লঞ্চে কার্গোর ধাক্কায় যাত্রীরা ছিটকে ও লাফিয়ে পড়লেন নদীতে
রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ফেরিঘাটের কাছে আজ শনিবার দুপুরে মানিকগঞ্জ থেকে আসা যাত্রীবাহী লঞ্চের সঙ্গে চট্টগ্রাম থেকে আসা পাবনাগামী ফার্নেস তেলবাহী কার্গোর সংঘর্ষ হয়। লঞ্চ থেকে অর্ধশতাধিক যাত্রী ছিটকে ও লাফ দিয়ে নদীতে পড়ে প্রাণে রক্ষা পান। আহত হন বেশ কয়েকজন যাত্রী। এ সময় লঞ্চটিতে দুই শতাধিক যাত্রী ছিলেন।
খবর পেয়ে বিআইডব্লিউটিএ ও নৌ পুলিশের সহযোগিতায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আমিনুল ইসলাম তেলবাহী কার্গোটি জব্দ করেছেন। কার্গোটির নাম ‘ওটি সাংহাই-৪’। ক্ষতিগ্রস্ত লঞ্চটির নাম ‘এমভি ফ্লাইংবার্ড-২’। তেলবাহী কার্গো ও লঞ্চটি দৌলতদিয়া ১ নম্বর ফেরিঘাটের কাছে রাখা হয়েছে। লঞ্চটি সামান্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। লঞ্চটি মাস্টারের পরিবর্তে সুকানি চালাচ্ছিলেন। কার্গোটি কোম্পানির আরেক কার্গোচালক চালাচ্ছিলেন। কার্গোটি চট্টগ্রাম থেকে পাবনার নটাখোলা বিদ্যুৎকেন্দ্রের ফার্নেস তেল নিয়ে যাচ্ছিল।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, আজ দুপুর পৌনে ১২টার দিকে পাটুরিয়া থেকে যাত্রীবাহী লঞ্চ দৌলতদিয়ায় যাচ্ছিল। লঞ্চটি ১২টার দিকে দৌলতদিয়ার ৬ নম্বর ফেরিঘাটের সামনে পৌঁছালে পাবনার নটাখোলাগামী তেলবাহী কার্গো সেটির মাঝবরাবর ধাক্কা দেয়। অর্ধশতাধিক যাত্রী ছিটকে ও লাফ দিয়ে পানিতে পড়েন। পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় রো রো ফেরি কেরামত আলীতে ওঠেন যাত্রীরা। দুটি শিশু প্রথমে নিখোঁজ থাকলেও পরবর্তী সময়ে উদ্ধার করা হয়। এতে ২০ জন যাত্রী কম-বেশি আহত হন।
লঞ্চের আহত যাত্রী সেনাসদস্য হারুন অর রশিদ বলেন, ছুটি কাটিয়ে টাঙ্গাইলের গোপালপুরের বাড়ি থেকে তিনি বরিশাল ক্যান্টনমেন্ট যাচ্ছিলেন। তাঁদের লঞ্চটিতে অতিরিক্ত যাত্রী ছিলেন। দৌলতদিয়া ফেরিঘাটের কাছে পৌঁছালে পাশ দিয়ে একই কোম্পানির তেলবাহী দুটি কার্গো আসতে থাকে। কার্গো দুটি কাছাকাছি দেখে লঞ্চের চালক দিক হারিয়ে ফেলেন। একবার গতি কমিয়ে দেন, আবার বাড়ান। এমন অবস্থার মধ্যে লঞ্চের মাঝবরাবর এসে আঘাত করে একটি কার্গো। লঞ্চের কেবিনের ওপর থাকা অনেক যাত্রী নদীতে পড়ে যান। তাঁর সঙ্গে থাকা ব্যাগসহ অন্যান্য মালামাল হারিয়ে গেছে বলে তিনি জানান। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় তিনি ওপরে ওঠেন।
অজিফা বেগম (৬০) নামের আরেক যাত্রী বলেন, তিনি আরিচা থেকে ছেলের বউ, মেয়ে ও নাতিদের সঙ্গে করে রাজবাড়ীতে ভাগনির বিয়ের দাওয়াতে যাচ্ছিলেন। দৌলতদিয়া ঘাটের কাছে পৌঁছার আগে কার্গোর সঙ্গে ধাক্কা লাগলে তিনি মাথায় আঘাত পান। কয়েকজন যাত্রী ছিটকে পানিতে পড়ে যান। অনেকে আবার ভয়ে নদীতে ঝাঁপ দেন।
লঞ্চের চালক সুকানি আবুল হোসেন বলেন, ‘দুটি কার্গো একত্রে পাল্লা দিয়ে যাচ্ছিল। আমাদের লঞ্চটি কার্গোর কাছাকাছি পৌঁছালে ধারণা করছিলাম, সামনে দিয়ে আগেই পার হয়ে যাব। কিন্তু দুটি কার্গোর পাল্লার কারণে কী হতে যাচ্ছে, বুঝতে পারিনি। পরে মুহূর্তের মধ্যে কার্গোটি লঞ্চের মাঝবরাবর এসে আঘাত করে। এতে লঞ্চের বেশ কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’ তিনি দাবি করেন, লঞ্চের মাস্টার তাঁর পাশেই বসে ছিলেন এবং লঞ্চে যাত্রী ছিলেন প্রায় দেড় শ।
তেলবাহী কার্গোর চালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘নিয়মিত চালক ছুটিতে যাওয়ায় কোম্পানির আরেক কার্গো থেকে আমি আসি। গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম থেকে ৫০০ টন ফার্নেস তেল বোঝাই করে পাবনার নটাখোলার উদ্দেশে রওনা করি। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় দৌলতদিয়া পৌঁছাই। আজ দুপুরে রওনা করি। স্বাভাবিক গতিতে চালালেও লঞ্চটি অতিরিক্ত যাত্রী বহন করে দ্রুতগতিতে সামনে দিয়ে পার হওয়ার চেষ্টা করলে দুর্ঘটনাটি ঘটে। তবে কার্গোর গতি অনেক কম থাকায় বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি।’
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) আরিচা কার্যালয়ের পরিবহন পরিদর্শক মোফাজ্জল হোসেন বলেন, ইউএনও কার্গোটি জব্দ করেছেন। বিস্তারিত খোঁজ নিয়ে মূল অপরাধীর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।