শ্রমিকদের দুই পক্ষের সংঘর্ষে সাংবাদিক-পুলিশসহ আহত অন্তত ১৬

যমুনা সার কারখানার সামনে শ্রমিকদের নিজেদের মধ্যে এবং পরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে। বৃহস্পতিবার দুপুরে জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে
প্রথম আলো

জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে যমুনা সার কারখানায় সিবিএ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দুই দল শ্রমিকের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় শ্রমিক, সাংবাদিক, পুলিশসহ অন্তত ১৬ জন আহত হয়েছেন। এক শ্রমিক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। পুলিশ আট শ্রমিককে আটক করেছে। কারখানা এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে এক শ্রমিককে মারধরের সূত্র ধরে সংঘর্ষের সূত্রপাত। যমুনা সার কারখানা কোম্পানি লিমিটেড সূত্রে জানা গেছে, যমুনা সার কারখানা কোম্পানি লিমিটেডের শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের (সিবিএ) নির্বাচন সামনে। আজ তফসিল ঘোষণার কথা রয়েছে। একে ঘিরে দুই দিন ধরে কারখানার ভেতরে ও বাইরে শ্রমিকদের প্রচারণা চলে আসছিল। আজ সকাল ১০টায় কারখানার ভেতরে ট্রাকে সার লোডিংয়ের কাজ করছিলেন শ্রমিক শামীম মিয়া। এ সময় তাঁর প্রতিপক্ষ শ্রমিক সরদার ও স্থানীয় পোগলদিঘা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য মোফাজ্জাল হোসেন তাঁর দলবল নিয়ে শামীমকে মারধর করেন। পরে এ খবর ছড়িয়ে পড়লে মোফাজ্জল হোসেন ও শামীম মিয়ার সমর্থকদের মধ্যে কারখানা এলাকায় কয়েক দফা পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। এ সময় ৮-১০টি গুলি ছোড়ার শব্দ শোনা যায়।

সংঘর্ষে ইটপাটকেল ও লাঠিসোঁটার আঘাতে গুরুতর আহত হয়েছেন শ্রমিক সাইফুল ইসলাম, আনিছুর রহমান মণ্ডল, মোশারফ হোসেন, শামীম মিয়া, হারুন অর রশিদ, হায়দর আলী, জাহাঙ্গীর, রনি, রফিকুল ইসলাম ও খোকন মিয়া। গুলিবিদ্ধ হয়েছেন শ্রমিক বাবু মিয়া। তাঁদের সবাইকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। তবে গুলিবিদ্ধ বাবু মিয়ার অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসক তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে নিতে বলেন।

কারখানার ভেতরে শ্রমিক সরদার ও তাঁর লোকজন আমাকে অন্যায়ভাবে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেছেন। আমি এর বিচার চাই।
শামীম মিয়া, কারখানার আহত শ্রমিক

সংঘর্ষের খবর পেয়ে সরিষাবাড়ী থানা-পুলিশ ও তারাকান্দি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। জামালপুর জেলা ট্রাক, ট্যাংকলরি ও কাভার্ড ভ্যান চালক-শ্রমিক ইউনিয়নের তারাকান্দি নিয়ন্ত্রণ কার্যালয়ের সামনে তাঁরা লাঠিপেটা করলে পুলিশ ও ট্রাকের চালক-শ্রমিকদের মধ্যে আবার পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। এ সময় ট্রাকচালক নাইম পুলিশের মারধরে গুরুতর আহত হন। সেই সঙ্গে তারাকান্দি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক (তদন্ত) আবদুল লতিফ ও উপপরিদর্শক বশিরুল আলম আহত হয়েছেন।

ঘটনাস্থলে মুঠোফোনে ছবি তোলার সময় স্থানীয় দৈনিক আমার সংবাদ পত্রিকার সরিষাবাড়ী প্রতিনিধি রাইসুল ইসলামকে এবং দৈনিক পল্লীকণ্ঠ প্রতিদিন পত্রিকার সরিষাবাড়ী প্রতিনিধি সোহেল রানাকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করা হয়। তাঁদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁদের দুটি মুঠোফোন ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে।

জামালপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাকির হোসেন দুপুরে যমুনা সার কারখানা এলাকা পরিদর্শন করেন। কারখানা এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

কারখানার আহত লোডিং শ্রমিক শামীম মিয়া বলেন, ‘কারখানার ভেতরে শ্রমিক সরদার ও তাঁর লোকজন আমাকে অন্যায়ভাবে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেছেন। আমি এর বিচার চাই।’ শ্রমিক সরদার ইউপি সদস্য মোফাজ্জাল হোসেনের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে কল না ধরায় তাঁর বক্তব্য নেওয়া যায়নি।

সরিষাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর রকিবুল হক বলেন, আট শ্রমিককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। অভিযোগ পেলে মামলা নেওয়া হবে।