নওগাঁয় ইউপি নির্বাচন
মান্দায় ‘বিদ্রোহী’দের নিয়ে বিপাকে আওয়ামী লীগ
১৪ ইউপিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী হয়েছেন বর্তমান ও সাবেক মিলিয়ে ২১ জন নেতা-কর্মী। তাঁদের কারণে কিছুটা বেসামাল অবস্থায় দলীয় প্রার্থীরা।
নওগাঁর মান্দা উপজেলার ভারশোঁ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) বর্তমান চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান। এবারও তিনি চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন। ভারশোঁ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আলতাজ উদ্দিনও একই পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
ইউপি নির্বাচনের একই ধরনের চিত্র উপজেলার প্রসাদপুরেও। ২০১৬ সালে এই ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি ফয়েজ উদ্দিন সরদার। এবারও তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। প্রসাদপুরে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু বক্কর সিদ্দিক।
মান্দা উপজেলার ১৪ ইউপিতে আওয়ামী লীগ মনোনীত ১৪ জনের বিপরীতে ‘বিদ্রোহী’ হিসেবে দলটির বর্তমান ও সাবেক ২১ জন নেতা-কর্মী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় কিছুটা বেকায়দায় আছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থীরা।
আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতা-কর্মী ও স্থানীয় ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কয়েকটি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর চেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থীর অবস্থান ভালো। এ ছাড়া বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় কয়েকটি ইউনিয়নে স্বতন্ত্র হিসেবে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা বিএনপি ও জামায়াতের নেতারা সুবিধাজনক অবস্থায় আছেন। ইউপি নির্বাচনের তৃতীয় ধাপে ২৮ নভেম্বর মান্দায় ভোট গ্রহণ হওয়ার কথা। ১৪টি ইউপিতে মোট ৯৪ জন চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
ভারশোঁ ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে মোট সাতজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভারশোঁ ইউপি নির্বাচনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান, স্বতন্ত্র হিসেবে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আলতাজ উদ্দিন ও বিএনপির নেতা মোজ্জাম্মেল হকের মধ্যে। প্রসাদপুর ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে ছয়জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাঁদের মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবু বক্কর সিদ্দিক, স্বতন্ত্র হিসেবে ‘বিদ্রোহী’ ফয়েজ উদ্দিন সরদার, বিএনপির নেতা আবদুল মতিন মণ্ডল ও জামায়াত নেতা মোয়াজ্জেম হোসেনের মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে।
মান্দা সদর ইউপিতে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী তোফাজ্জল হোসেন (তোফা)। তাঁর বিপরীতে প্রার্থী হয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মোতাহার হোসেন ও যুবলীগের নেতা আলমগীর হোসেন। মান্দা সদরে চেয়ারম্যান পদে ৯ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও, আওয়ামী লীগের প্রার্থী তোফাজ্জল হোসেনের সঙ্গে স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা বিএনপির নেতা মাজেদুর রহমান ও জামায়াতের নেতা তোফাজ্জল হোসেনের মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে বলে সাধারণ ভোটারদের ধারণা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মৈনম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, ত্যাগী ও অভিজ্ঞ নেতাদের বাদ দিয়ে অপেক্ষাকৃত এলাকায় কম পরিচিত একজনকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এই ইউপিতে বারবার নির্বাচন করা বিএনপির এক নেতাও স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এই অবস্থায় বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় দলের প্রার্থীর জয় অনেকটাই কঠিন হয়ে পড়বে।
মান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাজিম উদ্দিন মণ্ডল বলেন, যাঁরা স্বতন্ত্র হিসেবে প্রার্থী হয়েছেন, তাঁদের ব্যাপারে এখন পর্যন্ত নির্দেশনা পাওয়া যায়নি। দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে যে নির্দেশনা আসবে, তা-ই বাস্তবায়ন করা হবে।