রোগীর স্বজনদের রাতের খাবার ও ইফতারি দিচ্ছে ‘মেহমান’

মেহমান সংগঠনের সরবরাহ করা বিনা মূল্যের রাতের খাবার ও ইফতারি নিচ্ছেন হাসপাতালে ভর্তি রোগীর স্বজনেরা। চাঁপাইনবাবগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা সদর হাসপাতালে গত শনিবারছবি: প্রথম আলো

চার বছর ধরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের সামাজিক সংগঠন ‘মেহমান’ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের সঙ্গে থাকা স্বজনদের রাতের খাবার দিচ্ছে। ২০২০ সালে করোনার সময় রমজান মাসে রাতের খাবারের সঙ্গে যুক্ত হয় ইফতারিও। মেহমানের সদস্যরা বলেন, রোগীদের স্বজনদের সুবিধার্থে তাঁরা এ কার্যক্রম চালাচ্ছেন।

গত শনিবার বিকেল সোয়া পাঁচটায় গিয়ে দেখা যায় হাসপাতালের রান্নাঘরের সামনে রাতের খাবার ও ইফতারি নিতে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের সারি। তাঁদের বেশির ভাগই নারী। খাবার নেওয়ার পর কথা হয় রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের সিধনা গ্রামের শামসুন্নাহারের (৩৫) সঙ্গে। তিনি বলেন, শুক্রবার থেকে পেটের ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন তাঁর স্বামী। সেদিন বাড়ি থেকে কেউ খাবার নিয়ে আসেনি। পাশের রোগীর স্বজনদের কাছে জানতে পেরেছেন, এখানে খাবার ও ইফতারি দেওয়া হয়। তাই নিতে এসেছেন। রাতে তাঁদের দুজনের হয়ে যাবে। আর ইফতারিও আছে।

সদর উপজেলার চরাঞ্চলের নারায়ণপুর ইউনিয়নের জনতার হাট গ্রামের মলিয়ারা বেগম (২৩) বলেন, ‘হামার সাড়ে তিন মাস বয়সী বেটি ডায়রির হয়্যাছে। দুদিন থ্যাক্যা হাসপাতালে আছি। সোতে হামার মাও আছে। মা-বেটি দুদিন থ্যাক্যা রাইতের খাওয়ার সোতে ইফতারিও পাইনু। হামরা গরিব মানুষ। খাওয়ার টাকাটা বাঁচলো। এতে হামারঘে উপকার হইলো। যারা এগল্যা করছে, তারঘে ল্যাগ্যা দোয়া করি।’

রোগীর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাতের খাবারে খিচুড়ি থাকে। এর সঙ্গে থাকে সবজি বা মাংস। আর ইফতারিতে খেজুর, মুড়ি ও ভাজাপোড়া থাকে।

মেহমানের এ কর্মসূচির সমন্বয় ও বিতরণের মূল কাজটি করেন জহিরুল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ২০১৯ সালে যখন তাঁরা এ কর্মসূচি শুরু করেন, তখন সপ্তাহে চার দিন খাবার বিতরণ করতেন। হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের বেশির ভাগই গরিব। পাঁচ টাকা মূল্যে খিচুড়ি বিতরণ শুরু করেন তাঁরা। যে পরিমাণ খিচুড়ি দেওয়া হতো, তাতে দুজনের খাওয়া চলত। পরের বছর করোনার সংকট শুরু হলে মেহমানের পক্ষ থেকে বিনা মূল্যে খাবারের সঙ্গে ইফতারিও বিলি করা হয়।

জহিরুল আরও বলেন, মেহমানের প্রধান উদ্যোক্তা হলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্রের চিকিৎসা কর্মকর্তা আনোয়ার জাহিদ। তাঁর সঙ্গে শহরের আরও ১০-১২ জন হৃদয়বান ব্যক্তি এ কর্মসূচিতে নিয়মিত অর্থসহায়তা দিয়ে আসছেন। মাঝেমধ্যে বেশ কিছু মানুষ এক দিনের খরচের দায়িত্ব নিয়ে সহায়তা দেন। করোনাকালে মুখ ফুটে চাইতে পারেন না, এমন মানুষদেরও বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাবার সরবরাহ করা হয়েছে। এ কর্মসূচি চালু রাখতে পেরে তাঁরা খুশি। আর যাঁরা এ সহায়তা দিচ্ছেন, তাঁদের প্রতি তাঁরা কৃতজ্ঞ।