‘রাজাকারপুত্র’ বলে সংবাদ সম্মেলনের পর হরতালের হুমকি সাংসদের

সাংসদকে ‘রাজাকারপুত্র’ দাবি করে যুবলীগ, কৃষকলীগ নেতাদের সংবাদ সম্মেলন। সোমবার দুপুরে মেহেরপুজ জেলা প্রেসক্লাবে
ছবি: সংগৃহীত

মেহেরপুর–২ আসনের সাংসদ মোহাম্মদ সাহিদুজ্জামানকে ‘রাজাকারপুত্র’ আখ্যায়িত করে সংবাদ সম্মেলন করেছেন স্থানীয় যুবলীগ ও কৃষক লীগের একদল নেতা। এরপর যুবলীগের কার্যালয়ের সামনে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা থেকে গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করা না হলে আগামী বুধবার গাংনী উপজেলায় হরতাল পালনের হুমকি দিয়েছেন সংসদ সদস্য সাহিদুজ্জামান।

সোমবার দুপুরে মেহেরপুর জেলা প্রেসক্লাবে সাংসদের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন হয়। এ নিয়ে গাংনী উপজেলা যুবলীগ ও উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা গাংনী পৌর শহরের বাসস্ট্যান্ড এলাকায় উপজেলা যুবলীগ কার্যালয় দখল নিতে গেলে সেখানে চারটি গুলি ছোড়ার ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মোসারফ হোসেনকে আটক করে নিয়ে যায়। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে যুবলীগের কার্যালয়ের সামনে গুলি ছোড়ার ঘটনা ঘটে।

পুলিশ ও উপজেলা আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, সোমবার দুপুরে মেহেরপুর পৌর শহরের জেলা প্রেসক্লাবে উপজেলা কৃষক লীগ আয়োজিত সংবাদ সম্মলনে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটিকে রাজাকারমুক্ত করার দাবি তোলেন উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মোসারফ হোসেন, সাবেক জেলা পরিষদের সদস্য ও যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মজিরুল ইসলাম, জেলা কৃষক লীগের সভাপতি ওয়াসিম সাজ্জাদ, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ইসমাইল হোসেন।

সংবাদ সম্মেলনে ওই নেতারা বলেন, ১৮ বছর পর ১০ এপ্রিল ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে কাউন্সিলরদের অভিযোগ পাশ কাটিয়ে গাংনী উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন করেছেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক। নতুন কমিটিতে গাংনীর সাংসদ সাহিদুজ্জামান খোকনকে সভাপতি ও মকলেছুর রহমান মুকুলকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। তাঁরা দুইজনই ‘রাজাকারপুত্র’। বি এম মোজাম্মেল হক কাউন্সিলরদের অভিযোগ আমলে না নেওয়ায় তাঁরা সম্মেলন বর্জন করেন বলেও দাবি করেন।

এদিকে সংবাদ সম্মেলনের ঘটনা জানার পর গাংনী উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা উপজেলা যুবলীগের কার্যালয় দখল নিতে যান। ছাত্রলীগের সাবেক নেতা সাইফুজ্জামানসহ আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের সঙ্গে এ সময় উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মোসারফ হোসেনের বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। গাংনী বাসস্ট্যান্ডসংলগ্ন জেলা পরিষদ মার্কেটে মোসারফ হোসেনের ব্যক্তিগত কার্যালয়ের সামনে এ নিয়ে উত্তেজনা শুরু হয়। সেখানে চারটি গুলি ছোড়ার ঘটনা ঘটে। পরে উত্তেজিত নেতা–কর্মীরা যুবলীগের কার্যালয় ভাঙচুর করেন।

একপর্যায়ে নেতা–কর্মীরা মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা সড়ক অবরোধ করে মোসারফ হোসেনের গ্রেপ্তারের দাবি জানান। অবরোধের কারণে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে মোসারফ হোসেনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।

রাত নয়টায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাংসদ মোহাম্মদ সাহিদুজ্জামান আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের নিয়ে পৌর শহরের বাসস্ট্যান্ড মোড়ে সমাবেশ করেন। এ সময় তিনি মোসারফ হোসেন, সাজ্জাদ লিখন, মজিরুল ইসলাম ও ইসমাইল হোসেনকে গ্রেপ্তারের দাবিতে হরতালের হুমকি দেন। তিনি বলেন, দ্রুত জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করা না হলে তিনি আগামী বুধবার হরতালের কর্মসূচি ঘোষণা করতে বাধ্য হবেন। যতক্ষণ পর্যন্ত তাঁদের পুলিশ গ্রেপ্তার না করছে, ততক্ষণ উপজেলা আওয়ামী লীগের আন্দোলন চলবে।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোখলেছুর রহমান বলেন, গাংনীতে বেশ কিছুদিন ধরে নানা রকম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছেন মোসারফ হোসেনসহ তাঁর লোকজন। তাঁর অফিসে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে লোকজনকে ভয়ভীতি দেখানো হয়। এসব কর্মকাণ্ডে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে।

গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রাজ্জাক বলেন, উপজেলা যুবলীগের কার্যালয়ের সামনে গুলির ঘটনায় মোসারফ হোসেনকে আটক করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গাংনী পৌর শহরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।