শুদ্ধ জাতীয় সংগীত চর্চার ফেরিওয়ালা রবিউল
প্রায় ১০ বছর ধরে স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের শুদ্ধ সুর ও উচ্চারণে জাতীয় সংগীত শেখানোর কাজ করে আসছেন বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার দমদমা গ্রামের রবিউল ইসলাম। রবিউল ইসলাম পেশায় কলেজশিক্ষক। শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি সাংবাদিকতা ও সমাজসেবামূলক কাজে জড়িত। শুদ্ধ সুরে জাতীয় সংগীত শেখানো তাঁর নেশা। সময় পেলেই তিনি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সমাবেশ শুরুর আগে গিয়ে হাজির হন। এরপর প্রতিষ্ঠানের প্রধানের অনুমতি নিয়ে শিক্ষার্থীদের শুদ্ধ সুর ও উচ্চারণে ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’ গেয়ে শিক্ষার্থীদের শেখান।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাওয়ার সময় সঙ্গে করে নিয়ে যান শুদ্ধ উচ্চারণ ও সুরে জাতীয় সংগীত গাওয়ার ওপর নিজের লেখা ফিচার। সেই ফিচার বিলি করেন শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মধ্যে। মাঝেমধ্যে শিক্ষার্থীদের নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন। কখনো শিক্ষার্থীদের নিজস্ব অর্থায়নে পুরস্কার দেন।
রবিউল ইসলাম বলেন, তাঁর প্রবল ইচ্ছা দেশের অন্তত ১০ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে শুদ্ধ সুর ও উচ্চারণে জাতীয় সংগীত গাওয়ার তালিম দেওয়ার। কিন্তু নানা ব্যস্ততা ও দূরদূরান্তে যাওয়ার মতো অর্থ এবং সময় ও সুযোগের অভাবে তা পেরে উঠছেন না।
এরপরও ৫৫ বছর বয়সী রবিউল কখনো হেঁটে, কখনো ভ্যানে চড়ে বা কখনো বাসে চড়ে গত ১০ বছর ধরে এ কাজ করে চলেছেন। এ পর্যন্ত টাঙ্গাইলের ভারতেশ্বরী হোমস, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, উদয়ন স্কুল, বগুড়ার টিএমএসএস স্কুল অ্যান্ড কলেজ, বগুড়ার দুপচাঁচিয়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং নিজ উপজেলার প্রায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ ১১৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে তিনি দৈনিক সমাবেশ দেখেছেন এবং শুদ্ধ সুর ও উচ্চারণে জাতীয় সংগীত শেখানোর কাজ করেছেন।
বর্তমানে রবিউল বগুড়া থেকে প্রকাশিত দৈনিক ভোরের দর্পণ পত্রিকার আদমদীঘি প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছেন। তিনি সান্তাহার বীর বিক্রম শহীদ লে. আহসানুল হক ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক। তাঁর স্ত্রী সান্তাহার শহরের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তাঁদের দুটি মেয়ে রয়েছে।
সান্তাহার নাগরিক কমিটির সভাপতি সাবেক অধ্যক্ষ মোসলেম উদ্দীন বলেন, ‘রবিউল আমার ছাত্র। তাঁকে নিয়ে আমি গর্ব অনুভব করি। সে বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। শিক্ষকতা, সাংবাদিকতার পাশাপাশি রবিউল যে শুদ্ধ জাতীয় সংগীত প্রচার করছে, তা এককথায় অসাধারণ। তার পথচলা সুন্দর হোক, সাথর্ক হোক—এই কামনা করি।’
আদমদীঘি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম খান বলেন, রবিউল এ উপজেলার গৌরব। জাতীয় সংগীত শুদ্ধভাবে গাওয়ার বিষয়ে তিনি যে কাজটি করছেন, তা অসাধারণ।
রবিউল ইসলাম বলেন, ‘৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে পাওয়া আমাদের জাতীয় সংগীত। যখন কোথাও অশুদ্ধভাবে জাতীয় সংগীত গাইতে দেখি, মনে কষ্ট পাই। তাই শুদ্ধভাবে জাতীয় সংগীত চর্চার কাজ করছি। চাকরি করার পাশাপাশি এই কাজ করতে পেরে আমি ধন্য। আমার স্বপ্ন ১০ হাজার স্কুলে গিয়ে আমি শুদ্ধভাবে জাতীয় সংগীত চর্চার তালিম দেব। কর্তব্য মনে করে আমি এ কাজ করছি।’