রংপুরে বেড়েছে লোডশেডিং, বিদ্যুৎ সরবরাহ চাহিদার অর্ধেকের কম

লোডশেডিংপ্রতীকী ছবি

রংপুরে সপ্তাহখানেক তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপর রয়েছে। এর মধ্যে লোডশেডিংও বেড়েছে। শহরের তুলনায় গ্রামে লোডশেডিং হচ্ছে বেশি। গ্রামাঞ্চলে অনেক স্থানে দিন–রাতে অর্ধেক সময়ই বিদ্যুৎ থাকছে না। গরমে মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে।

রংপুর নেসকো ও পল্লী বিদ্যুৎ সূত্র জানায়, এক সপ্তাহ ধরে অব্যাহত রয়েছে লোডশেডিং। গতকাল সোমবার দিন-রাত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় বিদ্যুতের চাহিদা ছিল প্রায় ২৬০-২৭০ মেগাওয়াট। এই বিপরীতে সরবরাহ পাওয়া গেছে ১২০–১৩০ মেগাওয়াট। চাহিদার তুলনায় অর্ধেকের কম বিদ্যুৎ সরবরাহ হওয়ায় লোডশেডিং অনেক বেড়ে গেছে। এর মধ্যে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ জরুরি গুরুত্বপর্ণ স্থানে বিদ্যুৎ সরবরাহ পুরোপুরি নিশ্চিত করতে হচ্ছে। এসব নানা কারণে লোডশেডিং বেশি হচ্ছে।

গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শহরে এক ঘণ্টা পরপর লোডশেডিং হচ্ছে। গ্রামের অবস্থা আরও শোচনীয়। গ্রামে এক ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকলেও দুই ঘণ্টা থাকছে না। রাতের ১২ ঘণ্টার মধ্যে মাত্র বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে ৩–৪ ঘণ্টা।

পল্লী বিদ্যুৎ-১–এর আওতাধীন মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দ গ্রামের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘এমনিতেই প্রচণ্ড গরম। রাতে বিদ্যুৎ না থাকায় খুব কষ্ট হচ্ছে। আধা ঘণ্টা থাকলে দুই ঘণ্টা থাকে না বিদ্যুৎ। দিনে–রাতে ২৪ ঘণ্টায় হয়তো ৬ ঘণ্টা বিদ্যুৎ পাওয়া যায়।’  

রাইতোত (রাত) বিদ্যুৎ না থাকলে কি ঘুম হয়। তার ওপর প্রচণ্ড গরম। দিনে–রাতে ৫–৬ ঘণ্টা বিদ্যুৎ পাওয়া যায়।
সাদেকুল ইসলাম, গঙ্গাচড়া উপজেলার নবনিদাস এলাকার বাসিন্দা

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২–এর আওতাধীন গঙ্গাচড়া উপজেলার নবনিদাস এলাকার কৃষক সাদেকুল ইসলাম বলেন, ‘রাইতোত (রাত) বিদ্যুৎ না থাকলে কি ঘুম হয়। তার ওপর প্রচণ্ড গরম। দিনে–রাতে ৫–৬ ঘণ্টা বিদ্যুৎ পাওয়া যায়।’

গঙ্গাচড়া উপজেলার বিদ্যুৎ পরিচালিত হয় রংপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২–এর আওতাধীন। এই প্রতিষ্ঠানের মহাব্যবস্থাপক খুরশিদ আলম আজ মঙ্গলবার সকালে মুঠোফোনে বলেন, ‘বিদ্যুতের এই দুরবস্থা শুধু রংপুরেই নয়, সারা দেশে। ফোনে মানুষের কষ্টের কথা শুনতে হচ্ছে। আমার বাড়িতেও তো বিদ্যুৎ থাকছে না।’  

রংপুর নগরেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। বিপণিবিতান ও দোকানে জেনারেটর চালিয়ে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করতে হচ্ছে। রাস্তার পাশ দিয়ে হেঁটে গেলে জেনারেটর চালানোর শব্দ শোনা যাচ্ছে। রংপুর শহরের মুন্সিপাড়া এলাকার বাসিন্দা নূর ইসলাম বলেন, ‘এমনিতেই প্রচণ্ড গরম, তার ওপর বিদ্যুতের লোডশেডিং অনেক বেশি। মধ্য রাত ও ভোরের দিকে বিদ্যুৎ থাকে না। একটু শান্তিতে ঘুমাব তারও কোনো উপায় নেই।’

রংপুর শহর ও আশপাশ এলাকায় গতকাল রাতে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল প্রায় ৭৫ মেগাওয়াট। এর বিপরীতে গড়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ হয়েছে ৪৫ মেগাওয়াট।
আশরাফুল ইসলাম, রংপুর নেসকোর প্রধান প্রকৌশলী

রংপুর নেসকোর প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম বলেন, রংপুর শহর ও আশপাশ এলাকায় গতকাল রাতে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল প্রায় ৭৫ মেগাওয়াট। এর বিপরীতে গড়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ হয়েছে ৪৫ মেগাওয়াট। এর মধ্যে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ জরুরি সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের সরবরাহ দিতে হয়। এতে এলাকাভেদে লোডেশেডিং বেশি হয়।

রংপুর আবহাওয়া কার্যালয়ের কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এক সপ্তাহ ধরে ৩০–৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ওঠানামা করেছে। গতকাল সোমবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আকাশে মেঘ না থাকা এবং প্রচণ্ড খরতাপের কারণে অনেক বেশি গরম অনুভব হচ্ছে।