ময়মনসিংহে করোনা রোগীদের জন্য যথেষ্ট প্রস্তুতি নেই হাসপাতালগুলোর
ময়মনসিংহে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের উন্নত চিকিৎসার জন্য হাসপাতালগুলোর যথেষ্ট প্রস্তুতি নেই। নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ), ভেন্টিলেটর সুবিধা ছাড়াই একটি হাসপাতালে অল্প কিছু শয্যা প্রস্তুত করা হয়েছে। অথচ দিন দিন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে।
এখন দেশজুড়ে যেভাবে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, তাতে ময়মনসিংহে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা হঠাৎ কয়েকগুণ বেড়ে গেলে চিকিৎসা কার্যক্রমে ব্যাপক বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হবে বলে আশঙ্কা করছেন স্বাস্থ্যসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও সচেতন নাগরিক মহল ।
স্বাস্থ্য বিভাগের প্রস্তুতি বলতে ব্রিটিশ আমলের নির্মিত এস কে হাসপাতালে ৩০ শয্যার আইসোলেশন ইউনিট রাখা হয়েছে। সেখানে নেই কোনো নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ), নেই কোন ভেন্টিলেটর। কেউ গুরুতর অসুস্থ হলে তাঁকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই স্থানান্তর করতে হচ্ছে। তাই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা।
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) ময়মনসিংহ শাখার সভাপতি অধ্যাপক মতিউর রহমান ভূঁইয়া বলেছেন, এস কে হাসপাতালে রোগীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার কোনো সুযোগ নেই। ফলে সেখানে রোগী, চিকিৎসক ও নার্স কেউই নিরাপদ নন। উন্নত চিকিৎসার জন্য জেলার দুটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একটিকে অস্থায়ীভাবে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের জন্য বরাদ্দের দাবি জানান তিনি।
সিভিল সার্জন এ বি এম মশিউল আলম জানান, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবে প্রতিদিন নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। গতকাল রোববার পর্যন্ত ১ হাজার ৭০০ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ১০৪ জনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্ত লোকজনের মধ্যে ময়মনসিংহ জেলায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৩১ জন। এ ছাড়া নেত্রকোনায় ২৭, জামালপুরে ৩০ ও শেরপুরে ১৬ জন করে আক্রান্ত হয়েছেন। এখন পর্যন্ত এস কে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় একজনের মৃত্যু হয়েছে।
স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক মো. আবুল কাশেম জানান, বিভাগীয় সদরে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের উন্নত চিকিৎসার লক্ষ্যে ময়মনসিংহের দুটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মধ্যে একটিকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাসেবার লক্ষ্যে প্রস্তুত করার জন্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী, সচিব ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘কমিউনিটি বেজড মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যেই ৩০টি শয্যা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের জন্য বরাদ্দ রেখেছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের নানা অসুবিধার কথা জানিয়েছে। তার পরও আমরা করোনাভাইরাস মোকাবিলায় পৃথক হাসপাতাল নির্ধারণের বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা করছি।’
শহরতলির চুরখাই এলাকার কমিউনিটি বেজড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক এম করিম খান জানান, এই হাসপাতালে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি তাঁরা নিচ্ছেন। ইতিমধ্যে ৩০টি শয্যা প্রস্তুত করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা হাসপাতালটি পরিদর্শন করেছেন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।