শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক শেষ করেছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। প্রায় সোয়া তিন ঘণ্টাব্যাপী এ বৈঠক আজ শুক্রবার সন্ধ্যা সোয়া ছয়টায় শেষ হয়।
বৈঠক শেষে শিক্ষামন্ত্রী উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন। দীপু মনি এ সময় বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের দাবির মধ্যে উপাচার্যকে অপসারণের একটি দাবিও ছিল। কেন তাঁরা এটি চান, সে বক্তব্য তাঁরা আমাদের কাছে তুলে ধরেছেন। আমরা তাঁদের বক্তব্য আচার্যকে অবহিত করব। যেহেতু আচার্যই একজন উপাচার্যকে নিয়োগ দেন কিংবা অপসারণ করেন। অতএব আচার্যকে আমরা অবহিত করব। বাকি সিদ্ধান্ত আচার্য গ্রহণ করবেন।’
শিক্ষামন্ত্রী গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আমরা বসেছি। পুরো ঘটনা তাঁরা বর্ণনা করেছেন। তাঁদের দাবিদাওয়া নিয়ে আমাদের আলাপ হয়েছে। ভালো আলোচনা হয়েছে। ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার সার্বিক পরিবেশ কীভাবে উন্নত করা যায়, তাঁরা নিজেরা চিন্তা করে এ–সংক্রান্ত কিছু প্রস্তাব দিয়েছেন।’
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের যে প্রস্তাব দেখলাম, তার মধ্যে বেশ কয়েকটি এর মধ্যেই পূরণ করা হয়েছে। বাকি দাবিগুলোকে আমরা অ্যাপ্রিশিয়েট করেছি। আমরা আশা করছি, বাকি যেসব প্রস্তাব আছে, সেগুলো সক্রিয় বিবেচনায় নিয়ে যত দ্রুত সম্ভব এর অধিকাংশই আমরা পূরণ করতে পারব। সে উদ্যোগও আমরা নেব। এর কিছু উদ্যোগ ইতিমধ্যে আমাদের আছে।’
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ভালো একটি আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চাই দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরে আসুক। আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কয়েক দিনের মধ্যে হয়তো পাঠদান শুরু হবে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর হলসহ সবকিছু খোলা আছে। আমরা শাবিপ্রবির প্রশাসনের সঙ্গে আলাপ করব। যত দ্রুত সম্ভব স্বাভাবিক পরিস্থিতি যেন ফিরে আসে, তার জন্য আমরা সবাই মিলে একযোগে কাজ করব।’
এর আগে বেলা ২টা ৫৫ মিনিটে সিলেট সার্কিট হাউসে বৈঠক শুরু হয়। এতে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি ছাড়াও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীর ১১ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল বৈঠকে যোগ দেয়। সোয়া তিন ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক সন্ধ্যা সোয়া ছয়টায় শেষ হয়। এরপর শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষা উপমন্ত্রী শাবিপ্রবির উদ্দেশে রওনা হন। সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিটে তাঁরা ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদলে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মুহাইমিনুল বাশার, ইয়াসির সরকার, নাফিসা আনজুম, সাব্বির আহমেদ, আশিক হোসাইন, সাবরিনা শাহরিন, সুদীপ্ত ভাস্কর, শাহরিয়ার আবেদীন, আমেনা বেগম, মীর রানা ও জাহিদুল ইসলাম।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদলের সদস্যরা শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির কাছে ১৩ দফা দাবি উপস্থাপন করেন। এর মধ্যে প্রথম দাবি হচ্ছে উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগ এবং যত দ্রুত সম্ভব তাঁকে সরিয়ে ক্লাস-পরীক্ষা চালু করা। অপর দাবিগুলোর মধ্যে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা থেকে শুরু করে সার্বিক সহযোগিতায় যেসব ব্যাংক-মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, সেগুলো খুলে দেওয়ার দাবি ছিল অন্যতম।
বৈঠক শেষে শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আবেদীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা শিক্ষামন্ত্রীর কাছে ১৩ দফা দাবি উপস্থাপন করেছি। তিনি আমাদের কথা গভীর মনোযোগ সহকারে শুনেছেন।’
এর আগে শাবিপ্রবির আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করতে আজ সকাল ৮টা ৫০ মিনিটে আকাশপথে সিলেটে পৌঁছান শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। তাঁর সঙ্গে আছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। গণমাধ্যমে পাঠানো শিক্ষামন্ত্রীর সফরসূচির তথ্য অনুযায়ী, শিক্ষামন্ত্রী শাবিপ্রবি ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান সংকট নিরসনে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে ঢাকায় ফিরবেন।
গত ১৩ জানুয়ারি শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অসদাচরণসহ বিভিন্ন অভিযোগ তুলে তাঁর পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন কয়েক শ ছাত্রী। ১৬ জানুয়ারি দাবি আদায়ের লক্ষ্যে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করা অবস্থায় পুলিশ শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা করে এবং তাঁদের লক্ষ্য করে শটগানের গুলি ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে। পরে এই আন্দোলন উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে রূপ নেয়।
প্রথম ছয় দিনে দাবি পূরণ না হওয়ায় ১৯ জানুয়ারি বেলা ৩টা থেকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে আমরণ অনশনে বসেন ২৪ শিক্ষার্থী। ২৬ জানুয়ারি সকালে অনশনস্থলে এসে লেখক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক মুহম্মদ জাফর ইকবাল শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙান। তবে শিক্ষার্থীরা অনশন ভাঙলেও উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রাখেন। এর মধ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মো. আলমগীর কবীরকে অব্যাহতি দিয়ে নতুন প্রক্টর নিয়োগ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এর আগে ৬ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক জহির উদ্দিন আহমদকেও অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল। উপাচার্যের পদত্যাগের পাশাপাশি ওই দুজনের পদত্যাগও শিক্ষার্থীরা চেয়েছিলেন।