আন্দোলনে স্প্লিন্টারবিদ্ধ ছাত্রের বিবৃতি
শিক্ষামন্ত্রীর আশ্বাস পূরণে দীর্ঘসূত্রতায় শাহজালালের শিক্ষার্থীরা হতাশ
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে পুলিশের ছোড়া শটগানের গুলিতে আহত হয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সজল কুণ্ডু। সে সময় শরীরে ৮৩টি স্প্লিন্টার বিদ্ধ হয়েছিল তাঁর। দীর্ঘ চিকিৎসা ও অস্ত্রোপচারের পরও তাঁর শরীরে ৭৫টি স্প্লিন্টার রয়ে গেছে। চিকিৎসা শেষে সিলেটে ফিরে শনিবার সন্ধ্যায় সার্বিক বিষয়ে নিজের অবস্থান জানিয়ে গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়েছেন সজল কুণ্ডু।
বিবৃতিতে সজল কুণ্ডু বলেন, ‘হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর ১৭ ফেব্রুয়ারি সিলেটে ফিরে গত কিছুদিনের ঘটনাপ্রবাহ অনুসরণ করে সহপাঠীদের সঙ্গে কথা বলে কিছু ব্যাপার মর্মাহত করেছে। ১২ ফেব্রুয়ারি আমাদের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আলোচনার পর সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছিলেন শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে অচিরেই যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তিনি একই সঙ্গে বলেছিলেন, শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত দুটি মামলা দ্রুত প্রত্যাহার করা হবে এবং সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের যেসব ব্যাংক ও অনলাইন লেনদেনের অ্যাকাউন্টগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল, তা অচিরেই খুলে দেওয়া হবে। কিন্তু তাঁর আশ্বাসের এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও মামলাগুলো প্রত্যাহার বা অ্যাকাউন্টগুলো খুলে দেওয়ার ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ দৃশ্যমান হয়নি। শিক্ষামন্ত্রীর স্পষ্ট আশ্বাসের পরও এসব বিষয়ে এমন দীর্ঘসূত্রতা শিক্ষার্থীদের প্রচণ্ড হতাশ করেছে।’
বাবা মৃত, অসুস্থ মাকে নিয়ে অসচ্ছল পরিবার চালাতে পড়াশোনা শেষ করে চাকরির চেষ্টা করার কথা ছিল। স্বপ্ন ছিল উপার্জনে পরিবারে সুদিন আসবে। একটি দিনের ব্যবধানে স্বপ্নগুলো এলোমেলো হয়ে গেল, সারা শরীরে অসংখ্য আঘাত ও স্প্লিন্টার নিয়ে অসহ্য শারীরিক যন্ত্রণায় সামনের বিপদসংকুল দিনগুলো কীভাবে কাটবে, তার আশঙ্কায় এখন দিনাতিপাত করতে হচ্ছে। তার দায় কে নেবে?সজল কুণ্ডু, শিক্ষার্থী,শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়
বিবৃতিতে সজল কুণ্ডু বলেন, ‘শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় উত্থাপিত শিক্ষার্থীদের দাবিগুলোর মধ্যে আমাকে শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি প্রদান, ভবিষ্যতের সমস্ত চিকিৎসা খরচ সরকারের পক্ষ থেকে বহন ও এককালীন আর্থিক ক্ষতিপূরণ প্রদানের দাবি ছিল। চাকরি প্রদানের ব্যাপারে শিক্ষামন্ত্রী মৌখিক আশ্বাস দিলেও এখন পর্যন্ত ভবিষ্যতের চিকিৎসা খরচ বহন ও এককালীন আর্থিক ক্ষতিপূরণের ব্যাপারে কোনো স্পষ্ট আশ্বাস পাইনি। বাবা মৃত, অসুস্থ মাকে নিয়ে অসচ্ছল পরিবার চালাতে পড়াশোনা শেষ করে চাকরির চেষ্টা করার কথা ছিল। স্বপ্ন ছিল উপার্জনে পরিবারে সুদিন আসবে। একটি দিনের ব্যবধানে স্বপ্নগুলো এলোমেলো হয়ে গেল, সারা শরীরে অসংখ্য আঘাত ও স্প্লিন্টার নিয়ে অসহ্য শারীরিক যন্ত্রণায় সামনের বিপদসংকুল দিনগুলো কীভাবে কাটবে, তার আশঙ্কায় এখন দিনাতিপাত করতে হচ্ছে। তার দায় কে নেবে?’
সজল কুণ্ডু বলেন, ‘১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের অনুষ্ঠানে উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমদ নির্জলা মিথ্যাচার করেছেন। তা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষার্থীদের ক্ষুব্ধ করেছে। তিনি বলেছেন, সত্যের জয় হয়েছে, মিথ্যার পরাজয় হয়েছে। আমি একজন সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে ফরিদ উদ্দিন আহমেদের মিথ্যাচার ও মনগড়া বক্তব্যের প্রতিবাদ করছি।’
স্প্লিন্টারবিদ্ধ শরীর নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের তত্ত্বাবধানে টানা ১৫ দিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাসেবার বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে সংশ্লিষ্টদের কৃতজ্ঞতা জানান সজল। তবে তিনি জানিয়েছেন, এখনো তাঁর মাথা, ঘাড়, বুক, পেট- পিঠ, হাত-পাসহ শরীরে বেশ কিছু স্থানে ৭৫টির বেশি স্প্লিন্টার রয়েছে। প্রাণঘাতী সংক্রমণের আশঙ্কা থাকায় চিকিৎসকেরা আরও অস্ত্রোপচারের ঝুঁকি আপাতত নিচ্ছেন না।
গত ১৩ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অসদাচরণসহ বিভিন্ন অভিযোগ তুলে তাঁর পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন কয়েক শ ছাত্রী। ১৬ জানুয়ারি দাবি আদায়ের লক্ষ্যে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করেন শিক্ষার্থীরা। পুলিশ শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা করে এবং তাঁদের লক্ষ্য করে শটগানের গুলি ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে। পরে এ আন্দোলন উপাচার্যের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে রূপ নেয়। দীর্ঘ আন্দোলন, অনশনের পর শিক্ষামন্ত্রী ও উপমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে উপাচার্যের পদত্যাগ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য সমাধান দেবেন, এমন আশায় আন্দোলন প্রত্যাহার করেন শিক্ষার্থীরা।