মাশরাফির অনুপ্রেরণায় নড়াইলে দাফন-সৎকারে ছুটে যান তাঁরা

নড়াইলে দাফন-সৎকারে কাজ করে যাচ্ছে মাশরাফির ‘বঙ্গবন্ধু স্কোয়াড’।
ছবি: সংগৃহীত

গত ১০ জুলাই নড়াইল শহরের মহিষখোলা এলাকার নিজ বাড়িতে করোনাভাইরাসের উপসর্গ জ্বর-শ্বাসকষ্ট নিয়ে মারা যান ব্যবসায়ী আলীমুজ্জামান ঠান্ডু। করোনাভাইরাস শনাক্ত বা উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের লাশ স্বাস্থ্যবিধি মেনে দাফন ও সৎকারের জন্য প্রশাসনের কড়া নির্দেশ আছে। পরিবারের সদস্য ও স্বজনেরা সেটা জানেনও। তাই আলীমুজ্জামানের লাশ দাফনের ক্ষেত্রে তাঁরা কাকে বলবেন, কী করবেন, বুঝে উঠতে পারছিলেন না। অনেকে সহানুভূতি প্রকাশ করলেও কাছে আসতে ভয় পাচ্ছিলেন। এ অবস্থায় খবর দেওয়া হলো ‘বঙ্গবন্ধু স্কোয়াড’ নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যদের। তাঁরাই আলীমুজ্জামানকে নড়াইল কেন্দ্রীয় কবরস্থানে দাফন করেন।

বঙ্গবন্ধু স্কোয়াডের সদস্যরা নড়াইল জেলায় ২৯ আগস্ট পর্যন্ত করোনাভাইরাসে সংক্রমিত ও উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া ১১ জনের লাশের দাফন-সৎকার করেছেন।


করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে গত মে মাসে নড়াইল সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয় মাঠে নড়াইল-২ আসনের সাংসদ মাশরাফি বিন মুর্তজার পরামর্শে সংগঠনটি গড়ে তোলা হয়। মাশরাফির বাবা গোলাম মুর্তজা স্বপন বঙ্গবন্ধু স্কোয়াডের প্রধান সমন্বয়কারী হিসেবে রয়েছেন।


নড়াইল সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা মো. মশিউর রহমান বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু স্কোয়াডের সদস্যরা আমাদের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ নিয়ে সফলভাবে কাজটি চালিয়ে যাচ্ছেন। এই দুঃসময়ে ভয় ও ঝুঁকি উপেক্ষা করে তাঁদের এই কাজ মানবিকতার অনন্য দৃষ্টান্ত।’


বঙ্গবন্ধু স্কোয়াডের সমন্বয়কারী মো. মাহাফুজুর রহমান বলেন, ‘শুরুতে আমাদের পারিবারিক কিছু বাধা ছিল। পরে আমরা পরিবারের সদস্যদের বুঝিয়েছি। কাউকে না কাউকে এই দায়িত্ব নিতে হবে। তাঁরা বুঝেছেন। আমরা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ অনুসরণ করে মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, যার যার ধর্মের নিয়ম মেনেই দাফন ও সৎকারের কাজ করছি। সবাই সুস্থ্ও আছি।’

করোনাকালে গাছ লাগানোর কাজ করছে মাশরাফির ‘বঙ্গবন্ধু স্কোয়াড’।
ছবি: সংগৃহীত

মো. মাহাফুজুর রহমান জানান, প্রতিটি উপজেলাসহ ইউনিয়নে পর্যায়েও এই সংগঠন গড়ে উঠেছে। সবশেষ ২৯ আগস্ট নড়াইল পৌর সভার কুড়িগ্রামের কালী কিংকর ভট্টাচার্যকে দাহকাজে সহায়তা করেন বঙ্গবন্ধু স্কোয়াডের সদস্যরা।

জেলা পর্যায়ে বঙ্গবন্ধু স্কোয়াডের কার্যক্রমে ৪৫ জন সদস্য রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ২৫ জন মুসলিম ও ১৫ জন সনাতন ধর্মাবলম্বী। নারী রয়েছেন পাঁচজন। গত ১৫ জুন প্রথমে ২৫ জন সদস্য সদর হাসপাতালের সভাকক্ষে দুই দিনের প্রশিক্ষণ নেন। এরপর গত ১ জুলাই থেকেই তাঁরা কাজে নেমে পড়েন।


দলটির সদস্যসচিব দীপু খন্দকার জানান, কেউ কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়ে বা উপসর্গ নিয়ে মারা গেলে অনেক সময় স্বজনেরা আতঙ্কে দাফন বা সৎকারের দায়িত্ব নিতে চান না। এমন পরিস্থিতির কথা জানিয়ে মুঠোফোনে কল করে বা খুদে বার্তা পাঠিয়ে তাঁদের অবহিত করা হলেই তাঁরা ছুটে যান। রাত-দিন যেকোনো সময়ই হোক, তাঁরা ছুটে যান। এ সময় তাঁরা ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই) পরে নেন।

দীপু খন্দকার বলেন, ‘খবর পাওয়ার পর আমাদের একটাই লক্ষ্য থাকে, যত তাড়াতাড়ি কাজটা শেষ করা যায়। মারা যাওয়া ব্যক্তিকে নিজের স্বজন বলে মনে হয়।’

এ ব্যাপারে সাংসদ মাশরাফি বিন মুর্তজা বলেন, ‘মৃত্যুর পর ব্যক্তির প্রাপ্য মর্যাদা বা সম্মানটুকু দিতেই আমরা এই মানবিক দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছি। নিজেদের অর্থায়নে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সংগ্রহ করে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে বঙ্গবন্ধু স্কোয়াড নিরলস কাজ করে যাচ্ছে।’


দাফন-সৎকার ছাড়াও করোনাকালে দুস্থ ব্যক্তিদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ, গাছ লাগানোসহ নানান কাজে নিয়োজিত রয়েছেন বঙ্গবন্ধু স্কোয়াডের সদস্যরা।