যশোরের ২ পাটকলের কর্মকর্তারা অবরুদ্ধ
যশোরের অভয়নগর উপজেলার রাজঘাটের রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল যশোর জুট ইন্ডাস্ট্রিজ ও কার্পেটিং জুট মিলসের কর্মকর্তাদের কার্যালয়ের ভেতরে অবরুদ্ধ করে রেখেছেন শ্রমিকেরা। বকেয়া মজুরির দাবিতে আজ বৃহস্পতিবার সকাল নয়টা থেকে পাটকল দুটির কর্মকর্তাদের কার্যালয়ের ভেতরে রেখে মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে ৬৫ জন কর্মকর্তা অবরুদ্ধ অবস্থায় রয়েছেন। শ্রমিকেরা কার্যালয়ের বাইরে বিক্ষোভ ও সমাবেশ করছেন। বেলা তিনটায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত অবরোধ চলছিল।
টানা ১৫ দিন বন্ধ থাকার পর শ্রমিকেরা কাজে যোগ দেওয়ায় গতকাল বুধবার সকাল ছয়টা পাটকল দুটিতে উৎপাদন শুরু হয়েছে।
মজুরি কমিশন গঠনসহ ৯ দফা দাবিতে ৫ মে রাত নয়টা থেকে পাটকল দুটির উৎপাদন বন্ধ করে দেন শ্রমিকেরা। পাটকল বন্ধ রেখে শ্রমিকেরা প্রতিদিন তিন ঘণ্টা করে যশোর-খুলনা মহাসড়ক এবং খুলনা-ঢাকা রেলপথ অবরোধ করেন। তাঁরা ৭ মে থেকে মহাসড়কের ওপর ইফতার এবং আসর ও মাগরিবের নামাজ আদায় করেন।
শ্রমিকেরা জানান, গত মঙ্গলবার দুপুরে খুলনার জেলা প্রশাসন, বিজেএমসি ও শ্রমিকদের ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আন্দোলন স্থগিত করা হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন খুলনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন। আলোচনা সভায় সিদ্ধান্ত হয়, চলতি সপ্তাহে দুই সপ্তাহের বকেয়া মজুরি এবং এক সপ্তাহের মধ্যে পুরো বকেয়া মজুরি দেওয়া হবে। এ ছাড়া বুধবার বন্ধ মিলগুলোতে জরুরিভাবে কর্মরত শ্রমিকদের হাতে মজুরি কমিশন বাস্তবায়ন করে পে স্লিপ দেওয়া হবে। এরপর আন্দোলন স্থগিত করা হয়। কিন্তু এ দাবি মানা হচ্ছে না। গতকাল বুধবার কর্মরত শ্রমিকদের হাতে মজুরি কমিশন বাস্তবায়ন করে পে স্লিপ দেওয়া হয়নি। আজ বৃহস্পতিবার সপ্তাহের শেষ দিন। সাধারণত সপ্তাহের শেষ দিনে মজুরি প্রদান করা হয়। কিন্তু আজ প্রতিশ্রুত দুই সপ্তাহের বকেয়া মজুরি প্রদান করার কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এ জন্য আজ সকাল থেকে পাটকল দুটির কর্মকর্তাদের কার্যালয়ের ভেতরে রেখে মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। কার্যালয়ের ভেতরে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। দাবি মানা না পর্যন্ত তালা খোলা হবে না।
যশোর জুট ইন্ডাস্ট্রিজ সিবিএর সহসম্পাদক ইসরাইল সরদার বলেন, ‘আমাদের ১৪ সপ্তাহের মজুরির বকেয়া রয়েছে। আজ সকালে আমাদের দুটি বিলের টাকা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সকালে এসে শুনতে পাই, আমাদের কোনো টাকা দেওয়া হবে না। সে কারণে আমরা ডিজিএমসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ভেতরে রেখে প্রধান কার্যালয়ে তালা দিয়ে সামনে অবস্থান নিয়েছি।’
যশোর জুট ইন্ডাস্ট্রিজের শ্রমিক হুমায়ুন কবির বলেন, ‘বারবার দাবি মানার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু দাবি মানা হচ্ছে না। আমাদের পেটে ভাত নেই। দাবি না মানা পর্যন্ত তালা খোলা হবে না।’
কার্পেটিং জুট মিলসের শ্রমিক মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। আমাদের দাবি না মানা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।’
মজুরি কমিশন গঠনসহ ৯ দফা দাবিতে বাংলাদেশ পাটকল শ্রমিক লীগ ও সিবিএ-নন সিবিএ ঐক্য পরিষদ পাটকলে ধর্মঘট ও মহাসড়ক-রেলপথ অবরোধ কর্মসূচির ডাক দেয়। শ্রমিকদের অন্যান্য দাবির মধ্যে রয়েছে অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক–কর্মচারীদের পি এফ গ্র্যাচুইটি প্রদান, মৃত শ্রমিকের বিমার বকেয়া প্রদান, টার্মিনেশন ও বরখাস্ত হওয়া শ্রমিকদের কাজে পুনর্বহাল, শ্রমিক-কর্মচারীদের নিয়োগ ও স্থায়ী করা, পাট মৌসুমে পাট ক্রয়ের অর্থ বরাদ্দ, উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে মিলগুলোকে পর্যায়ক্রমে আধুনিকায়ন করা।
যশোর জুট ইন্ডাস্ট্রিজে ১ হাজার ৪০০ জন শ্রমিক রয়েছেন। তাঁদের ১৪ সপ্তাহের মজুরি বকেয়া রয়েছে। এ ছাড়া কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পাঁচ মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে। কার্পেটিং জুট মিলসে ৭৫০ জন শ্রমিক রয়েছেন। তাঁদের ১৪ সপ্তাহের মজুরি বকেয়া রয়েছে। কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পাঁচ মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে।
যশোর জুট ইন্ডাস্ট্রিজের উপমহাব্যবস্থাপক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘সকাল নয়টা থেকে ৪৫ জন কর্মকর্তাসহ আমি নিজেও পাটকলের কার্যালয়ে অবরুদ্ধ হয়ে আছি। কার্যালয়ের মূল ফটকে তালা দেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের লাইন বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি বিজেএমসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের এবং পুলিশকে জানানো হয়েছে। থানার ওসি এসে ঘুরে গেছেন।’
কার্পেটিং জুট মিলসের উপমহাব্যবস্থাপক (হিসাব) চন্দ্রকান্ত বৈরাগী বলেন, ‘মূল ফটকে শ্রমিকেরা তালা দেওয়ায় কার্যালয়ের অভ্যন্তরে আমরা ২০ কর্মকর্তা আটকা পড়েছি। বিজেএমসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানানোর পর তাঁরা জরুরি বৈঠকে বসেছেন। পাটকলে পুলিশ এসে ঘুরে গেছে।’
অভয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘খবর পেয়ে দুটি পাটকলে গিয়েছি। পাটকল দুটির কর্মকর্তা ও শ্রমিকনেতাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। শ্রমিকের শান্ত থাকতে বলেছি। পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে।’