মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আর উল্টাপাল্টা কইরেন না, ক্ষমতা ছেড়ে দেন: জাফরুল্লাহ চৌধুরী
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে তিনি বলেছেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আর উল্টাপাল্টা কইরেন না। ক্ষমতা ছেড়ে দেন একটা অন্তর্বর্তকালীন সরকারের হাতে। সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন করেন। নির্বাচন করে যে আসে সে–ই দেশ চালাবে।’
আজ সোমবার সন্ধ্যায় রাজশাহী নগরের পদ্মা নদীর পাড়ে ফারাক্কা লংমার্চের ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
শ্রীলঙ্কার রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রসঙ্গ টেনে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘আজকে আমাদের সামনে এক কঠিন সমস্যা। শ্রীলঙ্কাকে দেখে শেখা উচিত। ১০ দিন আগেও পৃথিবীর কোনো বিশেষজ্ঞ বলেননি যে শ্রীলঙ্কায় আগুন ঝরবে। তাই বলি, মানুষের ধৈর্যের সীমা আছে। সেই ধৈর্যের সীমা অতিক্রম করবেন না।’
ভাসানী অনুসারী পরিষদের চেয়ারম্যান জাফরুল্লাহ চৌধুরী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আরও বলেন, ‘ভারত যেভাবে আমাদের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে, সেটা থেকে মুক্তি প্রয়োজন। সেই মুক্তির পথ হলো সুষ্ঠু নির্বাচন। এর জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারই বলেন আর সর্বদলীয় সরকার বলেন, তবে দলীয় সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। এ কথাই বলেছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যুক্তফ্রন্ট। তাদের দফাতে ছিল নির্বাচনের দুই মাস পূর্বে দলীয় সরকার ভেঙে দিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের কথা। তবে এটা তিন মাসের সরকার হলে হবে না। কেননা, মানুষের যে ক্ষোভ, শ্রীলঙ্কাকে দেখে শেখা উচিত। এ জন্য পৃথিবীর অতীত ইতিহাস থেকে প্রধানমন্ত্রী শিক্ষা গ্রহণ করুন।’
জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা সবাই খুশি হয়েছি পদ্মা সেতু হয়েছে। কিন্তু ঋণ কত? সেতু বিভাগের ছয় কিলোমিটারের জন্য তাদের ৫৭ হাজার কোটি টাকা ঋণ। অনেকেই মনে করে, শ্রীলঙ্কা হব না। কেন? শ্রীলঙ্কা তো শান্তির দেশ। তাদের জাতীয় বীর জাতীয় বেইমান হয়ে গেছে। সুতরাং সাধু সাবধান। ইউনিয়নে ইউনিয়নে ম্যুরাল গড়লেই জনগণ ভুলে যাবে না। জনগণের পেটের খিদে বড় জ্বালা। সন্তান যদি মায়ের দুধ না পায়, তার মা সহ্য করতে পারেন না। আত্মহত্যা করেন। এ কারণেই সুশাসন দরকার। একটি কল্যাণকর রাষ্ট্র দরকার। আজকে আমাদের বড় করুণ অবস্থা।’
ফারাক্কা লংমার্চ উদ্যাপন কমিটি আয়োজিত সমাবেশে গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, মানুষ নিজেই যে প্রকৃতির অংশ, সেই প্রকৃতিকে মানুষ ধ্বংস করে দিচ্ছে। ফারাক্কা বাঁধের বিরোধিতা করে ভাসানী যে প্রকৃতি বাঁচানোর দর্শন দিয়ে গেছেন, তা আর কেউ দিতে পারেননি। নদীর পানিতে কেবল মানুষের হক নয়, পশুপাখি, সাপ, ব্যাঙ—সবারই হক আছে। এই দেশ বাঁচাতে দ্রুত জাতিসংঘ পানিপ্রবাহ কনভেনশন আইনের দিকে যেতে হবে। ভারতের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যেতে হবে।
ফারাক্কা লংমার্চ উদ্যাপন কমিটির আহ্বায়ক মাহবুব সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে এতে আরও বক্তব্য দেন পানিসম্পদ পরিকল্পনা সংস্থার সাবেক মহাপরিচালক প্রকৌশলী ম ইনামুল হক, রাজশাহী জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন ও জাতিসংঘ পানিপ্রবাহ কনভেনশন বাস্তবায়ন আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম, ভাসানী অনুসারী পরিষদের মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ রফিকুল ইসলাম, ভাসানীর নাতি আজাদ খান ভাসানী, নদী ও পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি এনামুল হক, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ওয়াসিম হোসেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাসানী ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক জি এম শফিউর রহমান প্রমুখ।
সমাবেশ শেষে পানির ন্যায্য হিসাব ও ভারতের আধিপত্যশীলতার বিরুদ্ধে জাফরুল্লাহ চৌধুরীর নেতৃত্বে মিছিল নিয়ে নগরের সাহেববাজার জিরো পয়েন্টে আসেন উপস্থিত অতিথিরা।