২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

কুমিল্লা সিটি নির্বাচন: সাক্ষাৎকার

লড়াই করছি কালোটাকার বিরুদ্ধে, সেই লড়াইয়ে নৌকার জয় হবে: আরফানুল

কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. মনিরুল হক সাক্কু একে অপরের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন। আরফানুল হকের দাবি, সাবেক মেয়র মো. মনিরুল হক কোটি কোটি টাকার যে দুর্নীতি করেছেন, তার প্রমাণ তাঁর কাছে আছে। মনিরুল পাল্টা চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেন, পারলে আওয়ামী লীগ প্রার্থী দুর্নীতির তথ্য–প্রমাণ জনসম্মুখে হাজির করুক। তবে দুই প্রার্থীই স্বীকার করেছেন, তাঁদের লড়াই হবে সমানে সমান। আজ বুধবার কুমিল্লায় দুই মেয়র প্রার্থীর বাসভবনে নেওয়া সাক্ষাৎকার। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান ও প্রথম আলোর কুমিল্লার নিজস্ব প্রতিবেদক গাজীউল হক

কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত
ছবি: প্রথম আলো

প্রশ্ন :

সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আপনি প্রথম প্রার্থী হয়েছেন। আপনার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মনিরুল হক দুবার জয়ী হয়েছেন। এবার তৃতীয়বার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সেই ক্ষেত্রে লড়াইটা কেমন হবে?

আরফানুল হক: লড়াই হবে। তবে আমি মনিরুল হকের বিরুদ্ধে লড়াই করছি না। লড়াই করছি কালোটাকার বিরুদ্ধে এবং সেই লড়াইয়ে নৌকার জয় হবে।

প্রশ্ন :

কিন্তু গত দুই নির্বাচনে তো আওয়ামী লীগ পরাজিত হয়েছে।

আরফানুল হক: সেই সময়ে কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের কোনো কমিটি ছিল না। ২০১৭ সালের সিটি নির্বাচনের পর মহানগর আওয়ামী লীগের প্রথম কমিটি গঠন করা হয়। এরপর মহানগরের ২৭টি ওয়ার্ডে কমিটি হয়েছে সম্মেলন করে। মহানগর যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি হয়েছে। দল এখন অনেক বেশি সংগঠিত।

প্রশ্ন :

তার মানে আগে বিভক্তির জন্যই আওয়ামী লীগ পরাজিত হয়েছিল?

আরফানুল হক: আমি সেই কথা বলব না। তবে এবার মহানগর আওয়ামী লীগের যে কমিটি হয়েছে, তা গতানুগতিক ধারায় হয়নি। সম্মেলনের মাধ্যমে হয়েছে। আওয়ামী লীগে এখন বিরোধ নেই।

প্রশ্ন :

কুমিল্লা-৬ আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন ও সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য আঞ্জুম সুলতানার মধ্যে সম্পর্কটি কেমন?

আরফানুল হক: এটি আ ক ম বাহাউদ্দিনের আসন। এখানে উনিই সব। সীমা (আঞ্জুম সুলতানা) তিনজন সংরক্ষিত সংসদ সদস্যের একজন। এই মুহূর্তে দলে কোনো কোন্দল নেই।

প্রশ্ন :

মাদকসংশ্লিষ্টতা নিয়ে একটি খবরের পরিপ্রেক্ষিতে আপনি একটি পত্রিকার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। প্রেস কাউন্সিলে গেলেন না কেন?

আরফানুল হক: জীবনে আমি যা চিন্তা করিনি, তা-ই পত্রিকায় ছাপা হয়েছে। আমি পত্রিকায় প্রতিবাদ পাঠিয়েছি। তারা ভুল স্বীকার করেনি। আমি নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত আছি। প্রেস কাউন্সিলে যাওয়ার সময় নেই।

প্রশ্ন :

নির্বাচনের পরিবেশ কেমন? প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের পক্ষ থেকে ভয়ভীতির অভিযোগ করা হয়েছে।

আরফানুল হক: আমি মনে করি নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ আছে। আমি আমার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের বলব, আসুন, ১৫ জুন আমরা একটি সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন করি। কুমিল্লাই সারা দেশকে পথ দেখাবে।

প্রশ্ন :

২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আপনাদের এই উপলব্ধি ছিল না কেন?

আরফানুল হক: আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা কি অনিয়মের অভিযোগ করেছেন? কুমিল্লায় সে ধরনের ঘটনা ঘটেনি।

পথসভায় আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী (নৌকা প্রতীক) আরফানুল হক। আজ বুধবার কুমিল্লা নগরের পুরাতন চৌয়ারা এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

প্রশ্ন :

বিগত দুর্গোৎসবে পূজামণ্ডপে হামলার ঘটনা আপনারা ঠেকাতে পারলেন না কেন?

আরফানুল হক: কেউ যদি রাতের অন্ধকারে অঘটন ঘটায়, সেটা কীভাবে বন্ধ করা যাবে? এর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তদন্ত হচ্ছে। সাবেক মেয়রের এপিএস এই মামলার একজন আসামি। তাঁকে নিয়েই সাবেক মেয়র নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন।

প্রশ্ন :

গত আট মাসেও তদন্ত শেষ হলো না কেন?

আরফানুল হক: এটি এমন একটি ব্যাপার, যেখানে সরকারকে অনেক ভেবেচিন্তে এগোতে হচ্ছে। তাড়াহুড়ো করে কিছু করা উচিত নয়।

প্রশ্ন :

এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের কোনো গাফিলতি ছিল কি?

আরফানুল হক: কোনো গাফিলতি ছিল না। আমাদের সহযোগিতার কারণে পরিস্থিতি দ্রুত সামাল দেওয়া সম্ভব হয়েছে।

প্রশ্ন :

আপনার প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক সিটি মেয়র মনিরুল হকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনেছেন। আপনার কাছে কি প্রমাণ আছে?

আরফানুল হক: অবশ্যই প্রমাণ আছে। আমি বলেছি, নির্বাচিত হলে কুমিল্লা টাউন হল মাঠে জনসভা করে সবকিছু জানাব।

প্রশ্ন :

প্রমাণ থাকলে নির্বাচনের আগেই জনগণকে জানাচ্ছেন না কেন?

আরফানুল হক: আপনি প্রমাণ চান? আমি কালকেই আপনাকে প্রমাণ দেব। আমি নির্বাচনের সময় তাঁকে চ্যালেঞ্জ করেছি। তিনি যদি আমার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেন, তাহলে আপনাদের উপস্থিতিতে সেই প্রমাণ দেব।

প্রশ্ন :

মনিরুল হক বলেছেন, তিনি কোনো দুর্নীতি করেননি। পাল্টা চ্যালেঞ্জ দিয়েছেন।

আরফানুল হক: আমিও তাঁর চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করছি।

প্রশ্ন :

নির্বাচনে আপনার প্রতিশ্রুতি কী?

আরফানুল হক: নির্বাচনে আমি ১১ দফা প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। সিটি করপোরেশনকে দুর্নীতিমুক্ত রাখব। সিটি করপোরেশন দলীয় রাজনীতির ঊর্ধ্বে থাকবে।

প্রশ্ন :

অভিযোগ আছে, সাবেক মেয়র স্থানীয় সংসদ সদস্যের হুকুমে সিটি করপোরেশন চালিয়েছেন। তাঁকে এমপি বাহারের (কুমিল্লা-৬ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন) ছায়া মেয়র বলা হতো? নির্বাচিত হলে আপনিও কি সেভাবে চালাবেন?

আরফানুল হক: ছায়া মেয়র কথাটির আমি নিন্দা করি। আমি আমার প্রজ্ঞা ও বিচারবুদ্ধি অনুযায়ী সিটি করপোরেশন চালাব। আমি সবকিছু বিকিয়ে দিয়ে রাজনীতি করব না। তবে দলের নেতা হিসেবে তাঁর নির্দেশ–আদেশ মেনে চলব। তিনি কুমিল্লার মানুষের জন্য কাজ করেন। আমি তাঁর কর্মী। তিনি আমাকে তৈরি করেছেন।