শিক্ষকতার পাশাপাশি চা বিক্রি করেন তিনি
পাবনার বেড়া উপজেলার মাশুন্দিয়া কলেজ বাজারে চায়ের দোকান রয়েছে তৌহিদুল ইসলামের। চা বানিয়ে নিজেই পরিবেশন করেন তিনি। চায়ের দোকানি হলেও সবাই তৌহিদুলকে সম্মান করেন। কারণ, বিএসসি পাসের পর তিনি স্থানীয় একটি নৈশ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন। তিনি প্রমাণ করেছেন, কোনো কাজই ছোট নয়।
তৌহিদুল ইসলাম দরিদ্র পরিবারের সন্তান। তাঁর বাড়ি মাশুন্দিয়া গ্রামে। তিনি পাবনার এডওয়ার্ড কলেজ থেকে এমএসসি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ইতিমধ্যে তিনি এনটিআরসিএর শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় (স্কুল) উত্তীর্ণ হয়েছেন। স্থানীয় একটি নৈশ বিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন শিক্ষক তিনি।
তিন ভাইবোনের মধ্যে তৌহিদুল বড়। অন্য দুই ভাই-বোনও এডওয়ার্ড কলেজে স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে পড়াশোনা করছেন। বাজারের ছোট চায়ের দোকানটি তাঁদের আয়ের একমাত্র ভরসা। চায়ের দোকান ও শিক্ষকতা থেকে যে আয় হয়, তা দিয়েই চলে সবার পড়াশোনা ও সংসারের খরচ।
তৌহিদুলের বাবা মজিদ মোল্লা একসময় পরিবহনশ্রমিকের কাজ করতেন। প্রায় ১২ বছর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় মারাত্মক আহত হন তিনি। সংসার চালাতে তিনি বাজারে ছোট একটি চায়ের দোকান দেন। তৌহিদুল তখন পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র। ওই সময় থেকে তৌহিদুল বাবাকে চায়ের দোকান চালাতে সাহায্য করে আসছিলেন। এক দিকে বাবার সঙ্গে চায়ের দোকান চালানো আর অন্য দিকে পড়াশোনা। এভাবেই তৌহিদুল বিজ্ঞান বিভাগে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। এরপর রসায়ন বিষয়ে বিএসসি সম্মান শ্রেণিতে ভর্তি হন পাবনার এডওয়ার্ড কলেজে। সেখানে পড়াশোনা করার ফাঁকে বাবার সঙ্গে চায়ের দোকানটি তিনি চালিয়ে গেছেন।
বিএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর তৌহিদুল চায়ের দোকানে কাজের সময় আরও বাড়িয়ে দেন। পাশাপাশি তিনি স্থানীয় রতনগঞ্জ উচ্চবিদ্যালয়ে বিজ্ঞানের শিক্ষক হিসেবে খণ্ডকালীন চাকরি নেন। বছর দুয়েক সেখানে শিক্ষকতা করার পর তিনি পড়াশোনার সুবিধার্থে একটি নৈশ বিদ্যালয়ে যোগ দিয়েছেন। পাশাপাশি এমএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এ ছাড়া এখন সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা এবং বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত তিনি একাই চায়ের দোকানটি চালান।
তৌহিদুল বলেন, ‘একসময় কেউ কেউ আমার চা বানিয়ে বিক্রি করার বিষয়টি বাঁকা চোখে দেখতেন, কিন্তু এখন অনেকেই বাহবা দেন। বর্তমানে আমি শিক্ষকতা করছি। অবসরে চায়ের দোকানটিও চালাচ্ছি। আমার কাছে দুটি কাজই সম্মানজনক। ভবিষ্যতে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্থায়ী চাকরির সুযোগ পেলে সেটিই হবে আমার একমাত্র পেশা।’
তৌহিদুলের দোকানে নিয়মিত চা পান করতে আসেন মাশুন্দিয়া কেজিবি ভবানীপুর কলেজের প্রভাষক আলাউল হোসেন। তিনি বলেন, তৌহিদুল সব ধরনের সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে ওঠা অসম্ভব পরিশ্রমী এক তরুণ। কোনো কাজই যে ছোট নয়, তা তিনি প্রমাণ করে দিয়েছেন। শিক্ষিত-অশিক্ষিত বেকার তরুণদের জন্য তিনি অবশ্যই অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।