২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

সচিব বিদ্যালয়ে আসবেন, তাই...

শারীরিক কসরত প্রশিক্ষণের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে শিক্ষার্থীরা। গতকাল সকাল আটটায় মির্জাপুর সদরের বাইমহাটী গ্রামের একটি খেতে।  ছবি: প্রথম আলো
শারীরিক কসরত প্রশিক্ষণের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে শিক্ষার্থীরা। গতকাল সকাল আটটায় মির্জাপুর সদরের বাইমহাটী গ্রামের একটি খেতে। ছবি: প্রথম আলো

টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলা সদরের বাইমহাটী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শনে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব মো. আকরাম–আল–হোসেন আসবেন। এ জন্য ১৩ দিন ধরে পাঠদান বন্ধ রেখে শিক্ষার্থীদের শারীরিক কসরতসহ বিভিন্ন কার্যক্রম শেখানো হচ্ছে বলে অভিযোগ। এতে বিদ্যালয়টির শিক্ষক ও অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আগামী বৃহস্পতিবার শিক্ষাসচিবের বিদ্যালয়টি পরিদর্শনে আসার কথা রয়েছে। এ জন্য ১৩ দিন আগে থেকে বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ করে বিদ্যালয় সাজানোর কাজ শুরু করা হয়েছে। একই সঙ্গে শারীরিক কসরত প্রদর্শনের জন্য প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বাইমহাটী গ্রামের পাল পাড়া এলাকায় একটি মাঠে শিক্ষার্থীদের নানা ধরনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।

গতকাল সোমবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল পৌনে ৮টা থেকে ওই মাঠে শিক্ষার্থীদের নিয়ে অভিভাবকেরা জড়ো হচ্ছেন। তাদের দেখভালের জন্য বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরাও রয়েছেন। কথা হলে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা জানায়, প্রায় ১৩ দিন আগে থেকে এখানে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত থাকতে হচ্ছে তাদের। দুপুরে কিছু সময় খাওয়ার জন্য বিরতি দেওয়া হয়। অনেক অভিভাবক তাঁদের সন্তানের জন্য খাবার নিয়েও আসেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিক্ষক বলেন, ‘সচিব স্যার আসব আমরা খুব জামেলাই আছি। ড্রিল করিয়া লাভ কি এইড্যা ম্যাডাম (প্রধান শিক্ষক) জানে, আমরা জানি না।’

চারজন শিক্ষার্থী জানায়, প্রধান শিক্ষকের ভয়ে তারা খাবারের বিরতির সময়ও বাসায় যায় না। তাদের অভিভাবকেরা খাবার নিয়ে আসেন।

তিন শিক্ষার্থীর অভিভাবক জানান, সচিব আসবেন বলে ক্লাস বন্ধ করে যে কাজগুলো করানো হচ্ছে তা কখনো ঠিক নয়। তবে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পছন্দসই না হলে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় পাস করা মুশকিল হয়ে পড়ে। তাই ভয়ে তাঁরা সন্তানদের নিয়ে আসেন।

শিক্ষক লাইলী বেগম জানান, সচিবের আগমনের দিন তাঁরা শিক্ষার্থীদের দিয়ে নানা ধরনের শারীরিক কসরত প্রদর্শন করাবেন। এ জন্য ড্রিলে ১২০ জন, সাইকেল র‌্যালিতে ৪০, প্যারেডে ১২ আর নাচে ৮ থেকে ১০ জন করে বিভিন্ন বিষয়ে প্রায় ৩০০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে।

বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা পর্ষদের সভাপতি লুৎফর রহমান জানান, সচিব আসার খবরটি প্রধান শিক্ষক তাঁদের জানিয়েছেন। এর বাইরে তিনি কিছুই জানেন না।

প্রধান শিক্ষক হোসনে আরা বলেন, ‘ক্লাস হয়। সমাপনী পরীক্ষা হয়েছে। থ্রি-ফোরের ক্লাসও হয়। আমাদের প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য নান্দনিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক। এ জন্য ওরা ড্রিল করছে।’

প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হবে এবং ক্লাস বাদ রেখে ড্রিল করানোয় তাদের ক্ষতি হবে—বিষয়টি তুলে ধরলে প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘আমরা তাদের পড়িয়ে দিছি। আমাদের মতো বাংলাদেশের কেউ পড়ায় না। ওগো কোর্স কত আগে শেষ কইর‌্যা ডাবল কোর্স করাইছি। ওরা সকাল থেকে ১২টা পর্যন্ত থাকে। আবার বিকেলে থাকে।’

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন বলেন, প্রধান শিক্ষককে বলা হয়েছিল আগে ক্লাস করাতে। অন্য যা করবেন তা পরে। কিন্তু উনি যা করছেন বিষয়টি নিয়ে অনুষ্ঠান শেষে (সচিবের আগমন) বসে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আব্দুল আজিজ জানান, শিক্ষার্থীদের পারদর্শিতা প্রদর্শনের জন্য ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে অন্য কাজ করতে পারে। তবে এটা একদিন হতে পারে, প্রতিদিন নয়।