২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

মাসুদার এগিয়ে চলা শত বাধা ডিঙিয়ে

প্রথম আলো অ্যাসিড সহায়ক তহবিলের উদ্যোগে ২০১৫ সাল থেকে শিক্ষাবৃত্তি পাচ্ছেন মাসুদা।

রংপুর জেলার ম্যাপ

নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী থাকা অবস্থায় দুর্বৃত্তদের ছোড়া অ্যাসিডে মাসুদা আক্তারের দুটি চোখই নষ্ট হয়ে যায়। সে ঘটনার ১০ বছর পেরিয়ে গেছে। তবে এ নির্যাতন তাঁকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। ভয়ভীতি ও কষ্ট উপেক্ষা করে স্বাবলম্বী হতে পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছেন মাসুদা। নির্যাতনের বিভীষিকা ভুলে আজ নতুন প্রত্যয়ে জীবন গড়ছেন তিনি।

২৬ জুন। জাতিসংঘ ঘোষিত আন্তর্জাতিক নির্যাতনবিরোধী দিবস। মাসুদা বলেন, প্রকৃতির অপরূপ শোভা দেখতে না পেলেও অনুভব করেন। চোখের দৃষ্টি ফিরে না পেলেও উচ্চশিক্ষা অর্জন করে মানুষের পাশে দাঁড়াতে চান। অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে কাজ করতে চান।

মাসুদা বর্তমানে পড়াশোনা করছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নৃবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষে। তিনি বলেন, তাঁর বাড়ি রংপুর নগরের বাবু খাঁ এলাকায়। পাশের বাড়ির আরিফুল ইসলাম নামের এক তরুণ বিয়ের প্রস্তাব দেন। এতে রাজি না হওয়ায় আরিফুল তাঁকে অ্যাসিড ছুড়ে মারেন। ২০১২ সালের ১৩ আগস্ট নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় এ ঘটনা ঘটে। এতে তাঁর মুখ, পিঠ, হাতসহ শরীরের অনেক স্থান ঝলসে যায়। এরপর দীর্ঘদিন তাঁর চিকিৎসা চলে। পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়।

২০১৫ সালে রংপুরের অ্যাসিড-সন্ত্রাস অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আদালত এবং জেলা ও দায়রা জজ আদালতের তৎকালীন বিচারক এই মামলার রায় দেন। রায়ে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেওয়া হয় আরিফুল ইসলামের (২২)। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ পেয়েছেন তাঁর সহযোগী আলাল (২৩) ও দুলাল (২৪)।

এদিকে দীর্ঘ সময় চিকিৎসার পর মাসুদা একসময় সুস্থ হয়ে ওঠেন। চলাফেরা করতে পারলেও, চোখ দুটি আর ভালো হয় না। মায়ের হাত ধরেই তাঁকে স্কুলসহ সব জায়গায় ছুটে বেড়াতে হয়।

মাসুদা বলেন, প্রথম আলো অ্যাসিড সহায়ক তহবিলের উদ্যোগে ২০১৫ সালের মার্চ মাস থেকে শিক্ষাবৃত্তি চালু করা হয়। সেই থেকে এখনো মাসুদা পাচ্ছেন শিক্ষাবৃত্তি। তাঁর বড় ভাই পড়তেন। আর তিনি শুনে শুনে তা মুখস্থ করতেন। আবার মুঠোফোনে রেকর্ডও করে দেওয়া হতো। পরীক্ষার সময় স্কুলে মাসুদার কথা শুনে শুনে অন্য একজন খাতায় লিখে দিতেন। ২০১৬ সালে এসএসসি পরীক্ষায় মানবিক বিভাগ থেকে অংশ নিয়ে ভালো ফল করেন। এরপর ২০১৮ সালে ঢাকার একটি আবাসিক কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নিয়ে কৃতিত্বের সঙ্গে পাস করেন। পরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন।

মাসুদা আরও বলেন, স্কুলজীবনে পড়াশোনার সৃজনশীল কাজে অংশ নিতেন। ভালো ভলিবল খেলোয়াড় ছিলেন। নাচতেন, সুন্দর আঁকাআঁকিও করতেন। আন্তস্কুল ভলিবল প্রতিযোগিতায় তিনি অংশ নেন। অ্যাসিডে দগ্ধ হওয়ার আগে ২০১১ ও ২০১২ সালে দুবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। সেসব এখন শুধুই স্মৃতি।

মাসুদা বলেন, ‘অনেক কষ্ট করে হলেও হাল ছাড়িনি। উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই। মানুষের কল্যাণে যেন কাজ করতে পারি। সততার পথে মানুষের মতো মানুষ হতে পারি। এ জন্য সবার দোয়া চাই।’ এখন বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা তাঁকে যথেষ্ট সহযোগিতা করেন। সহপাঠীরাও সাহায্য সহযোগিতায় এগিয়ে আসেন।