রাষ্ট্রায়ত্ত সব পাটকল অবিলম্বে চালুর দাবিতে গণমিছিল
বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ২৫টি পাটকলে প্রায় ৭০ হাজার শ্রমিক নিয়োজিত ছিলেন। হঠাৎ মিল বন্ধ করে দেওয়ায় ওই শ্রমিকেরা এখন বেকার হয়ে পড়েছেন। করোনার কারণে তাঁরা অন্য কোথাও কাজ করতে পারছেন না। ফলে শ্রমিক পরিবারগুলো এখন অসহায় ও মানবেতর জীবন যাপন করছে।
আজ বুধবার বিকেলে খুলনা নগরের খালিশপুর শিল্পাঞ্চলে অনুষ্ঠিত হওয়া গণমিছিল শেষে আয়োজিত সমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন। মিছিলে মিলের শ্রমিক, রাজনীতিবিদসহ বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ অংশ নেন। এ গণমিছিলের আয়োজন করে পাটকল রক্ষায় সম্মিলিত নাগরিক পরিষদ নামের একটি সংগঠন। রাষ্ট্রায়ত্ত সব পাটকল অবিলম্বে চালু, দুর্নীতি-লুটপাট-ভুলনীতি বন্ধ, আধুনিকায়ন করা এবং অবসরপ্রাপ্ত, কর্মরতসহ সব শ্রমিকের সব পাওনা শিগগিরই পরিশোধসহ ১৪ দফা দাবিতে এ মিছিলের আয়োজন করা হয়। মিছিলটি প্লাটিনাম জুট মিল গেট থেকে শুরু হয়ে ক্রিসেন্ট ও খালিশপুর জুট মিল হয়ে নতুন রাস্তার মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। এরপর সেখানে অনুষ্ঠিত হয় সমাবেশ।
সংগঠনটির আহ্বায়ক কুদরত-ই-খুদার সভাপতিত্বে ও সদস্যসচিব এস এ রশীদের পরিচালনায় সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কেন্দ্রীয় সম্পাদক রুহিন হোসেন, কেন্দ্রীয় সদস্য ও খুলনা জেলা সভাপতি মনোজ দাশ, যুগ্ম আহ্বায়ক আ ফ ম মহসিন, ওয়ার্কার্স পার্টির (মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় সদস্য মোজাম্মেল হক, বাম জোট ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) খুলনা জেলা সমন্বয়ক জনার্দন দত্ত, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের খুলনা জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য আনিসুর রহমান, গণসংহতি আন্দোলন খুলনা জেলা সমন্বয়ক মুনীর চৌধুরী, খুলনা উন্নয়ন ফোরামের চেয়ারম্যান শরীফ শফিকুল হামিদ, বৃহত্তর আমরা খুলনাবাসী সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান, খালিশপুর ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোসাদ্দেক হোসেন, বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব আফজাল হোসেন প্রমুখ।
সমাবেশ থেকে অবসরপ্রাপ্ত, কর্মরতসহ সব শ্রমিকের বকেয়া পাওনা এককালীন পরিশোধ করতে সরকারের কাছে আহ্বান জানানো হয়। দাবি মেনে না নিলে ভবিষ্যতে আরও বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন বক্তারা।
এ সময় বক্তারা বলেন, পাটকলে লোকসান হওয়ার মূল কারণ বিজেএমসির দুর্নীতি ও সরকারের ভুলনীতি। কিন্তু যাঁদের কারণে মিলগুলোয় লোকসান হয়েছে, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে তার দায় চাপানো হয়েছে শ্রমিকদের ওপর। মিল বন্ধ করে দেওয়ার ফলে প্রায় ২৬ হাজার কোটি টাকার সম্পদ লুটপাটের পথ সুগম হয়েছে। বাংলাদেশি পাটপণ্যের একচেটিয়া বাজার ভারতের হাতে তুলে দিতেই সরকার পাটকলগুলো বন্ধ করেছে বলে অভিযোগ করেন তাঁরা।
ওই সমাবেশে বক্তারা আরও বলেন, কোনোভাবেই এসব মিল সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের ভিত্তিতে (পিপিপি) লিজ বা ব্যক্তিমালিকানায় দেওয়া যাবে না। শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের (স্কপ) প্রস্তাবনা অনুযায়ী, মাত্র ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা ব্যয় করে মিলগুলোকে আধুনিকায়ন করা সম্ভব। সেটিই বাস্তবায়ন করতে মিলগুলোকে আবার সরকারিভাবে চালু করার দাবি করেন তাঁরা।
সমাবেশ থেকে অবসরপ্রাপ্ত, কর্মরতসহ সব শ্রমিকের বকেয়া পাওনা এককালীন পরিশোধ করতে সরকারের কাছে আহ্বান জানানো হয়। দাবি মেনে না নিলে ভবিষ্যতে আরও বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন বক্তারা।