মুক্তিযোদ্ধা চত্বর পড়ে আছে অবহেলায়

১৯৭১ সালে সিলেটের মুক্তিযোদ্ধা চত্বরে পাকিস্তানি সেনারা মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পণ করে। যে জায়গার যথাযথ গুরুত্ব পাওয়ার কথা, তা এখন অবহেলায় পড়ে আছে। পরিচ্ছন্ন থাকার কথা থাকলেও সেখানে এখন বিভিন্ন যানবাহন পরিষ্কার করা হয়।

সিলেট নগরের দক্ষিণ সুরমার কদমতলী মুক্তিযোদ্ধা চত্বরে রাখা হয়েছে বাস, ট্রাক, লেগুনা। জমেছে পানি। সম্প্রতি তোলা ছবি।ছবি: প্রথম আলো

সিলেটে প্রবেশপথেই কদমতলী এলাকায় মুক্তিযোদ্ধা চত্বর। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের মতে, ১৯৭১ সালে এই স্থানেই মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল পাকিস্তানি সেনারা। মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বের পরিচয় হিসেবে স্থানটি যথাযথ গুরুত্ব পাওয়ার কথা। কিন্তু গোলাকার স্থানটির নিচু অংশে জমে থাকে বৃষ্টির পানি। এখানে প্রায়ই লেগুনা, ট্রাক, সিএনজিচালিত অটোরিকশা রাখা হয়। যে জায়গা পরিচ্ছন্ন থাকার কথা, সেখানেই উল্টো বিভিন্ন যানবাহন পরিষ্কার করা হয়।

মঙ্গলবার সকালেও চত্বরটিতে গিয়ে দেখা গেল, জমে থাকা বৃষ্টির পানি দিয়ে ভ্যান ধোয়ামোছার কাজ করছেন এক ব্যক্তি। জানা গেল, প্রায় তিন বছর ধরে মুক্তিযোদ্ধা চত্বরটি বেহাল হয়ে আছে। অথচ তিন বছর আগেই ওই এলাকার সড়ক প্রশস্তকরণ এবং চত্বর ভেঙে দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হলেও সেটি এখনো বাস্তবায়িত হয়নি।

চত্বরের পানিতে ভাসছে শেওলা আর স্থানীয় ফল বাজারের আবর্জনা। ভেতরে যানবাহন প্রবেশ ও বের হওয়ার ফলে চারপাশে ইটের গাঁথুনির বেশ কয়েকটি ভেঙে গেছে।

সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, প্রায় তিন বছর আগে সিলেটের দক্ষিণ সুরমার কদমতলী এলাকার মুক্তিযোদ্ধা চত্বরসংলগ্ন সড়ক এবং সুরমা নদীর তীরে ওয়াকওয়ে নির্মাণের জন্য প্রায় ১১ কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। এর ফলে সড়কের মধ্যে অবস্থিত মুক্তিযোদ্ধা চত্বরটি ভেঙে পরিসর আরও বাড়ানো হয়। এ কাজেরই অংশ হিসেবে মুক্তিযোদ্ধা চত্বরে একটি দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা তৈরিরও সিদ্ধান্ত হয়। সে সময় চত্বরের জন্য নকশা চেয়ে গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তিও দেওয়া হয়েছিল। তবে জমা পড়া নকশা পছন্দ না হয়নি কর্তৃপক্ষের। পরে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল বিভাগে চত্বরের নকশা করতে সহযোগিতা চাওয়া হয়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এখনো নকশা পাওয়া যায়নি।

চত্বরে জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে চলে যানবাহন ধোয়া–মোছার কাজ।
প্রথম আলো

মঙ্গলবার মুক্তিযোদ্ধা চত্বর এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায়, চত্বরটির চারপাশে গোলাকারভাবে ইট-সিমেন্টের গাঁথুনি দিয়ে প্রায় ছয় ইঞ্চি উচ্চতার চত্বর তৈরি করে রাখা রয়েছে। গোলাকার চত্বরের বেশ কিছু অংশে পানি জমে আছে। ভাসছে শেওলা আর স্থানীয় ফল বাজারের ময়লা-আবর্জনা। চত্বরে জমে থাকা পানি বালতি দিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন কেউ কেউ। চত্বরের ভেতরে যানবাহন প্রবেশ ও বের হওয়ার ফলে চারপাশে ইটের গাঁথুনির বেশ কয়েকটি ভেঙে গেছে।

কদমতলী এলাকার বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল হক বলছিলেন, চত্বরটি মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত। এ এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে পাকিস্তানি সেনারা আত্মসমর্পণ করেছিল। সে স্মৃতিকে ধরে রাখতে মুক্তিযোদ্ধা চত্বর নির্মাণ করা হয়েছিল। কিন্তু সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ প্রায় তিন বছর আগে চত্বরটি নতুন নকশায় নির্মাণ করার কথা বলে ভেঙে ফেলেছে। কিন্তু এখনো সেটি নির্মাণ করা হয়নি।

একই এলাকার ব্যবসায়ী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, আগে স্থাপনাটি দেখে অনেকে সিলেটে মুক্তিযোদ্ধাদের ইতিহাস সম্পর্কে ধারণা পেতেন। স্থানটির পরিচিতি থাকলেও মুক্তিযোদ্ধা চত্বরটি এখন বোঝার উপায় নেই; বরং চত্বরে জমে থাকা পানিতে মশা-মাছির আবাস হয়েছে।

জানতে চাইলে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, করোনার জন্য উন্নয়নকাজ বন্ধ থাকায় অনেক কাজ বন্ধ রাখা হয়েছিল। পর্যায়ক্রমে সেগুলো শুরু করা হচ্ছে। চত্বরটির নকশাও দ্রুত চূড়ান্ত করে নির্মাণকাজ শুরু করা হবে।