আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে নয়টা। রাজধানীর আবদুল্লাহপুর মোড়ে হাজারো মানুষের জটলা। কারও হাতে ব্যাগ, কারও কোলে শিশু, আবার কারওবা মাথায় বস্তা। নিজ নিজ গন্তব্যে যেতে সবার অপেক্ষা যানবাহনের জন্য। কিন্তু কোনো যানবাহন নেই। এর মাঝে কোনো রিকশা বা সিএনজিচালিত অটোরিকশা আসতে দেখলেই ছুটে যাচ্ছে তারা। গন্তব্যে যেতে করছে হুড়োহুড়ি।
অপেক্ষমাণ এসব যাত্রীর মধ্যে আছেন বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী। অফিসে যেতে সকাল থেকেই রাস্তায় রাস্তায় ছুটে বেড়াচ্ছেন তাঁরা। কিন্তু কোনো যানবাহন না পাওয়ায় তাঁরাও পড়েছেন চরম বেকায়দায়। স্বাভাবিকের চেয়ে দু-তিন গুণ বেশি ভাড়া দিয়ে অফিসে যাওয়ার চেষ্টা করলেও পথে আটকে যাচ্ছেন কোনো কোনো ক্ষেত্রে। এতে সাধারণ যাত্রীদের মতো তাঁরাও পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে।
রাজধানীর কদমতলী এলাকার বাসিন্দা মিরাজুল ইসলাম। চাকরি করেন একটি প্লাস্টিক প্রতিষ্ঠানে। তাঁদের কারখানা গাজীপুরের ভোগরা বাইপাস এলাকায়। সপ্তাহে অন্তত তিন দিন কারখানায় যেতে হয় তাঁকে। এর মধ্যে আজ সকাল সাতটায় গাজীপুরের উদ্দেশে বাসা থেকে বেরিয়েছেন তিনি। কোনো গণপরিবহন না পেয়ে কখনো রিকশা, কখনোবা সিএনজিচালিত অটোরিকশাতে করে সকাল নয়টার দিকে আসেন আবদুল্লাহপুর মোড়ে। কিন্তু এখান থেকে আর কোনো যানবাহন পাচ্ছেন না। এরপর অন্য সবার মতো তিনিও অপেক্ষা করতে থাকেন অটোরিকশা বা অন্য কোনো যানবাহনের জন্য।
সকাল ১০টার দিকে কথা হয় মিরাজুলের সঙ্গে। তিনি তখন অটোরিকশাতে ওঠার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু দামে না বনায় অপেক্ষা করতে থাকেন পরবর্তী অটোরিকশার জন্য। মিরাজুল বলেন, ‘কদমতলী থেকে এ পর্যন্ত আসতে মোট ২৪০ টাকা খরচ হইছে। এখন আর গাজীপুরে যাওয়ার অটোরিকশা পাওয়া যাচ্ছে না। মাঝেমধ্যে দু-একটা গাড়ি এলেও যাত্রীদের প্রচুর চাপ। এ কারণে চালকেরা ইচ্ছেমতো ভাড়া নিচ্ছেন। ভোগড়া বাইপাস পর্যন্ত চালকেরা ২০০ টাকা চাইছে। আমি ১০০ টাকা দিতে চাই। এ কারণে আমাকে নিচ্ছে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ছোট চাকরি করি। যাতায়াতে এত টাকা গেলে খামু কী, ঘরভাড়া দিমু কেমনে? তাই একটু কমে যাওয়ার জন্য দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করছি।’
সরেজমিনে দেখা যায়, আজ গত দুদিনের তুলনায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যানবাহনের পরিমাণ কম। তবে বিভিন্ন অফিস খোলা থাকায় কর্মজীবীসহ সাধারণ মানুষ জড়ো হয়েছে আবদুল্লাহপুর মোড়ে। নিজ নিজ গন্তব্যে যেতে হাতে ব্যাগ নিয়ে অপেক্ষা করছে আবদুল্লাহপুর মোড়ের ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে। এ সময় কোনো যানবাহন আসতে দেখলেই হুড়োহুড়ি শুরু করছে তারা। এতে যেমন রক্ষা হচ্ছে না সামাজিক দূরত্ব, তেমনি দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে যাত্রীরা পড়ছে ভোগান্তিতে।
তবে লকডাউন বা গণপরিবহন বন্ধ থাকা নিয়ে যাত্রীদের ভাষ্য, অফিস খোলা রেখে গণপরিবহন বন্ধ রাখায় ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়েছেন তাঁরা। চাকরি বাঁচাতে তাঁদের বাধ্য হয়েই ঘর থেকে বের হতে হচ্ছে। কিন্তু রাস্তায় গণপরিবহন না থাকায় তাঁরা ভোগান্তিতে পড়েছেন। ২০ টাকার ভাড়া ১০০ টাকা দিতে হচ্ছে তাঁদের। এতে করে আর্থিক ক্ষতিও হচ্ছে।
নজরুল ইসলাম নামের একটি ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘লকডাউনের উদ্দেশ্য হলো মানুষের চলাচল বন্ধ করা, সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করা। কিন্তু এখন মানুষ তো ঠিকই চলাচল করছে। বরং গণপরিবহন বন্ধ করে দেওয়ার ভোগান্তিতে পড়ছে আমাদের মতো সাধারণ মানুষ।’