রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদায়ী উপাচার্যের নিয়োগকাণ্ডের দ্রুত বিচার দাবি
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এম আবদুস সোবহানের মেয়াদের শেষ দিনে গতকাল বৃহস্পতিবার ১৪১ জনের নিয়োগ দিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব নিয়োগে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞা ও অ্যাডহক নিয়োগে ইউজিসির নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই তিনি এই কাজ করেছেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয় তাৎক্ষণিকভাবে নিয়োগ অবৈধ অ্যাখ্যা দিয়ে তদন্ত কমিটি করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সাবেক উপাচার্য, ছাত্রনেতারা বলছেন, উপাচার্যের বেপরোয়া এই কাজের দ্রুত তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষকেরা বলছেন, অধ্যাপক আবদুস সোবহান কাউকে তোয়াক্কা করেননি। নিজের ক্ষমতা ব্যবহার করে এমন নিয়োগ দিয়েছেন, যা কোনোভাবেই বৈধ নয়। তাঁরা এই কাজের জন্য উপাচার্যের সব কর্মকাণ্ডের তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
ইংরেজি বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘উপাচার্য কোনো কিছুকে তোয়াক্কা না করা মানুষ। তিনি লিগ্যাল, মোরাল, কনটেক্সচুয়াল কোনো ইস্যুকে বিবেচনা করেননি। এইভাবে কখনো নিয়োগ হয় নাকি? একেবারে একটা দল ধরে বা সম্প্রদায় ধরে! এটা তো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠান নয়। নিয়োগ যাকেই দিক, পরীক্ষা ও যোগ্যতাসহ একটা ডিসেন্ট উপায়ে দিতে হবে।’
বিদায়ী উপাচার্য অবৈধ কাজ করে থাকলে সরকার দ্রুত ব্যবস্থা নেবে বলে আশা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আবদুল খালেক। তিনি বলেন, ‘এটা খুবই অস্বাভাবিক ঘটনা। আমি সাবেক উপাচার্য হিসেবে বিব্রত। তবে সরকারের ওপর আস্থা রাখি। মন্ত্রণালয় তাৎক্ষণিক একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন অনিয়মের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তাই আশা করি, এখানেও অবৈধ কিছু থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এই নিয়োগের ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে বলে মনে করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক দুলাল চন্দ্র বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘উপাচার্য এবার সব রকমের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে চূড়ান্ত অন্যায় কাজটি করলেন। বিএনপির সময়ের ৫৪৪ জন নিয়োগের যন্ত্রণা শেষ না হতেই আবার এই কাজ করলেন। কোনো কিছুকে তোয়াক্কা না করে তিনি একটা মাফিয়া চক্রের নেতার মতো কাজ করেছেন। তিনি আর্থিক কারণেই এমন কাজ করেছেন। দীর্ঘদিন চাকরি না দিয়ে ছাত্রলীগকে জিম্মি করে নিজের স্বার্থে ব্যবহার করেছেন।’
অধ্যাপক দুলাল চন্দ্র বিশ্বাস ও আবদুল্লাহ আল মামুনের মতে, ভবিষ্যতে উপাচার্য নিয়োগের ব্যাপারে সরকারের সতর্ক থাকা উচিত। উপাচার্য প্রার্থীর ব্যাপারে ভালোভাবে খতিয়ে দেখা উচিত।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমরা তো বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতি করি। কিন্তু তিনি তো অনৈতিক কিছু করা শিখিয়ে যাননি! এমন ঘটনায় শিক্ষক হিসেবে আমি ক্ষুব্ধ। অবশ্যই যেন এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’
পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এম খলিলুর রহমান বলেন, ‘এই নিয়োগ নৈতিকতা ও আইনের বিরোধী। এভাবে কোথাও কোনো চাকরি হয় না। এটার আইনগত কোনো ভিত্তি নেই। এটা কেবল আইওয়াশের জন্য করেছেন। উপাচার্যের অবশ্য এটা করা ছাড়া উপায় ছিল না। আর্থিক বা অন্য কোনোভাবে হয়তো কারও কাছে দায়বদ্ধ ছিলেন। আইন প্রয়োগ করা হলে এটা টেকে না।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের রাকসুর সাবেক সহসভাপতি রাগিব আহসান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে জ্ঞান সৃষ্টি ও চর্চার জায়গা। কিন্তু অধ্যাপক আবদুস সোবহান সেখানে অনিয়ম, দুর্নীতি, লুটপাট করে বিশ্ববিদ্যালয়কে তলানিতে নিয়ে গেছেন। সেখান থেকে উত্তরণের চেষ্টা করতে হবে।