শিক্ষার্থীদের গাছ চেনাতে পুকুরপাড়ে বাগান
পুকুরের পাড়ে বনজ, ফলদ, ঔষধি ও শোভাবর্ধনকারী ফুলের গাছ সারি সারি। সবুজে ঘেরা, ছায়াঢাকা, পাখিডাকা, মনোমুগ্ধকর পরিবেশ। এমন চমৎকার পরিবেশ নিজের হাতে গড়ে তুলেছেন কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার বীরবাগগোয়ালী গ্রামের স্কুলশিক্ষক সেলিম মিয়া তালুকদার।
২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে বাড়িসংলগ্ন পুকুরপাড়ে গাছ লাগানোর কাজে হাত দেন। প্রায় ৩৫০টি গাছ লাগিয়ে সবুজের এক মায়াবী পরিবেশ গড়ে তোলেন তিনি।
পুকুরের পাড় সাধারণত এমনিতেই খালি পড়ে থাকে। রৌদ্রের তাপের বিরূপ প্রভাব থেকে রক্ষা পেতে এবং শিক্ষার্থীদের গাছ চেনাতে বৃক্ষরোপণের এই উদ্যোগ স্কুলশিক্ষক সেলিম মিয়া তালুকদারের। ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে গাছ লাগানোর কাজে নেমে পড়েন তিনি। নিজেই বাগানে গিয়ে গাছের পরিচর্যা করেন। নিজের হাতেই গাছের ডালপালা ছেঁটে দেন। গোড়ায় পানি দেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও বাগানে গিয়ে গাছের পরিচর্যার কাজে ব্যস্ত থাকেন। এই কাজকে তিনি নিজের কাজ মনে করেন। পুকুরপাড়ে ও মাঠে ফলদ, ঔষধি ও শোভাবর্ধনকারী দেশীয় বিলুপ্ত কিছু গাছসহ প্রায় ৩৫০টি গাছ রয়েছে। নিজস্ব অর্থ দিয়ে পুকুরপাড়ে ১২০ শতক জায়গার মধ্যে লক্ষাধিক টাকায় এসব গাছ রোপণ করেছেন তিনি।
বসতবাড়ির পুকুরপাড়ে গিয়ে নানা জাতের গাছ দেখে যে কেউ মুগ্ধ হবেন। রয়েছে আম, জাম, পেঁপে, আঙুর, জাম্বুরা, কমলা, আনারস, লিচু, পেয়ারা, সবেদা, ডালিম, মালয়েশিয়ান ডরিয়ান, জামরুল, করমচা, কতবেল, আমড়া, কটলেবু, তিন ফল, তেঁতুল ও লেবু এবং চায়না বট, কুঞ্জলতা, বাগানবিলাস, গোলাপ, কামিনী, হাসনাহেনা, টগর, বেলি, সন্ধ্যামালতী, পাতাবাহার ও রক্তজবার গাছ। এই গাছগুলো হয়ে উঠেছে পাখিদের বিশ্রামের স্থান। সেখানে পাখির কিচিরমিচির শোনা যায়।
বীরবাগগোয়ালী গ্রামের বাসিন্দা চিকিৎসক রফিকুল ইসলাম বলেন, যেখানে মানুষ বসতঘর নির্মাণ করতে গিয়ে দিন দিন গাছ কেটে উজাড় করছেন, সেখানে সেলিম মিয়া তালুকদার বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে দূষণমুক্ত পরিবেশ তৈরি করেছেন। তাঁর বৃক্ষরোপণ কার্যক্রম সত্যিই প্রশংসনীয়।
সেলিম মিয়া তালুকদার বলেন, ‘পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা, দূষণমুক্ত পরিবেশ তৈরি, নিজের দায়িত্ববোধ ও গ্রামের স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের গাছ চেনাতে, বৃক্ষরোপণের অভিযান সম্পর্কে এলাকাবাসীর মধ্যে ইতিবাচক মানসিকতা তৈরি করতে বসতবাড়িসংলগ্ন পুকুরপাড়ে গাছ লাগানোর উদ্যোগ গ্রহণ করি। বৃক্ষরোপণের এ কাজটি সবাই মিলে করতে পারলে বাংলাদেশ একদিন সবুজের সমারোহে ভরে উঠবে।’
সেলিম মিয়া তালুকদার কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার গৌরীপুর সুবল আফতাব উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক।
পরিবেশ সংগঠক প্রভাষক মতিন সৈকত বলেন, ‘স্কুলশিক্ষকের এই চমৎকার দৃষ্টান্ত যদি অন্য শিক্ষকদের মধ্যে স্থাপন করা যায়, তাহলে দৃষ্টিনন্দন পরিবেশের পাশাপাশি আমাদের বেঁচে থাকার অন্যতম উৎস, নির্মল বাতাস আর অক্সিজেন পাওয়া সম্ভব।’
দাউদকান্দি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সারোয়ার বলেন, ‘স্কুলশিক্ষকের কাজটি খুবই ভালো। তাঁর দেখাদেখি অন্যরাও বাগান করতে পারেন। আমাদের সহায়তা ও পরামর্শ অব্যাহত থাকবে।’