আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কার বিজয়ী নড়াইলের সাদাত রহমানের চিন্তা এখন বিশ্বময়। তার স্বপ্ন, এ বিশ্ব হবে সাইবার বুলিং ও সাইবার অপরাধমুক্ত। কিশোর-কিশোরীরা আর সাইবার বুলিংয়ের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করবে না। বন্ধ হবে না তাদের পড়াশোনা। শিশু শান্তি পুরস্কার বিজয়ের পর সাদাত রহমান আজ শনিবার দুপুরে নড়াইলে এসব কথা বলে।
নেদারল্যান্ডসভিত্তিক ‘কিডস রাইটস ফাউন্ডেশন’ সাদাত রহমানকে আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কার বিজয়ী ঘোষণা করে। ১৩ নভেম্বর নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অনলাইনে যুক্ত থেকে সাদাতের হাতে শিশুদের নোবেলখ্যাত এই পুরস্কার তুলে দেন নোবেল বিজয়ী মালালা ইউসুফজাই। ৪২টি দেশের ১৪২ জন শিশুর মনোনয়নের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল সাদাতের বিশ্বমঞ্চে উঠে আসার দৌড়।
আজ সকালে নড়াইল আব্দুল হাই সিটি কলেজের পক্ষ থেকে যশোর বিমানবন্দরে সাদাতকে অভ্যর্থনা জানানো হয়। সাদাত ওই কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র। সেখান থেকে তাঁকে নিয়ে আসা হয় নড়াইল প্রেসক্লাবে। দুপুর ১২টার দিকে প্রেসক্লাবে নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে সাদাত আরও বলে, ‘বিশ্বে যত দিন সাইবার বুলিং বন্ধ না হয়, তত দিন কাজ চালিয়ে যাব। দেশের ৬৪ জেলায় দ্রুত কার্যক্রম শুরু করব।’
এ সময়ে প্রেসক্লাবে উপস্থিত ছিলেন সাদাতের বাবা মো. সাখাওয়াত হোসেন, মা মোসা. মলিনা খাতুন, সিটি কলেজের অধ্যক্ষ মো. মনিরুজ্জামান মল্লিক ও সহকারী অধ্যাপক মলয় কান্তি নন্দী এবং নড়াইল ভলান্টিয়ার্স ও সাইবার টিনসের সদস্যরা।
মো. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘সাদাতের প্রতি দেশবাসীর আন্তরিকতা দেখে আমি অভিভূত। বাংলাদেশ ডিজিটাল দেশ হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে, সাদাত তার বাস্তব প্রমাণ। অন্য তরুণেরা তাকে দেখে এগিয়ে আসবে, বাংলাদেশকে তারা নতুন ভাবে গড়বে, এটিই আশা।’
শিশু শান্তি পুরস্কার বিজয়ের জন্য বাংলাদেশ পুলিশকে বিশেষ ধন্যবাদ জানিয়ে সাদাত বলে, ‘তাদের সমর্থন ছাড়া সাইবার বুলিংমুক্ত বাংলাদেশের জন্য আমার দৃষ্টিভঙ্গি ও মিশন কার্যকর করতে পারতাম না, যা আমাকে এই মর্যাদাপূর্ণ স্বীকৃতি দিয়েছে। এ ছাড়া এ স্বীকৃতির পেছনে আমার অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে আমার মা-বাবা, দল, বন্ধু, শিক্ষক ও পরামর্শদাতা।’
সাদাত জানায়, ২০১৭ সালে ডিসেম্বরে বন্ধুদের নিয়ে গড়ে তোল হয় ‘নড়াইল ভলান্টিয়ার্স’ সংগঠনটি। এ সংগঠনের একটি শাখা হিসেবে সাইবার টিনসের যাত্রা শুরু গত বছরের অক্টোবরে। সাইবার টিনস অ্যাপটির মাধ্যমে মূলত নড়াইলে সাইবার বুলিং নিয়ে কাজ করছিল। নড়াইলের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিমউদ্দিন কাজটি সরাসরি বাস্তবায়ন করছিলেন। অ্যাপটি এখন আপডেটের কাজ চলছে। এখন এটিকে বিশ্ব–উপযোগী করে গড়ে তোলা হবে। পুরস্কারের এক লাখ ইউরো অ্যাপটির কাজে ব্যয় করা হবে।
সাদাত বলছিল, ‘মূলত আমার কনসেপ্টটি (ধারণা) তারা গ্রহণ করে স্বীকৃতি দিয়েছে। আরও ভালো লাগা কাজ করছে যে ওই স্বীকৃতির পর জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নানা প্রতিষ্ঠান এটিকে অনুসরণ করার জন্য আমার সঙ্গে যোগাযোগ করছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ পুলিশ পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন নামে কার্যক্রম শুরু করেছে। সেখানে প্রচুর সাড়া মিলছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পুলিশ বিভাগ আমার সঙ্গে বৈঠক করেছে।’