টাঙ্গাইলের সখীপুর
মাধ্যমিক পর্যায়ে ৭ হাজার শিক্ষার্থী ক্লাসে ফেরেনি
গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে ৭ অক্টোবর পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার বিশ্লেষণ করে এ তথ্য জানা গেছে।
টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার ৪৯টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রায় সাত হাজার শিক্ষার্থী করোনাকালীন ছুটির পর ক্লাসে ফেরেনি। সে হিসাবে উপজেলায় মাধ্যমিকে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর হার ২৩ দশমিক ৩১ শতাংশ।
বিদ্যালয় খোলার পর গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে ৭ অক্টোবর পর্যন্ত টানা ২৬ দিন শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার বিশ্লেষণ করে এ তথ্য জানা গেছে। শিক্ষকেরা বলেন, ঝরে যাওয়া এই শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেক মেয়ে বাল্যবিবাহের শিকার হয়েছে। অন্যদিকে বাড়তি আয়ের জন্য ছেলেরা বিভিন্ন কাজ করছে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ৪৯টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থী ছিল ২৯ হাজার ২৩৪ জন। গত বছরের মার্চ মাস থেকে করোনার কারণে দেড় বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে। এরপর ১২ সেপ্টেম্বর বিদ্যালয় খোলা হলে ২২ হাজার ৪১৯ জন শিক্ষার্থী ক্লাস করছে। বাকি ৬ হাজার ৮১৫ জন শিক্ষার্থী টানা অনুপস্থিত থাকছে।
এদিকে উপজেলায় ২০২১ সালের এসএসসি পরীক্ষায় ফরম পূরণ করেছে ৩ হাজার ৪৩৪ জন। তাদের প্রতিদিন ক্লাস করার কথা থাকলেও ৭১২ জন ক্লাসে আসছে না। তাদের মধ্যে ৩৮৭ জন ছেলে ও ৩২৫ জন মেয়ে।
কালমেঘা উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী রিমন আহমেদ বলে, করোনাকালে তার সহপাঠীদের অনেকে অর্থনৈতিকভাবে বিভিন্ন সমস্যায় ছিল। ফলে কেউ মাঠে শ্রমিকের কাজ করছে, কেউ–বা কলকারখানায় কাজ নিয়েছে। এখন কাজের মধ্যে থেকে তারা আর স্কুলে আসতে চাইছে না।
সখীপুর আদর্শ বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী লাবণ্য ইয়াসমিন বলে, ‘অনেক দিন পর স্কুল খুলেছে। শুনেছি, আমাদের স্কুলের ১৭ জন শিক্ষার্থীর বিয়ে হয়ে গেছে। সহপাঠীদের অনেককেই ক্লাসে দেখছি না।’
এদিকে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যালয় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কাছে তাঁদের কতজন ছাত্রী করোনাকালে বাল্যবিবাহের শিকার হয়েছে, তা জানতে চেয়েছে। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মাত্র ১০টি বিদ্যালয় এ–সংক্রান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওই ১০ বিদ্যালয়ে ৯৬ জন বাল্যবিবাহের শিকার হয়েছে।
লাঙুলিয়া উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম বলেন, তাঁর বিদ্যালয়ে ১২ জন ছাত্রীর বাল্যবিবাহ হয়েছে। বিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থী দরিদ্র পরিবারের। দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকায় অভিভাবকেরা সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন। স্কুল খোলার অনিশ্চয়তার কারণে অনেকে মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। অন্যদিকে ছেলেসন্তানদের কাজে লাগিয়েছেন। তাই তারা স্কুলে আসছে না। তাদের স্কুলমুখী করতে চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মফিজুল ইসলাম বলেন, ঝরে পড়া শিক্ষার্থী ও বাল্যবিবাহের তালিকা তৈরি করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তালিকা অনুযায়ী বিদ্যালয়ে না আসা শিক্ষার্থীদের স্কুলমুখী করতে অভিভাবকদের উদ্বুদ্ধ করা হবে।