মুন্সিগঞ্জ-নারায়ণগঞ্জ পথে লঞ্চ চলাচল বন্ধ, যাত্রীদের দুর্ভোগ
নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীতে কার্গো জাহাজের ধাক্কায় লঞ্চডুবির ঘটনায় মুন্সিগঞ্জ-নারায়ণগঞ্জ নৌপথে সব ধরনের লঞ্চ চলাচল বন্ধ আছে। আজ সোমবার সকাল থেকে লঞ্চ চলাচল বন্ধ। এতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের।
বিআইডব্লিউটিএ বলেছে, যাত্রীনিরাপত্তা ও নৌ দুর্ঘটনা এড়াতে অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য এই নৌপথে সব লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।
আজ সকালে মুন্সিগঞ্জ লঞ্চঘাটে গিয়ে দেখা যায়, লঞ্চ টার্মিনালের পাশে সারিবদ্ধভাবে রাখা হয়েছে এই পথে চলাচলকারী লঞ্চগুলো। অন্য সময় যে লঞ্চ টার্মিনালটি লোক সমাগমে মুখরিত থাকত, এখন সেখানে সুনসান নিরবতা। নারায়ণগঞ্জগামী যাত্রীরা ঘাটে আসছেন। লঞ্চ বন্ধ থাকার কথা শুনে তাঁরা ফিরে যাচ্ছেন। ঘাটের ইজারাদারের লোকজনও যাত্রীদের এই নৌপথ থেকে ফিরে যেতে বলছেন।
এই নৌপথে নিয়মিত যাতায়াতকারী কয়েকজন যাত্রী বলেন, সড়কপথে স্বস্তি নেই। অনেক সময় লাগে, খরচও বেশি। তাই নৌপথ তাঁদের ভরসা। তবে এই নৌপথের নিরাপত্তা দেখার যেন কেউ নেই। একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটছে। সাধারণ মানুষ মরছে। দুর্ঘটনা রোধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে কর্তৃপক্ষ লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দিচ্ছে। এতে আবার যাত্রীদেরই দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
লঞ্চঘাটে আসা নারায়ণগঞ্জগামী যাত্রী মর্জিনা বেগম বলেন, ‘আমার শ্বশুরবাড়ি নারায়ণগঞ্জের আদমজী এলাকায়। বাবার বাড়ি মুন্সিগঞ্জে বোনের মেয়েকে নিয়ে বেড়াতে এসেছিলাম। শ্বশুরবাড়ি ফেরার পথে ঘাটে এসে দেখি সব লঞ্চ বন্ধ। এখন আর কী করব, ঘুরে গাড়ি দিয়ে যাব। কিন্তু গাড়িতে সময় বেশি লাগে। যানজট থাকে।’
সদর উপজেলার খালিস্ট এলাকার বাসিন্দা মো. নুরুজ্জামান বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জ যাওয়ার জন্য আসছিলাম। ঘাটে এসে দেখি লঞ্চ বন্ধ। তাই ফিরে যাচ্ছি। এই নৌপথে চলাচলকারী লঞ্চগুলোর ফিটনেস নাই। লঞ্চগুলো আকারে ছোট। ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া অনভিজ্ঞ চালকদের দিয়ে চালানো হচ্ছে লঞ্চ। আমরা মরছি। আবার আমরাই ভোগান্তিতে পড়ছি।’
নদী আহম্মেদ নামের এক নারী বলেন, ‘কোনো ঘোষণা শুনলাম না। সংবাদে পেলাম না। ঘাটে এসে শুনি লঞ্চ বন্ধ। নৌপথ সুরক্ষিত করতে কোনো উদ্যাগ নেওয়া হচ্ছে না। একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটছে। আবার যাত্রীদের ভোগান্তি বাড়ানোর জন্য লঞ্চ বন্ধ করে দিল!’
মুন্সিগঞ্জ লঞ্চঘাটের ইজারাদারের লোকজন জানিয়েছেন, বিআইডব্লিউটিএর ঘোষণার পর থেকে লঞ্চ চলাচল বন্ধ আছে। কত দিন লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকবে, সেটা এখনো তাঁদের জানানো হয়নি।
লঞ্চঘাটের ইজারাদার দীন মোহাম্মদের মুঠোফোনে বারবার কল করলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইজারাদারের লোকজন বলেছেন, এই নৌপথে ২৩টি লঞ্চ চলাচল করে। এর মধ্যে মুন্সিগঞ্জের লঞ্চ পাঁচ-ছয়টি। প্রতিদিন অন্তত ১ হাজার ৫০০ মানুষ এই নৌপথে নারায়ণগঞ্জ যাতায়াত করেন। গত বছর নৌ দুর্ঘটনার আগে প্রতিদিন গড়ে তিন হাজার যাত্রী আসা-যাওয়া করতেন।
এ ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম পরিচালক শেখ মাসুদ কামাল প্রথম আলোকে বলেন, যাত্রীনিরাপত্তার কথা চিন্তা করে এ নৌপথে অনির্দিষ্টকালের জন্য লঞ্চ চলাচল বন্ধ করা হয়েছে। গতকাল রোববার রাতে লঞ্চ চলাচল বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। নৌপথ সুরক্ষিত করতে কোনো ব্যবস্থা নেননি, উল্টো লঞ্চ বন্ধ করে দিলেন কেন—এমন প্রশ্নের তিনি কোনো জবাব দিতে রাজি হননি।