শিবচরে হত্যাচেষ্টা মামলার খালাস পাওয়া আসামিকে কুপিয়ে হত্যা

নিহত দাদন চোকদারের স্বজনদের আহাজারি। মঙ্গলবার বিকেলে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার নলগোড়া এলাকায়
প্রথম আলো

মাদারীপুরের শিবচরে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি এক মৎস্যজীবীকে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজ মঙ্গলবার বিকেলে শিবচর পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের নলগোড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর থেকে ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

নিহত ওই ব্যক্তির নাম দাদন চোকদার (৪৫)। তিনি একই এলাকার মৃত আদম চোকদারের ছেলে। তিনি গত বছরের একটি হত্যাচেষ্টা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি ছিলেন।

পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন জানান, গত বছর দাদন চোকদারের সঙ্গে একই এলাকার সেলিম শেখের জমিসংক্রান্ত বিষয় নিয়ে মারামারি হয়। এ সময় উভয় পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হন। পরে এ ঘটনায় মাদারীপুর আদালতে একটি মামলা হয়। সম্প্রতি দাদন চোকদারের পক্ষে মামলায় রায় দেন আদালত। কিন্তু সেলিম শেখ আদালতের রায় মেনে না নিয়ে দাদন চোকদারকে হত্যার হুমকি দেন। মঙ্গলবার দুপুরে দাদন চোকদার শিবচর বাজার থেকে একটি ভ্যানে নিজ বাড়িতে ফিরছিলেন। পথে সেলিম শেখের বাড়ির সামনে এসে পৌঁছালে অভিযুক্ত সেলিম শেখ, মেহেদী মাতুব্বর ও নজরুল শেখসহ বেশ কয়েকজন ব্যক্তি দাদনের গতি রোধ করেন। দাদনকে ভ্যান থেকে নামিয়ে প্রকাশ্যে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকেন। একপর্যায়ে দাদন চিৎকার শুরু করলে তাঁকে গুরুতর জখম করে পালিয়ে যান হামলাকারীরা।

দাদন চোকদারের তিন মেয়ে। বাবাকে হারিয়ে এই তিন মেয়ে অসহায় হয়ে পড়েছে। তাঁর স্ত্রীও স্বামীর মৃত্যুর খবর পর থেকে মুমূর্ষু অবস্থায় পড়ে আছেন।

পরে স্থানীয় লোকজন দাদনকে উদ্ধার করে প্রথমে শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিতে বলেন চিকিৎসক। পরে ফরিদপুরে নেওয়ার পথে মারা যান দাদন চোকদার।

স্থানীয় খলিল শেখ বলেন, দাদন চোকদারের তিন মেয়ে। বাবাকে হারিয়ে এই তিন মেয়ে অসহায় হয়ে পড়েছে। তাঁর স্ত্রীও স্বামীর মৃত্যুর খবর পর থেকে মুমূর্ষু অবস্থায় পড়ে আছেন। পরিবারটি শেষ হয়ে গেল।

নিহত দাদন চোকদারের মেয়ে সুস্মিতা আক্তার (১৪) আহাজারি করে বলে, ‘সামান্য জমির জন্য ওরা আমার বাবাকে মাইরা ফালাইছে। আমরা বাবাহারা হয়ে গেলাম। আমার বাবারে যারা কোপাইয়া মারছে ওদের কঠোর বিচার চাই। আল্লাহ তুমি ওদের শাস্তি দাও।’

এদিকে ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা পলাতক। তাঁদের বাড়িতে গিয়েও কাউকে পাওয়া যায়নি। জানতে চাইলে শিবচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মিরাজ হোসেন বলেন, জমিজমাসহ নানা বিষয় নিয়ে তাঁদের মধ্যে বিরোধ ছিল। ওই বিরোধের জের ধরেই দাদন চোকদার বাজার থেকে বাড়িতে যাওয়ার পথে সেলিম শেখসহ কয়েকজন ধারালো অস্ত্র দিয়ে দাদন চোকদারকে কুপিয়ে হত্যা করেন। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন। তবে ঘটনার পর থেকেই অভিযুক্ত আসামিরা পলাতক। আসামিদের ধরতে পুলিশের অভিযান চলছে।