রাতবিরাতেও লাশ দাফনে ছুটে চলেন আলী ইউসুফ
করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) সংক্রমিত হয়ে গত ৭ জুন রাতে রাজধানীর একটি হাসপাতালে মারা যান ময়মনসিংহ সদর উপজেলার কুষ্টিয়া গ্রামের একজন। একই পরিবারের আরও দুজন করোনায় সংক্রমিত হিসেবে শনাক্ত হয়েছিলেন। স্থানীয় মানুষজনের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পুরো গ্রামেই থমথমে ভাব। এ অবস্থায় লাশ দাফন নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। গভীর রাতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ফোন করা হয় স্বেচ্ছাসেবক আলী ইউসুফকে। তিনি ওই রাতেই লাশবাহী গাড়ি নিয়ে কুষ্টিয়া গ্রামে ছুটে গিয়ে লাশ দাফনের ব্যবস্থা করেন।
ময়মনসিংহের স্বেচ্ছাসেবক আলী ইউসুফ একজন মুদ্রণ ব্যবসায়ী। সেই সঙ্গে তিনি একজন ছড়াকার। সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের সঙ্গেও যুক্ত। তবে দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরুর এসব পরিচয় চাপা পড়ে গেছে। সব ছাপিয়ে ইউসুফের স্বেচ্ছাসেবক পরিচয়টা জ্বলজ্বল করছে। করোনার কারণে যেসব কাজ অতি জরুরি হয়ে পড়েছে, তার প্রায় সবই করছেন তিনি। এর মধ্যে রয়েছে মানুষের বাড়ি-বাড়ি খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া, শিশুদের জন্য খাদ্যসামগ্রী সংগ্রহ ও সরবরাহ করা, করোনায় সংক্রমিত মানুষজনের বাড়িতে বিনা মূল্যে অক্সিজেন সিলিন্ডার পৌঁছে দেওয়া এবং করোনায় মারা যাওয়া মানুষের লাশ দাফন ও সৎকার।
আলী ইউসুফ বলেন, ‘ভয় পেয়ে ঘরে বসে থাকলে হবে না। কাউকে না কাউকে তো বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতেই হবে। স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করলে মানুষের প্রশংসা কুড়ানো যায়। এমন ভাবনা কখনো মাথায় আসেনি। মানুষের বিপদে পাশে দাঁড়াতে পেরেই আনন্দ পাই। যত দিন বেঁচে আছি, তত দিন এভাবে মানুষের পাশেই থাকব।’ তাঁর ভাষ্যমতে, করোনা সংক্রমণের পর থেকে ময়মনসিংহ নগর ও সদর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে সাতটি লাশ দাফন ও তিনটি লাশ সৎকারের কাজ করেছেন। শুরুর দিকে মানুষের মনে প্রচণ্ড ভয় ছিল। তবে ধীরে ধীরে সে ভয় কাটতে শুরু করেছে। কুষ্টিয়া গ্রামে প্রথম লাশ দাফনের দিন এমন হয়েছে যে লাশবাহী গাড়ি দেখে গ্রামের মানুষ সড়ক থেকে নেমে গেছে। এই করোনাকালে দুজন মুক্তিযোদ্ধার লাশ দাফন করতে পেরে তিনি নিজেকে গর্বিত মনে করেন।
লাশ দাফনের কাজে বিভিন্ন সময় আলী ইউসুফের সঙ্গে থাকেন মসজিদের ইমাম হাফেজ ইমদাদুল হক, স্বেচ্ছাসেবক আশরাফ উদ্দিন, সাফরান আহমেদ ও বিনায়েক দত্ত।
ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. ইকরামুল হক বলেন, মানবিকতা আর সাহসিকতার অনন্য দৃষ্টান্ত আলী ইউসুফ। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার ব্যক্তিদের দাফন বা সৎকারে কেউ যখন এগিয়ে আসতেন না, তখন আলী ইউসুফ স্বেচ্ছায় এগিয়ে এসেছেন। তিনি সিটি করপোরেশন এলাকার অনেকের মরদেহ দাফন করেছেন। এই অনন্য মানবিকতা ও সাহসিকতার জন্য তাঁকে সাধুবাদ জানান তিনি।