সংসদ সদস্যের ব্যক্তিগত সহকারী কলেজের সভাপতি, শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের ক্ষোভ
রাজশাহীতে স্থানীয় এক সংসদ সদস্যের ব্যক্তিগত সহকারীকে (পিএস) একটি কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি করায় ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের মধ্যে। এ নিয়ে ক্ষোভ জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন তাঁরা। পবা উপজেলার কলেজটির নাম দারুশা কলেজ। সম্প্রতি কলেজটির পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি হিসেবে মনোনীত হয়েছেন রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিনের পিএস ইকবাল হোসেন।
রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়ন মিলনায়তনে আজ মঙ্গলবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করে সিজার হোসেন নামের এক শিক্ষার্থী। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘দীর্ঘদিন ধরেই আমাদের কলেজের পরিচালনা পর্ষদ ছিল না। করোনার কারণে নতুন কমিটিও হয়নি। আমাদের প্রত্যাশা ছিল, কলেজটিতে এমন কেউ সভাপতি হবেন, যিনি অবহেলিত এই কলেজটির সার্বিক উন্নয়নে কাজ করতে পারবেন। কিন্তু কলেজের সভাপতি করা হয়েছে ইকবাল হোসেনকে, যিনি নিজের জীবনের পড়াশোনাই শেষ করতে পারেননি। তাঁর বয়স এখন মাত্র ২৬-২৭ বছর হবে। উচ্চমাধ্যমিক পাস করার পর ডিগ্রিতে ভর্তি হলেও তিনি পড়াশোনা শেষ করতে পারেননি। তবে তিনি স্থানীয় এমপি আয়েন উদ্দিনের অলিখিত নামধারী পিএস হওয়ার কারণে প্রভাব খাটিয়ে অসৎ উদ্দেশ্যে তাঁকে সভাপতি করা হয়েছে।’
কমিটি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রেহেনা বেগমেরও সমালোচনা করা হয়। বলা হয়, কোনো রকম ভোটার তালিকা প্রকাশ না করে বা কোনো অভিভাবক কমিটির নির্বাচন না করে অসৎ উদ্দেশ্যে অতি গোপনে গত ২৫ এপ্রিল রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড থেকে কমিটি অনুমোদন করে নেন অধ্যক্ষ। এটি প্রকাশ হওয়ার পর কলেজের শিক্ষার্থী ও তাঁদের অভিভাবকেরা অত্যন্ত মর্মাহত। তাঁরা কেউই অযোগ্য ব্যক্তিকে সভাপতি মানতে পারছেন না।
নিয়োগ বাণিজ্য করতে ইকবালকে সভাপতি করা হয়েছে বলে দাবি শিক্ষক–শিক্ষার্থীদের। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, একাদশ শ্রেণির এই কলেজটিকে ডিগ্রি পাঠদানের প্রস্তুতি চলছে। ডিগ্রি বিভাগ খোলা হলে অনেক শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগের প্রয়োজন পড়বে। সে সময় নিয়োগ বাণিজ্য করতেই এমপি আয়েন উদ্দিনের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিকে কলেজের সভাপতি করা হয়েছে। তিনি সভাপতি হিসেবে থাকলে এবং উৎকোচ নিয়ে নিয়োগ বাণিজ্য করলে কলেজে শিক্ষার কোনো মান থাকবে না। এতে শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, বেকার যুবক ইকবাল হোসেনের পাঁচ বছর আগেও নিজের কোনো সম্পদ ছিল না। পিএস হওয়ার পরই বদলে যায় তাঁর ভাগ্যের চাকা। তিনি ৫০-৬০ লাখ টাকা খরচ করে আলিশান বাড়ি নির্মাণ করেছেন। মাঠে জমি কিনেছেন। ক্ষমতার দাপটে সরকারের নিষেধাজ্ঞাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে প্রায় ৫০ বিঘা জমিতে পুকুর খনন করেছেন। আরও অনেক অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। এমন একজন ব্যক্তিকে কলেজের সভাপতি করা হলে কলেজটি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কিন্তু ভয়ে কলেজের কোনো শিক্ষক প্রতিবাদ করতে পারছেন না।
শিক্ষার্থী সিজার হোসেন বলে, ‘আমরা কিছু শিক্ষার্থী এবং সচেতন অভিভাবক এ ব্যাপারে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছি। আমরা ইকবালকে সভাপতির পদ থেকে অপসারণের দাবি জানিয়েছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।’
সংবাদ সম্মেলনে কলেজের বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ বাতিল করে সঠিক নিয়মে পুনরায় নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠন করে কলেজের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার দাবি জানানো হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে অভিভাবক মো. কামরুল, আবুল হোসেন, সোহাগ আলী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রেহেনা বেগম বলেন, তাঁরা চেয়েছিলেন নতুন প্রজন্মের কেউ কলেজের সভাপতি হোক। যিনি কলেজের উন্নয়নে কাজ করতে পারবেন। সে হিসেবে ইকবাল হোসেন সভাপতি হয়েছেন। যাঁরা এটা নিয়ে কথা বলছেন, তাঁরা আগে কখনো কলেজে এসে খোঁজখবর নেননি। তাঁদের যদি এ নিয়ে আপত্তি থাকে, তাঁরা আইনের আশ্রয় নিতে পারেন।
কলেজের নবনিযুক্ত সভাপতি ইকবাল হোসেন তাঁর বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগকে ষড়যন্ত্র হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ইকবাল বলেন, তিনি নিজে ওই কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন। সেই হিসেবে কলেজের প্রতি তাঁর আলাদা একটা টান আছে। কলেজের উন্নয়নে কাজ করতে পারবেন বলেই সবাই তাঁকে সেখানে সভাপতি করেছেন। যাঁরা তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে কথা বলছেন, তাঁরা ষড়যন্ত্র করছেন। তাঁরা কেউই চান না কলেজটি ভালো করে চলুক, কলেজের উন্নয়ন হোক।
এ বিষয়ে জানতে সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিনকে ফোন করা হলে তিনি ধরেননি।