রাবির হলে ছাত্রলীগের সিট–বাণিজ্য ও দখলের প্রতিবাদে মানববন্ধন

ছাত্রলীগের অব্যাহত সিট–বাণিজ্য ও দখলের প্রতিবাদে মানববন্ধন। সোমবার দুপুরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে
ছবি: শহীদুল ইসলাম

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ছাত্র হলগুলোতে ছাত্রলীগের অব্যাহত সিট–বাণিজ্য ও দখলের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন শিক্ষক-অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা। আজ সোমবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনের সামনে প্যারিস রোডে এই মানববন্ধন করা হয়।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সবকিছু আছে, ক্লাসে লেখাপাড়া নেই। শিক্ষকেরা ব্যস্ত টাকা কামাতে, তাঁদের বিল্ডিং, গাড়ি-বাড়ি দরকার। বিশ্ববিদ্যালয়েও উন্নয়ন হচ্ছে, কিন্তু আসল কাজ শিক্ষার্থীদের কোনো উন্নয়ন নেই। সবকিছু আছে, কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় শেষ হয়ে যাচ্ছে।

গতকাল রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সালেহ্ হাসান ফেসবুকে মানববন্ধনের এই ঘোষণা দেন। তাঁর ঘোষণা অনুযায়ী, আজ সোমবার শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা প্রতিবাদ জানাতে মানববন্ধনে শামিল হন।

অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খানের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তৃতা করেন পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সালেহ্ হাসান, আরবি বিভাগের অধ্যাপক ইফতেখারুল আলম মাসউদ, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মামুন হায়দার, রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও অভিভাবক নূর হোসেন মোল্লা, বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহমুদ জামাল কাদেরী, শিক্ষার্থী আবদুল মজিদ, মেহেদী হাসান, রাকিব হাসান প্রমুখ।

কাজী মামুন হায়দার বলেন, তাঁরা কী আদৌ কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে আছেন, নাকি কিছু বিল্ডিংয়ের মধ্যে অবস্থান করছেন। এমন একটি কাঠামোর মধ্যে আছেন যেখানে বিল্ডিং, গাড়ি, আইন সব আছে কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় নেই।

অধ্যাপক সালেহ্ হাসান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে বর্তমানে যত রকম অনাচার করা হচ্ছে, তার একটা বিরাট অংশ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে যখন হলগুলো থেকে শিক্ষার্থীদের নামিয়ে দেওয়া হয়, চাঁদাবাজি করা হয়, এর চেয়ে বড় মুক্তিযুদ্ধের অবমাননা তিনি ভাবতে পারেন না।

আবাসিক হলের সিট নিয়ে ছাত্ররা প্রতিদিন হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে জানান অধ্যাপক ইফতেখারুল আলম মাসউদ। তিনি আরও বলেন, বৈধ সিটের ভাড়া দিয়ে দিনের পর দিন তাঁরা বাইরে থাকছেন। হলে উঠলেও ছাত্রলীগ তাঁদের মেরে আহত করে নির্মমভাবে পিটিয়ে বের করে দেয়। এমনকি কয়েক দিন আগে সাংবাদিক পর্যন্ত তাদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি। হলে ইমাম থেকে শুরু করে নানা ধরনের যে কক্ষগুলো থাকে, বিভিন্ন মিডিয়ায় এসেছে, সেগুলো পর্যন্ত তারা বিক্রি করে দিয়েছে। ইমামের কক্ষ পর্যন্ত তারা বিক্রি করে দিয়েছে। আবাসিক শিক্ষকের কক্ষ পর্যন্ত তারা বিক্রি করে দিয়েছে। নিজেরা ৭-৮ বছর আগে ছাত্রত্ব হারিয়ে আদু ভাই হয়ে তাঁরা হলে সিট দখল করে রেখেছেন। সেই সব কক্ষে তথ্য সেল, প্রচার সেলও লিখে রেখেছে। গণমাধ্যমে যা এসেছে তা ছিটেফোঁটা, আসল তথ্য আরও ভয়াবহ। তাঁরা এর আশু অবসান চান।

অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বলেন, গত রোববার রাতে তিনি এ বিষয়ে অধ্যাপক সালেহ্ হাসানের স্ট্যাটাস শেয়ার করেন। তিনি সাধারণত কোনো কিছু শেয়ার করলে ৫-১০ মিনিটের মধ্যে ৫০-১০০টি লাইক পড়ে যায়। আর আজ সকাল পর্যন্ত মাত্র তিনটি লাইক। এ থেকে অনুধাবন করা যেতে পারে, এই ক্যাম্পাসে কতটা ভয়ের সংস্কৃতি চলছে। এখান থেকে শিক্ষার্থীদের বেরিয়ে আসতে হবে। আর খুব দুঃখ লাগছে, অনেক শিক্ষক এখানে ভয়ে আসতে চাচ্ছেন না। কিংবা অনেকে মনে করছেন, এটা তাঁদের ব্যাপার না। যাঁরা আজকে সিট দখল করছেন, বাণিজ্য করছেন, তাঁরা এই ক্যাম্পাসেরই শিক্ষার্থী। তাঁরা যখন পরবর্তী সময়ে বেরিয়ে যাবেন, তাঁদের কাছ থেকে আর কী বা প্রত্যাশা করা যাবে, এটাই প্রশ্ন।

অভিভাবক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা নূর হোসেন মোল্লা বলেন, যে ছেলে সিট বরাদ্দ পেয়েছে, সে হলে জায়গা পায় না। সিট বরাদ্দ পাওয়া ছাত্রকে উৎখাত করা হচ্ছে, পাশাপাশি যারা ছাত্র নয়, তারা দোর্দণ্ড প্রতাপে বিচরণ করছে হলে। মেয়েদের হল সন্ধ্যা ৭টার পর বন্ধ করে দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েদের হলগুলো কি জেলখানা? যে সন্ধ্যা ৭টা বাজলেই তাঁদের ঘরের মধ্যে আবদ্ধ থাকতে হবে?

আরেক বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহমুদ জামাল কাদেরী বলেন, আজকে এই ক্যাম্পাসের পরিবেশের সঙ্গে সারা দেশের অদ্ভুত মিল আছে। ক্যাম্পাসের এ ধরনের পরিস্থিতিতে তাঁরা ছাত্র থাকাকালে আন্দোলন–সংগ্রাম করেছেন। তখন সরকারি ছাত্রসংগঠন ছিল। এই সংগঠনের নেতা-কর্মী, ক্যাডাররা যে ধরনের অপকর্ম করতেন, তখন তাঁদের আন্দোলন–সংগ্রাম করতে হয়েছে। লজ্জাজনকভাবে বলতে হচ্ছে, স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও তাঁরা সেই একই পরিবেশ দেখতে পাচ্ছেন। তাঁরা কি এই বাংলাদেশ দেখতে চেয়েছিলেন?