মুহিবুল্লাহ হত্যা মামলায় ‘আরসার ওলামা শাখার নেতা’ গ্রেপ্তার
রোহিঙ্গাদের শীর্ষ নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যা মামলায় আশ্রয়শিবিরের ধর্মীয় নেতা মৌলভি জকোরিয়াকে (৫৫) গ্রেপ্তার করেছে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন)।
এপিবিএনের দাবি, গ্রেপ্তার জকোরিয়া মুহিবুল্লাহ হত্যার পরিকল্পনাকারীদের একজন। তিনি মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) কুতুপালং আশ্রয়শিবির এলাকার ওলামা শাখার প্রধান কমান্ডার।
আজ রোববার সকালে উখিয়ার কুতুপালং আশ্রয়শিবিরের আস্তানা থেকে জকোরিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়। দুপুরে তাঁকে উখিয়া থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। জকোরিয়া কুতুপালং (ক্যাম্প-১ পশ্চিম) আশ্রয়শিবিরের ডি-ব্লকের বাসিন্দা।
উখিয়ার ২৩টি আশ্রয়শিবিরে রোহিঙ্গা পরিচালিত মাদ্রাসা-মক্তব আছে প্রায় ৩০০টি। এসব প্রতিষ্ঠানে রোহিঙ্গা শিক্ষক আছেন প্রায় দেড় হাজার। এর মধ্যে অন্তত ৭০০ রোহিঙ্গা মৌলভির (ধর্মীয় শিক্ষক) নেতৃত্ব দেন জকোরিয়া।
রোহিঙ্গা শিবিরে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ১৪ এপিবিএন ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক ও পুলিশ সুপার মো. নাঈমুল হক বলেন, মৌলভি জকোরিয়া ২০১৫ সালে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে এসে উখিয়ায় আশ্রয় নেন এবং এর কয়েক মাস পর মিয়ানমারে ফিরে যান। ২০১৭ সালে ২৫ আগস্টের পর আট লাখ রোহিঙ্গার সঙ্গে তিনিও বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন। পরে উখিয়ার লম্বাশিয়া আশ্রয়শিবিরে বাস করতে শুরু করেন। মুহিবুল্লাহর সঙ্গে জকোরিয়ার পূর্বপরিচয় ছিল। ২০১৯ সালে আরসার ওলামা শাখার ফতোয়া বিভাগের দায়িত্ব পান জকোরিয়া। ২০২০ সাল থেকে আরসার কুতুপালং শিবির এলাকার ওলামা শাখার প্রধান কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উখিয়ার কুতুপালং ও লম্বাশিয়া আশ্রয়শিবিরের কয়েকজন রোহিঙ্গা নেতা (মাঝি) বলেন, রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে যেসব মাদ্রাসা-মক্তব প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে সেগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মুহিবুল্লাহর সমর্থক ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে আরসার সমর্থক ওলামা কমিটির বিরোধ চলছিল। মাদ্রাসা-মক্তব পরিচালনার জন্য বিদেশ থেকে পাঠানো অনুদান ও সাহায্যের টাকা ভাগাভাগি নিয়ে এ বিরোধ। এর জের ধরে ২০২১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে উখিয়ার লম্বাশিয়া শিবিরে বন্দুকধারীদের গুলিতে খুন হন মুহিবুল্লাহ (৪৮)। তিনি আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের (এআরএসপিএইচ) চেয়ারম্যান ছিলেন। মহিবুল্লাহকে হত্যার ঘটনায় ৩০ সেপ্টেম্বর উখিয়া থানায় অজ্ঞাতনামা সন্ত্রাসীদের আসামি করে হত্যা মামলা করেন মুহিবুল্লাহর ছোট ভাই হাবিবুল্লাহ।
১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অধিনায়ক নাঈমুল হক বলেন, মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত আরসার এমন চারজন রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীসহ এ মামলায় ১২ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে চারজন হত্যার দায় স্বীকার করে কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন। সর্বশেষ আরসার ওলামা শাখার কুতুপালং আশ্রয়শিবির এলাকার কমান্ডার মৌলভি জকোরিয়াকে গ্রেপ্তার করেছে এপিবিএন।
তিনি আরও বলেন, এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত আরও কয়েকজন মিয়ানমারে পালিয়ে গেছেন। এ কারণে তাঁদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হচ্ছে না।