শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস তলিয়ে গেছে, ক্লাস–পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা
বন্যার পানিতে ক্যাম্পাস তলিয়ে যাওয়ায় সিলেটে অবস্থিত শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) সব বিভাগের ক্লাস, পরীক্ষা আগামী ২৫ জুন পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আজ শুক্রবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের জরুরি সিন্ডিকেট সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ ইশফাকুল হোসেন।
এক দিনের মধ্যে এভাবে ক্যাম্পাস পানিতে তলিয়ে যাবে, সেটা কল্পনায়ও ছিল না বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র সাব্বির হোসেনের। তিনি বলছিলেন, ‘ক্যাম্পাস এভাবে বন্যাকবলিত হতে কখনো দেখিনি। আমার সিনিয়ররাও (জ্যেষ্ঠ শিক্ষার্থীরা) দেখেননি। ক্যাম্পাসের অনেকটা অংশ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।’
ভারী বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক, শিক্ষা ভবনের সামনের স্থান, লেক ও পুকুর তলিয়ে যাওয়ার ঘটনায় এভাবেই প্রতিক্রিয়া জানান সাব্বির হোসেন।
আজ শুক্রবার সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সোনালী ব্যাংকের পার্শ্ববর্তী এলাকা, শিক্ষাভবন ‘বি’ ও ‘ডি’, আইআইসিটি ভবন, উপাচার্য ভবন ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ভবনের সামনের অংশে হাঁটুপানি উঠছে। শিক্ষক-কর্মকর্তা কোয়ার্টার ও ছাত্রীহলের সড়কেও একই অবস্থা।
একাধিক জ্যেষ্ঠ শিক্ষক ও কর্মকর্তা জানান, ২০০৪ সালের বন্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ে পানি এলেও এখনকার মতো এতটা বেশি ছিল না। কিছুদিন আগেও সিলেটে যখন প্রথম দফায় বন্যা দেখা দেয়, তখনো বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় পানি ঢোকেনি। কিন্তু গত বুধবার থেকে অবিরাম বৃষ্টিতে বৃহস্পতিবার দুপুরের পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়ে। বৃহস্পতিবার রাতেও পানি ক্রমশ বাড়ছিল বলে শিক্ষক-কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল শাখা জানিয়েছে, পানি ক্রমাগত বাড়তে থাকায় সার্বিক নিরাপত্তার কথা ভেবে শিক্ষা ভবন-এ, প্রথম ছাত্রী হল ও শিক্ষক-কর্মকর্তা কোয়ার্টারে বিদ্যুৎ–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। যদি পানি আরও বাড়ে, তাহলে পুরো ক্যাম্পাসের বিদ্যুৎ–সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ ইশফাকুল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ২০০৪ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু এলাকায় সামান্য পানি হয়েছিল। তবে এবারের মতো এতটা তীব্র নয়। এবার পানি বেশি হওয়ায় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়-সংশ্লিষ্ট সবাইকে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা হলের ছাত্রী ও বাংলা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ফাতেমা রিতু জানান, হঠাৎ ক্যাম্পাসে এভাবে পানি বেড়ে সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় শিক্ষার্থীরা ভোগান্তিতে পড়েছেন। দুপুরে ক্লাস থেকে ফেরার সময় হলে আসার পথে দেখেন, রাস্তায় পানি। তখন ভিজেই হলে ফিরেছেন। পরে আবারও ক্লাসে যাওয়ার পথে পানি বৃদ্ধি পেতে দেখেছেন।
বেগম সিরাজুন্নেসা হলের আবাসিক ছাত্রী ও লোকপ্রশাসন বিভাগের স্নাতকোত্তর বিভাগের শিক্ষার্থী সাবিহা সায়মন বলেন, ‘আমাদের পরীক্ষা চলছে। রিসার্স প্রপোজাল নিয়ে স্যার-ম্যামদের সঙ্গে দেখা করতে বিভাগে যেতে হয়। দুপুরে হল থেকে বেরিয়ে দেখি, রাস্তায় অল্প পানি। বিভাগের কাজ শেষ করে হলে ফেরার পথে দেখি, রাস্তায় এক ফুট পরিমাণ পানি। এ ছাড়া পানি বাড়ায় এদিক দিয়ে রিকশা বা অটোরিকশা (ব্যাটারিচালিত যান) আসে না। ফলে বাকি পথটা হেঁটে আসতে হয়। পানি আরও বাড়লে ভোগান্তি বাড়বে।’
কয়েক শিক্ষার্থী জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী এলাকা নাজিরাগাঁও, কুমারগাঁও, টিলারগাঁও ও খাগড়া আবাসিক এলাকা থেকে ক্রমশ বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ধীরে ধীরে পানি বাড়ছে। যেসব এলাকা পানিতে প্লাবিত হয়েছে, সেখানে নানা রকমের ময়লা-আবর্জনা ভাসছে। সেই সঙ্গে জোঁক, কেঁচো ও সাপের উপদ্রবও বেড়েছে। এতে হাঁটতে গিয়ে অনেক শিক্ষার্থী আতঙ্কে ভুগছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য মো. আনোয়ারুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, এত পানি অতীতে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় কখনো ঢোকেনি। জরুরি কাগজপত্র যেন বন্যার পানিতে বিনষ্ট না হয়, সে জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া হলের শিক্ষার্থীরা যেন মশারি ছাড়া না ঘুমায়, সে নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। কারণ, পানি বাড়ায় পোকামাকড়ের উপদ্রব বেড়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়-সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। যদি পানি বাড়ে, তাহলে পরিস্থিতি বুঝে ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এদিকে বন্যা পরিস্থিতির মধ্যেই আজ শুক্রবার বেলা ১১টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ‘চ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বিত ভর্তি কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক রাশেদ তালুকদার বলেন, যেহেতু এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা, সে হিসেবে পরীক্ষা পেছানো সম্ভব নয়। তবে নির্বিঘ্নে পরীক্ষা নিতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এই ইউনিটে মোট ৭৪ পরীক্ষার্থী অংশ নেবে।