২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

রাবি উপাচার্যের শেষ দিনে নিয়োগ নিয়ে ক্যাম্পাসে হুলুস্থুল

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের শেষ দিনে নিয়োগকে কেন্দ্র করে মহানগর ছাত্রলীগের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ ও কর্মকর্তা–কর্মচারীদের সংঘর্ষ হয়। ছবিটি বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ক্যাম্পাসেশহীদুল ইসলাম

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ ও কর্মচারীদের সঙ্গে মহানগর ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ নিয়ে উত্তেজনার মধ্যে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে এই ঘটনা ঘটে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত তিনজন কর্মকর্তা মহানগর ছাত্রলীগের মারধরের শিকার হয়েছেন।

আজ উপাচার্য আবদুস সোবহানের মেয়াদের শেষ দিন। সকাল থেকেই উপাচার্যের বাসভবনের সামনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কয়েকটি গাড়ি দেখা যায়। তিনি পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বেলা সোয়া দুইটার দিকে উপাচার্যের বাসভবন ছেড়ে চলে যান।

আজ সকাল থেকেই প্যারিস রোড, প্রশাসন ভবন, শহীদুল্লা কলা ভবনের সামনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী, চাকরিপ্রত্যাশী সাবেক ও বর্তমান ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা অবস্থান করছিলেন। সকাল থেকে সবার মুখে মুখে অ্যাডহকে নিয়োগের কথা ছড়িয়ে পড়ে।

দুপুর ১২টার দিকে মহানগর ছাত্রলীগের শতাধিক নেতা-কর্মী শেখ রাসেল স্কুলের মাঠ থেকে প্যারিস রোডে শোডাউন দিয়ে প্রশাসন ভবনের সামনে আসেন। এরপর তাঁরা প্রশাসন ভবনের পাশে শহীদ শামসুজ্জোহা চত্বরে অবস্থান নেন। এ সময় সেখানে তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরিপ্রত্যাশী সাবেক ও বর্তমান ছাত্রলীগ নেতা-কর্মী, কর্মকর্তা-কর্মচারী, মাস্টাররোলের কর্মচারীর মুখোমুখি অবস্থায় চলে যান।

নিয়োগের গুজব

সকালে ক্যাম্পাসে রটে যায়, উপাচার্যের বাসভবনে পরিষদ শাখার দপ্তরপ্রধান সহকারী রেজিস্ট্রার মামুন-অর-রশীদকে নতুন রেজিস্ট্রার নিয়োগ দিয়ে অ্যাডহকে শতাধিক কর্মকর্তা, কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া সম্পন্ন হয়েছে। এ বিষয়ে ‘দুর্নীতিবিরোধী শিক্ষকবৃন্দ’-এর মুখপাত্র অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, ‘আমরাও জেনেছি, উপাচার্য এম আব্দুস সোবহান শেষ দিনে শতাধিক নিয়োগ দিয়েছেন। তবে এখনো নিয়োগপত্র দেননি বলে শুনেছি।’

উপাচার্যের শেষ কর্মদিবসে নিয়োগ নিয়ে আজ বৃহস্পতিবার ক্যাম্পাসে হুলুস্থূল অবস্থার সৃষ্টি হয়
প্রথম আলো

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, দুপুর সাড়ে ১২টায় উপাচার্যের বাসভবন থেকে সহকারী রেজিস্ট্রার মামুন-অর-রশীদ এবং রেজিস্ট্রার দপ্তরের সহকারী রেজিস্ট্রার তরিকুল আলম বেরিয়ে আসেন। এ সময় মহানগর ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা প্যারিস রোডেই মামুন-অর-রশীদকে ঘিরে ধরেন। তাঁকে মারধর শুরু করলে হবিবুর রহমান হলের সেকশন অফিসার আবদুল্লাহ আল মাসুদ এগিয়ে যান। মহানগর ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা মাসুদকে মারধর করে তাঁর জামা ছিঁড়ে ফেলেন। তিনি রাস্তার পাশের ড্রেনে জমা পানিতে পড়ে যান। শরীরচর্চা শিক্ষা বিভাগের সহকারী পরিচালক কামরুজ্জামান চঞ্চলও তাঁদের মারধরের শিকার হন।

এ সময় সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরিপ্রত্যাশী ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান নেতা-কর্মীরাও এগিয়ে গেলে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। সেখানে পুলিশ ও ডিবির সদস্যরা লাঠিপেটা করে মহানগর ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টার করেন। শেষ পর্যন্ত মহানগর ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা মমতাজউদ্দিন কলা ভবনের সামনে দিয়ে দৌড়ে ও মোটরসাইকেলে নিয়ে পালিয়ে যান।

মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি সিয়াম আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগের নিষেধাজ্ঞার মধ্যে নতুন রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে অ্যাডহক নিয়োগের ব্যবস্থা চলছে শুনে আমরা ক্যাম্পাসে নিয়োগ প্রতিহত করতে আসি। সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মামুন-অর-রশীদের সঙ্গে আমরা এটা নিয়ে কথা বলতে গিয়েছিলাম। আমরা তাঁকে মারিনি, কিন্তু সেখানে ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে।’

দুর্নীতিবিরোধী শিক্ষকবৃন্দের মুখপাত্র অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, ‘উপাচার্য শেষ দিনে নিয়োগ নিয়ে একটা রক্তাক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করে বিদায় নিচ্ছেন।’

নিয়োগকে ঘিরে মহানগর ছাত্রলীগের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ ও কর্মকর্তা–কর্মচারীদের সংঘর্ষ হয়। ছবিটি বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ক্যাম্পাস থেকে তোলা
প্রথম আলো

ক্যাম্পাসের পরিস্থিতির বিষয়ে প্রক্টর মো. লুৎফর রহমানের সঙ্গে মুঠোফোনে কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। রাজশাহী নগরের মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ এস এম সিদ্দিকুর রহমানও ফোন ধরেননি।

ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে বেলা দুইটা পর্যন্ত চাকরিপ্রত্যাশীসহ শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও পুলিশের অতিরিক্ত সদস্যদের উপস্থিতি দেখা গেছে।

আরও পড়ুন