ্বান করেন। সভায় ৬১টি আলোচ্যসূচির মধ্যে ৪২টি ছিল নিয়োগসংক্রান্ত। এতে ১০২ জনের নিয়োগ প্রক্রিয়া চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠে। নিয়োগসংক্রান্ত জটিলতায় তিনি সভা স্থগিত করেন।
পরে রোস্তম আলী নিজেই ২৪ ফেব্রুয়ারি রিজেন্ট বোর্ডের সভা আহ্বান করে ক্যাম্পাস ছাড়েন। এর ১৩ দিন পর ২৩ ফেব্রুয়ারি রাত আটটার দিকে তিনি ক্যাম্পাসে আসেন। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে ক্যাম্পাসে জড়ো হয়ে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ মিছিল করেন। এ অবস্থায় দুই দিন নীরবে ক্যাম্পাসে অবস্থান করে উপাচার্য চুপিসারে ক্যাম্পাস ছাড়েন। আর ফেরেননি।