মাদারীপুরে সাংসদ শাজাহান খান ও আ.লীগ সভাপতির সমর্থকদের সংঘর্ষ, আহত ১৫
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও মাদারীপুর-২ আসনের সাংসদ শাজাহান খান এবং মাদারীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ মোল্লার সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে পুলিশসহ আহত হয়েছেন অন্তত ১৫ জন।
আজ শনিবার সকাল ১০টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের সদর উপজেলার কলাবাড়ি ও ঘটকচর এলাকায় দফায় দফায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে দুটি ব্যাংক, অন্তত ১০টি মোটরসাইকেল, বেশ কয়েকটি দোকানপাট ও বসতঘরে ভাঙচুর চালানো হয়। এদিকে মহাসড়কের পাশে দুপক্ষের পাল্টাপাল্টি সংঘর্ষ চলায় প্রায় আধা ঘণ্টা বন্ধ থাকে যানবাহনের চলাচল। এতে দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা।
সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে সাংসদ শাজাহান খানের বাবা মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক আছমত আলী খানের মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বক্তব্য দেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ মোল্লা।
পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও এলাকাবাসী জানান, সম্প্রতি রাজৈরে এক অনুষ্ঠানে সাংসদ শাজাহান খানের বাবা মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক আছমত আলী খানের মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বক্তব্য দেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ মোল্লা। সেই সঙ্গে সাংসদ শাজাহান খান বর্তমানে বিএনপিকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছেন বলে অভিযোগ তোলেন। এরই প্রতিবাদে এক সপ্তাহ ধরে সাংসদ–সমর্থিত নেতা-কর্মীরা জেলা সদর ও রাজৈর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ সভা ও বিক্ষোভ করে আসছিলেন। উল্টো দিকে জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও সাংসদ শাজাহান খান ও তাঁর সমর্থকদের কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ জানিয়ে সভা-সেমিনার চলে আসছিল। এরই ধারাবাহিকতায় আজ শনিবার সকালে আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ মোল্লার পদত্যাগ ও বিচারের দাবিতে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের কলাবাড়ি এলাকায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভের আয়োজন করেন শাজাহান খানের কর্মীরা। একই সময় ওই স্থানে শাহাবুদ্দিন আহমেদ মোল্লার সমর্থকেরা প্রতিবাদ সভার আয়োজন করেন। এতে উভয় পক্ষের লোকজনের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।
পুলিশের উপস্থিতিতেই উভয় পক্ষের মধ্যে ধস্তাধস্তি ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়া শুরু হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেলে পুলিশ লাঠিপেটা করে উভয় পক্ষকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এরপরই উভয় পক্ষ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় তিন পুলিশসহ আহত হন অন্তত ১৫ জন। এ সময় সাংসদ–সমর্থিত উত্তেজিত নেতা-কর্মীরা ঘটকচর বাসস্ট্যান্ডের পাশের সরদার মার্কেটে ভাঙচুর ও হামলা চালান। এতে ওই মার্কেটে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও ইসলামী ব্যাংকের ঘটকচর শাখা, রেখা বিউটি পারলার, একটি হোটেলে ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়। এ ছাড়া মার্কেটের প্রায় ৭টি ছোট-বড় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও ১০টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করেন বিক্ষুব্ধ ব্যক্তিরা। খবর পেয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ। বর্তমানে পরিস্থিতি থমথমে থাকায় পুরো এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে।
ভাঙচুরের শিকার সরদার মার্কেটের স্বত্বাধিকারী ও কেন্দুয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সোহরাব হোসেন সরদার বলেন, ‘জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক রুবেল খান, সাংসদপুত্র আসিবুর রহমান খান, কেন্দুয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি জয়নাল মাতুব্বর লোকজন নিয়ে আমার নিজস্ব মার্কেটে হামলা ও ভাঙচুর চালান। এমন কোনো দোকানপাট নেই যে তাণ্ডব চালানো হয়নি। দুটি ব্যাংক, মসজিদ-মাদ্রাসা পর্যন্ত তাঁরা বাদ রাখেন নাই। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে অপরাধীদের বিরুদ্ধে মামলা করব। আমি এর কঠোর বিচার চাই।’
জানতে চাইলে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ মোল্লা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি সাংসদ শাজাহান খানের বাবাকে নিয়ে যে কথা বলেছি, তার ভুল বা সঠিক কী ছিল, সেই ব্যাখ্যা তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করতে পারতেন। কিন্তু সাংসদ সেটা না করে আমার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সভা করেছেন। তাঁর সমর্থকদের দিয়ে বিক্ষোভ ও ভাঙচুর শুরু করেছেন। আজ যে হামলা–ভাঙচুর হয়েছে, তা সাংসদের ছেলে ও ভাতিজার নেতৃত্বে বিএনপির লোকজনকে দিয়ে করানো হয়েছে। হামলায় একজন মুক্তিযোদ্ধার মার্কেট ও তাঁর বসতঘর ভাঙচুর হয়েছে। এর দায়ভার সাংসদের নিতে হবে। তিনি কোনোভাবেই এই দায় এড়াতে পারবেন না।’
অভিযোগের বিষয় জানতে চাইলে সাংসদ শাজাহান খান মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আমার বাবাকে নিয়ে যে কথা বলেছেন, তা আমার ও মাদারীপুরবাসীর জন্য অপমানজনক। আমি রাজনৈতিকভাবে এলাকার জনগণ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে এর প্রতিবাদ করে যাব। আমার ছেলে, ভাতিজাসহ আমার পরিবারের স্বজনেরা আজ তারই অংশ হিসেবে মানববন্ধনে যোগ দিতে কলাবাড়ি যান। সেখানে তাঁদের লক্ষ্য করে প্রথমে ঢিল ছোড়া হয়, এরপরই ঘটকচর এলাকায় আসার পর আবারও তাদের লক্ষ্য করে ঢিল ছোড়া হয়। পরে সোহরাব সরদারের নেতৃত্বে হামলা চালানো হলে আমার ছেলে ও ভাতিজারা তা প্রতিরোধ করে। সেখানে তারা কোনো ভাঙচুর ও মারামারি করতে যায়নি।’
বিকেল পাঁচটার দিকে মাদারীপুরের পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তাফা রাসেল প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিবদমান দুপক্ষের বিক্ষোভ সমাবেশকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। দুপক্ষকে আমরা একত্র হতে দিইনি। ফলে মারামারি হয়নি। আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনলেও যাওয়ার সময় কিছু বিক্ষুব্ধরা দোকানপাট, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ইটপাটকেল ছুড়ে ভাঙচুর করে, যা কয়েকটি সিসিটিভি দেখে শনাক্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘দুপক্ষের ইটপাটকেল নিক্ষেপে আমাদের তিনজন পুলিশ আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করা যায়নি। থানায় কোনো পক্ষ অভিযোগও করেনি।’