যৌতুক না দেওয়ায় স্ত্রীকে পিটিয়ে হাসপাতালে পাঠানোর অভিযোগ
যৌতুকের দুই লাখ টাকা না দেওয়ায় এক গৃহবধূকে তাঁর স্বামী পিটিয়ে গুরুতর জখম করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় ওই গৃহবধূকে গত রোববার রাত দেড়টায় মাদারীপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এ ঘটনায় সোমবার রাতে সদর মডেল থানায় ওই গৃহবধূ বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করেছেন। এ মামলায় গৃহবধূর স্বামী সদর উপজেলার নারী ভাইস-চেয়ারম্যান নারগিস আক্তারের ছেলে সাব্বির হোসেন ও তাঁর বোনকে আসামি করা হয়। ওই গৃহবধূ এখন সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
পুলিশ ও মামলার এজাহার সূত্র জানায়, প্রেমের সূত্র ধরে প্রায় সাত মাস আগে সদর উপজেলার নয়ারচর এলাকার অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য সোবাহান ব্যাপারীর মেয়ে নুজহাত তাসনীমের (১৮) সঙ্গে মস্তফাপুর এলাকার কাজী সরোয়ারের ছেলে সাব্বির হোসেনের (২০) বিয়ে হয়। বিয়ের শুরু থেকেই শ্বশুরবাড়ির লোকজন নুজহাতকে নির্যাতন করে আসছিলেন।
এক মাস আগে যৌতুকের দুই লাখ টাকা চান নুজহাতের স্বামী সাব্বির। টাকা দিতে না পারায় গত রোববার বিকেল থেকে নুজহাতকে ঘরে আটকে রেখে তাঁর ওপর চালানো হয় অমানবিক নির্যাতন। কৌশলে গৃহবধূ নুজহাত তাঁর বাবা সোবাহানকে ফোন করে ঘটনা জানালে রোববার রাতেই তিনি মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে যান। পরে তিনি তার মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে চাইলে নুজহাতের স্বামী সাব্বির তাঁকে বেদম মারধর করে ঘর থেকে বের করে দেন।
এরপর নুজহাতের খালু জাহাঙ্গীর শিকদার লোকজন নিয়ে নারী ভাইস-চেয়ারম্যান নারগিস আক্তারের বাড়িতে যান। পরে বাড়ির একটি কক্ষ থেকে গুরুতর অবস্থায় নুজহাতকে উদ্ধার করে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। নুজহাতের বাবা সোবাহান ব্যাপারীও আহত অবস্থায় সদর হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
সোমবার রাত ১০টায় সদর হাসপাতালের সার্জারি ওয়ার্ডে গিয়ে দেওয়া যায়, আহত নুজহাত হাসপাতালে শয্যায় শুয়ে আছেন। পাশেই বসে আছেন তাঁর মা।
সোমবার রাত ১০টায় সদর হাসপাতালের সার্জারি ওয়ার্ডে গিয়ে দেওয়া যায়, আহত নুজহাত হাসপাতালে শয্যায় শুয়ে আছেন। পাশেই বসে আছেন তাঁর মা। মেয়ের এমন পরিণতি দেখে মায়ের চোখেমুখে কান্নার ছাপ। নুজহাতের চোখেও পানি। গলায়, ঘাড়ে ও মুখের বিভিন্ন স্থানে রয়েছে আঘাতের চিহ্ন।
মঙ্গলবার সকালে মাদারীপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) নুরুল ইসলাম বলেন, ‘শারীরিক নির্যাতনের শিকার ওই নারীর হাত-পায়ের বিভিন্ন অংশে ইনজুরি আছে। তাঁকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে হাসপাতালের দোতলায় তাঁর বাবাও ভর্তি আছেন।’
জানতে চাইলে নুজহাত তাসনীম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিয়ের তিন দিনের মাথায় সাব্বির আমাকে বিনা কারণে মারধর করে। এরপর থেকে নানা কারণে দিনের পর দিন আমি নির্যাতনের শিকার হইছি। আরও একবার হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল আমার। কয়েক দিন ধরে সাব্বির আমার বাবার কাছ থেকে দুই লাখ টাকা এনে দিতে বলে। আমি টাকা না আনলে সাব্বির ও তার বোন আমাকে মাঝে মাঝেই পিটাত। কখনো লাঠি, খুন্তি বা বড় চামচ দিয়ে আবার কখনো হাত দিয়ে মারত।’
জামাতার হামলার শিকার হয়ে সদর হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় ভর্তি হন নুজহাতের বাবা সোবাহান ব্যাপারী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার মেয়েটা ইন্টারে (একাদশ শ্রেণি) বিজ্ঞান বিভাগে পড়ত। বিয়ের আগে কথা ছিল মেয়েকে পড়তে দিতে হবে। কিন্তু বিয়ের পর আমার মেয়ের লেখাপড়া ওর শাশুড়ি বন্ধ করে দেয়। আগে পড়তে চাইলে মারধর করত, এখন টাকার জন্য মেয়েটাকে মেরে ফেলতে চেয়েছিল স্বামী ও তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন।’
তিনি আরও বলেন, ‘মেয়ের নির্যাতনের কথা আমরা আগে ভয়ে কিছু বলতে পারি নাই। মেয়ের শাশুড়ি রাজনীতি করে। মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান, তাই কিছু বলতে গেলেই ভয় দেখাত। পুলিশ দিয়ে ধরে নেওয়ার কথা বলত। মেয়েকে মেরে ফেলবে এমন কথাও সে বলত।’
অভিযোগের বিষয় জানতে চাইলে মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান নারগিস আক্তার বলেন, ‘ছেলে-মেয়ে সমবয়সী। তাই ওদের মধ্যে টুকটাক ঝামেলা হয়। ছেলেটা ওর বউকে সন্দেহ করে। এ নিয়েই বেশি কথা-কাটাকাটি হয়। তবে বড় কোনো ঘটনা ঘটেনি। হাসপাতালে ভর্তি হওয়াসহ সাব্বিরের শ্বশুর যে অভিযোগ করছেন, তা সত্য নয়। এমন কথা কে বলছে তাও বলতে পারছি না।’
জানতে চাইলে সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ইসলাম মিঞা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে প্রথম আলোকে বলেন, ‘নির্যাতনের ঘটনায় ওই নারী নিজেই বাদী স্বামীসহ দুজনকে আসামি করে মামলা করেছেন। আমরা অভিযুক্তকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছি।’