মৃনাল হকের ৪০ ‘সেলিব্রিটি’ এখন রাজশাহীতে
রাজশাহীর গৃহবধূ ফাহমিদা কবির একবার ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাশে দাঁড়াচ্ছেন, আরেকবার নরেন্দ্র মোদির পাশে। আর তাঁর বান্ধবী জামিউল ফিরোজা এসব দৃশ্যের ছবি তুলছেন। তবে বাস্তবে ট্রাম্প বা মোদি নন তাঁরা। ভাস্কর মৃনাল হকের গড়া বিখ্যাত ব্যক্তিদের ভাস্কর্যের পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছিলেন ওই গৃহবধূ।
রাজশাহী নগরের উপশহর এলাকার ৩ নম্বর সেক্টরের ১৮৪ নম্বর বাড়িতে ‘মৃনাল হক সেলিব্রিটি গ্যালারি’ গড়ে তোলা হয়েছে। এখানে স্থান পেয়েছে বিশ্বের খ্যাতিমান ৪০ জন মানুষের ভাস্কর্য।
মৃনাল হক ঢাকার গুলশানে দর্শকদের জন্য এই গ্যালারি উন্মুক্ত করেছিলেন। পরে সেটি ঢাকার উত্তরায় স্থানান্তর করা হয়। তাঁর মৃত্যুর পর সম্প্রতি রাজশাহী নগরের উপশহর এলাকায় এ গ্যালারি নিয়ে আসা হয়েছে।
এটি আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে। তবে অনানুষ্ঠানিকভাবেই দর্শনার্থীরা আসছেন। দেখছেন। দ্বিতল বাড়িটির নিচতলায় একটি পাঠাগার করা হয়েছে। আর দ্বিতীয়তলায় করা হয়েছে গ্যালারি। প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত গ্যালারি দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত রাখা হচ্ছে। দর্শনী মূল্য রাখা হয়েছে ১০০ টাকা ও ৫০ টাকা।
বৃহস্পতিবার বিকেলে গ্যালারিতে গিয়ে দেখা যায়, নিচতলার পাঠাগারে বই সাজানোর কাজ চলছে। দ্বিতীয় তলার গ্যালারিতে ভাস্কর্য সাজানোর কাজ শেষ হয়েছে। দ্বিতীয় তলার চারটি গ্যালারির বাইরে খানিকটা উঠানের মতো জায়গা রাখা হয়েছে। সেখানে সবচেয়ে বড় ভাস্কর্যটি রাখা হয়েছে। এটি সানাইবাদক ওস্তাদ বিসমিল্লাহ খাঁর।
১ নম্বর গ্যালারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাতীয় চার নেতা, সাহিত্যিক মীর মোশাররফ হোসেন, একুশের গানের রচয়িতা আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীসহ আরও দুজনের আবক্ষ ভাস্কর্য রাখা হয়েছে। ২ নম্বর গ্যালারি সাজানো হয়েছে আদিম যুগের মানুষের ভাস্কর্য দিয়ে। সেখানকার আলোকসজ্জাও সেভাবেই করা হয়েছে। এখানে এসে মূলত শিশু-কিশোর দর্শনার্থীরা আনন্দ পাবে। ৩ নম্বর গ্যালির পপ সম্রাট মাইকেল জ্যাকসন, তারকা ফুটবল খেলোয়াড় লিওনেল মেসি, সংগীতশিল্পী সাকিরা, বব মার্লেসহ ক্রীড়া, সংগীত ও শিল্প জগতের ব্যক্তিদের ভাস্কর্য দিয়ে সাজানো।
৪ নম্বর গ্যালারিতে ঢুকতেই প্রথেম হাতের বাঁ পাশে মহাত্মা গান্ধী আর ডান পাশে চে গুয়েভারার দিকে নজর পড়বে। লাঠি হাতে গান্ধী যেন হেঁটে যাচ্ছেন। তাঁর বাঁ পাশেই মাদার তেরেসা। এ কক্ষেই রবীন্দ্রনাথ বসে আছেন টেবিলে। যেন তিনি কলম দিয়ে খাতায় লিখছেন। অনেক দর্শনার্থী তাঁর পাশে বসে ছবি তুলছেন।
মোদির পাশেই রাখা হয়েছে শেখ হাসিনার ভাস্কর্য। রবীন্দ্রনাথের পাশেই দাঁড়িয়ে আছেন কালো চুলের বাবরি দোলানো কবি নজরুল ইসলাম। তাঁর পাশেই রয়েছেন ক্ষুদিরাম বসু। এ গ্যালারিতেও রয়েছে শেখ হাসিনার একটি সম্পূর্ণ ভাস্কর্য।
গ্যালারি ভ্রমণ শেষে রাজশাহী নগরের শিরোইল সরকারি হাইস্কুলের শিক্ষক সাইকা কবীর দর্শনার্থীর খাতায় লিখেছেন, ‘লন্ডনে মাদাম তুসোর মিউজিয়াম দেখার সৌভাগ্য হয়েছে আমার। আমাদের রাজশাহী শহরে এত সুন্দর মিউজিয়াম দেখে আমি সত্যিই অভিভূত।’ আরও অনেকেই এমন বিভিন্ন অনুভূতির কথা লিখেছেন।
গ্যালারির ইনচার্জ কামরুল হাসান জানিয়েছেন, শিল্পী মৃনাল হক রাজশাহীর মানুষ। তাঁর ইচ্ছা ছিল রাজশাহীতে একটি গ্যালারি করবেন। বেঁচে থাকতে সেটা সম্ভব হয়নি। ২০২০ সালে তিনি মারা যান। এরপর ঢাকার গ্যালারিটাই তাঁর পরিবারের লোকজন রাজশাহীতে নিয়ে আসেন।
কামরুল হাসান আরও জানিয়েছেন, ঈদের পর থেকে গ্যালারি অনানুষ্ঠানিকভাবে খোলা রাখা হয়েছে। রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান এ গ্যালারি উদ্বোধন করবেন। তাঁরা সেই অপেক্ষায় রয়েছেন।