রাজবাড়ী-পাবনা নৌপথে যোগাযোগ বন্ধ
রাজবাড়ীর সঙ্গে পাবনার নদীপথে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। এ পথে সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যম জৌকুরা-নাজিরগঞ্জ নৌপথে ফেরি চলাচল বন্ধ রয়েছে। তীব্র¯স্রোতের কারণে গত সোমবার থেকে এই নৌপথে ফেরি চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়। রাজবাড়ী সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ এই ঘাট নিয়ন্ত্রণ করে। ঘাট কর্তৃপক্ষ গত বুধবার থেকে ফেরি চলাচল বন্ধের বিষয়ে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে।
রাজবাড়ী সদর উপজেলার চন্দনী ইউনিয়নে জৌকুরা ঘাট অবস্থিত।
রাজবাড়ী সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জৌকুরা ফেরিঘাট থেকে প্রতিদিন সকাল আটটা থেকে ও নাজিরগঞ্জ ঘাট থেকে সকাল সাড়ে সাতটায় ফেরি চলাচল শুরু হয়। রাত নয়টা পর্যন্ত ফেরি চলাচল হয়। এই নৌপথে দুটি ইউটিলিটি (ছোট) ফেরি রয়েছে। ফেরি ছাড়াও দুটি লঞ্চ ও কয়েকটি ট্রলার এই নদীপথে যাতায়াত করে। প্রতিদিন ফেরিগুলো সাধারণত তিন থেকে চারবার করে যাতায়াত করে। সম্প্রতি সাড়ে তিন ঘণ্টায়ও ফেরি নাজিরগঞ্জ ঘাটে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়। এর ফলে ফেরি চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলার সঙ্গে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলার যাতায়াতের সহজ পথ হলো এই নৌপথ। এই নৌপথ দিয়ে প্রতিদিন রাজবাড়ী ছাড়াও ফরিদপুর, মাদারীপুর, পিরোজপুর, বরিশাল, গোপালগঞ্জসহ আশপাশের জেলাগুলোর বাস ও মালবাহী ট্রাক পাবনা, সিরাজগঞ্জ, রাজশাহী, রংপুর, নাটোরসহ বিভিন্ন জেলায় যাতায়াত করে। এই নৌপথ ব্যবহার করলে অন্তত ১৮০ কিলোমিটার পথ সাশ্রয় হয়। এই পথে বাস ও ট্রাক ছাড়াও মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেলসহ ছোট-বড় বিভিন্ন ধরনের যানবাহন যাতায়াত করে।
জৌকুরার স্থানীয় বাসিন্দা জয়নাল ব্যাপারী বলেন, ‘এই নৌপথটি বেশ জনপ্রিয়। অনেকে নদী দেখার জন্যই এই নৌপথে যাতায়াত করে। তবে আগে কয়েক মাস ভ্রমণ করতে এসে নৌপথ বন্ধ পেয়েছিলাম। তখন অবশ্য নদীতে পানি কম ছিল। আর এখন বন্ধ রয়েছে পানি বেশি থাকার কারণে। এই নৌপথে অন্তত একটি বড় আকারের ফেরি দিলে ভালো হয়। প্রয়োজনে সরকার শীত মৌসুমে বড় ফেরি অন্যত্র সরিয়ে নেবে। তাহলে এই পথে যাতায়াতাকারীদের ভোগান্তিতে পড়তে হবে না।’
জৌকুরা ঘাটের ইজারাদার মোস্তাফিজুর রহমান শরীফের প্রতিনিধি সোহেল রানা বলেন, ফেরিতে আরও শক্তিশালী ইঞ্জিন দিলে স্রোতের মধ্যে যাতায়াত করা সম্ভব। দুর্বল ইঞ্জিনের কারণে প্রতিবছর এই সমস্যা দেখা দেয়। এই নৌপথে ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় প্রায় ২০০ কিলোমিটার ঘুরে কুষ্টিয়া হয়ে পাবনাসহ অন্যান্য জেলায় যাতায়াত করতে হচ্ছে।
ট্রলারে নদী পার হওয়া এক নারী বলেন, ‘জরুরি কাজে রাজবাড়ী শহরে যেতে হবে। কিন্তু ফেরি বন্ধ রয়েছে। এ কারণে ট্রলারে নদী পার হলাম। তবে নদীতে স্রোত বেশি থাকায় ট্রলার খুব ঢুলতে ছিল। এতে আমার মতো অনেক যাত্রীই ভয় পেয়ে গিয়েছিল। এই ঘাটের প্রতি প্রশাসনের তেমন কোনো নজর নেই।’
রাজবাড়ী সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আশিকুল ইসলাম বলেন, ‘ফেরি চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ থাকায় অনেকেই সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। নদীতে তীব্র স্রোতের কারণে ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছিল। তবে ঘাট কবে স্বাভাবিক হবে, তা এখন নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। দুই-এক দিন পরে ফেরি চলাচল স্বাভাবিক হতে পারে। ফেরি চলাচল স্বাভাবিক রাখতে আমরা সব সময় বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছি। ইজারাদারদের সঙ্গেও নিয়মিত যোগাযোগ করে যাচ্ছি।’