করোনার কারণে দেশের সার্বিক কর্মকাণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জানিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, ‘আমরা কিছুটা পিছিয়েছি, আমাদের লস (ক্ষতি) হয়েছে। কিন্তু আমরা পুষিয়ে নেব। তবে ইতিমধ্যে আমাদের মাথাপিছু আয়ও বড়েছে। আড়াই হাজার ডলার ছাড়িয়ে যাচ্ছে। শনৈ শনৈ বৃদ্ধি পাচ্ছে, রাত পোহালেই আয় বাড়ছে বাংলাদেশের, আমরা টেরই পাচ্ছি না। আমরা অজান্তেই বড়লোক হয়ে যাচ্ছি।’
সুনামগঞ্জে জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেছেন। আজ রোববার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে এই সভা হয়। এ সময় তিনি সবাইকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ‘তবে বড়লোকের বড়লোকি কিছু রোগও হয়, সেই রোগ থেকে যেন আমরা মুক্ত থাকি।’
করোনার সময়েও মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী আরও বলেন, ‘যদিও সরকারিভাবে এটা আমি প্রকাশ করিনি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশে আসার পরে তাঁর সঙ্গে কথা বলে তাঁর অনুমতি নিয়ে এটা আমরা ঢাকঢোল পিটিয়ে বলে দেব। কারণ, এটা ভালো কাজ।’
এম এ মান্নান তাঁর বক্তব্যে আরও বলেন, ‘আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় পাহাড়, হাওর, ভাটি, উপকূল, চরাঞ্চলসহ সব এলাকার উন্নয়নে কাজ করছি। প্রধানমন্ত্রীর কাছে যেকোনো প্রকল্প নিয়ে গেলে তিনি দেখেন, এতে মানুষের কী উপকার হবে। নিম্ন আয়ের মানুষ উপকৃত হবে কি না। তিনি চান প্রকল্প হবে জনকল্যাণে।’
সভায় দেশের উন্নয়নের বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরার পাশাপাশি সুনামগঞ্জের উন্নয়নে তাঁর তিনটি বিশেষ চিন্তার কথা জানান তিনি। এগুলো হলো হাওরে উড়ালসড়ক নির্মাণ, সুনামগঞ্জ শহর পর্যন্ত রেললাইন সম্প্রসারণ এবং সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা। এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘সুনামগঞ্জের মানুষ হিসেবে কোনো স্থানের প্রতি আমার বিশেষ দৃষ্টি নেই। আমি পুরো জেলার কথাই ভাবি। তবে বিষয়টি নিয়ে কেউ কেউ ভুল বার্তা দিতে চান, এ ঠিক নয়।’
এম এ মান্নান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাস হয়ে গেছে, এটা হবেই। মাঝখানে স্থান নিয়ে কিছুটা মতভিন্নতা ছিল, সেটাও সমাধান হয়েছে। শহরে রেললাইনও আসবে। তবে কোন দিকে আসবে, সেটা ঠিক করবে কারিগরি কমিটি। রেললাইন সুনামগঞ্জ হয়ে নেত্রকোনা–ময়মনসিংহে যাবে। এই সরকারের সময়েই এই প্রকল্প অনুমোদন হবে।
সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান, সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নাদের বখত, সিভিল সার্জন মো. শামস উদ্দিন, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুব আলম, গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী নুরুল হক, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) সুনামগঞ্জ কার্যালয়ের উপপরিচালক রফিকুল ইসলাম, র্যাবের সুনামগঞ্জ কোম্পানি কমান্ডার সিঞ্চন আহমেদ, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. নজরুল ইসলাম, জগন্নাথপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান, শাল্লা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আল আমিন চৌধুরী, জামালগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ইকবাল আল আজাদ, তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রায়হান কবির, বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী আমজাদ, নুরুল মোমেন ও আবু সুফিয়ান, জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি নূরুর রব চৌধুরী, প্রবীণ চিকিৎসক সৈয়দ মোনাওয়ার আলী, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সহিদুর রহমান, সুনামগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি পঙ্কজ কান্তি দে প্রমুখ।
সকাল থেকে শুরু হয়ে দুপুর পর্যন্ত এই সভা চলে। সভার আগে পরিকল্পনামন্ত্রী আধুনিকায়নের কাজ শেষ হওয়া জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষের উদ্বোধন করেন।