গণপূর্ত অধিদপ্তরের পাবনা কার্যালয়! লোকজন নিয়ে ভেতরে ঢুকছেন সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক ফারুক হোসেন। তাঁর পেছনে শটগান হাতে পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এ আর খান। তাঁরও পেছনে জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য শেখ লালু। তাঁর হাতেও একটি শটগান।
দৃশ্যটি ৬ জুন দুপুর ১২টা ১২ মিনিটের। ক্লোজড সার্কিট টেলিভিশন (সিসিটিভি) ক্যামেরার ধারণ করা ওই মুহূর্তের ভিডিও দৃশ্য ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে। এ নিয়ে তুমুল আলোচনা চলছে জেলা শহরে। কিছু ঠিকাদারের অভিযোগ, ঠিকাদারি কাজের সুবিধা পেতে এবং অন্যদের ভয় দেখাতেই আওয়ামী লীগ নেতারা এই ‘মহড়া’ দিয়েছেন।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এ আর খান। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘নিরাপত্তার স্বার্থে বৈধ অস্ত্র নিয়ে আমি ব্যবসায়িক কাজে ইটভাটায় যাচ্ছিলাম। পথে নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলতে গণপূর্ত বিভাগে যাই। তিনি না থাকায় আমরা ফিরে আসি। কাউকে ভয় দেখানোর উদ্দেশ্যে অস্ত্র প্রদর্শন করা হয়নি। তবে কাজটি আমাদের ভুল হয়েছে।’ প্রতিপক্ষ ঠিকাদাররা বিষয়টিকে অন্যদিকে নেওয়ার চেষ্টা করছেন বলে দাবি করেন তিনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে গণপূর্ত অধিদপ্তরের কয়েকজন ঠিকাদার বলেন, বেশ কিছুদিন ধরেই আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা গণপূর্ত অধিদপ্তরে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছেন। নিজেদের দাপট দেখাতেই তাঁরা অস্ত্র হাতে গণপূর্ত কার্যালয়ে মহড়া দিয়েছেন।
সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক ফারুক হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি গণপূর্ত বিভাগের ঠিকাদার নই। দলীয় দুই নেতার সঙ্গে আমি সেখানে গিয়েছিলাম মাত্র। তবে ওভাবে যাওয়া আমাদের উচিত হয়নি।’
পাবনার পুলিশ সুপার মুহিবুল ইসলাম খান বলেন, ‘বিষয়টি জানার পর আমরা তদন্ত করছি। অস্ত্র আইনের শর্ত ভঙ্গ হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে গণপূর্ত অধিদপ্তরের কয়েকজন ঠিকাদার বলেন, বেশ কিছুদিন ধরেই আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা গণপূর্ত অধিদপ্তরে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছেন। নিজেদের দাপট দেখাতেই তাঁরা অস্ত্র হাতে গণপূর্ত কার্যালয়ে মহড়া দিয়েছেন।
গণপূর্ত অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, ঠিকাদারেরা তাঁর কক্ষে ঢুকেছিলেন। তাঁরা নির্বাহী প্রকৌশলী আছেন কি না, জানতে চান। তবে কেউ কোনো খারাপ আচরণ বা গালিগালাজ করেননি।
গণপূর্ত অধিদপ্তর পাবনা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ারুল আজিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘটনার সময় আমি কার্যালয়ে ছিলাম না। আমাকে কেউ ফোন করে ও সশরীর হুমকি-ধমকিও দেয়নি। ফলে আমরা কোনো অভিযোগ দিইনি।’
এ প্রসঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আবদুল আহাদ বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে দলীয়ভাবে ওই নেতাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাঁরা ব্যক্তিগত নিরাপত্তার স্বার্থেই লাইসেন্স করা অস্ত্র হাতে ছিলেন। গণপূর্ত বিভাগের সঙ্গেও আমরা বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছি। কেউ কোনো অভিযোগ তোলেনি। দলবিরোধী একটি ঠিকাদারি চক্র বিষয়টি নিয়ে জল ঘোলা করার চেষ্টা করছে।’
জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ বলেন, ‘ঘটনাটি শুনেছি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিষয়টি তদন্ত করছে। তাদের সুপারিশ অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’