মাত্র তিন টাকায় চক্ষুরোগীদের চিকিৎসা
নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের গিলাতলা গ্রামের বাসিন্দা নূপুর। তাঁর চোখ লাল হয়ে গেছে, চুলকায়ও। চোখের এ সমস্যার জন্য এসেছেন লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। বহির্বিভাগে তিন টাকা দিয়ে টিকিট নিয়েছেন। এ হাসপাতালের দোতলায় কমিউনিটি ভিশন সেন্টার। সেখানে চোখের চিকিৎসার দায়িত্বে আছেন দুজন নার্স। তাঁরা নূপুরকে যন্ত্রপাতির মাধ্যমে দেখলেন। এরপর গোপালগঞ্জের শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব চক্ষু হাসপাতালের চক্ষু বিশেষজ্ঞ আবদুল হাই ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নূপুরের সঙ্গে কথা বললেন। কয়েক মিনিটের মধ্যে ওই চিকিৎসক অনলাইনে ব্যবস্থাপত্র পাঠিয়ে দিলেন। বিনা মূল্যে ওষুধ দেওয়া হলো নূপুরকে।
নূপুরের (২৩) মতো এভাবে একে একে চিকিৎসা দেওয়া হলো লক্ষ্মীপাশার শেখ নজরুল ইসলাম, বাকা গ্রামের আলমগীর হোসেনের চার বছরের মেয়ে জোহরা ও জয়পুর গ্রামের ইমদাদুল মোল্লার আড়াই মাস বয়সী মেয়ে রোজাকে। গতকাল রোববার এভাবে অন্তত ৩৫ জন চোখের রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব চক্ষু হাসপাতালের মাধ্যমে গোপালগঞ্জ জেলার আশপাশের আটটি জেলার ২০টি উপজেলায় চোখের চিকিৎসার
জন্য কমিউনিটি ভিশন সেন্টার চালু করা হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ন্যাশনাল আই কেয়ার বিভাগ এটি পরিচালনা করে। গোপালগঞ্জ, নড়াইল, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, খুলনা, বাগেরহাট, মাদারীপুর ও পিরোজপুর জেলার ২০টি উপজেলায় ২০১৮ সালের ২৯ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই কমিউনিটি ভিশন সেন্টারের উদ্বোধন করেন। নড়াইল জেলার লোহাগড়া ও কালিয়া উপজেলায় এটি চালু আছে।
লোহাগড়া কমিউনিটি ভিশন সেন্টারের দায়িত্বে আছেন এ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জ্যেষ্ঠ নার্স খাদিজা খানম ও সাথী রাহা। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ দুজনকে ঢাকার জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও ভারতের অরবিন্দ আই হসপিটাল থেকে প্রশিক্ষণ দিয়ে এনেছে।
সাথী রাহা জানলেন, এখানে চোখ পরীক্ষার যাবতীয় যন্ত্রপাতি আছে। এগুলো দিয়ে রোগীদের চোখের পরীক্ষা করা হয়। অনলাইনে রোগীকে নিবন্ধন করে তাঁর যাবতীয় বিষয় অনলাইনে পাঠানো হয়। রোগীর এ তথ্যগুলো দেখে শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব চক্ষু হাসপাতালের চক্ষু বিশেষজ্ঞরা ব্যবস্থাপত্র অনলাইনে পাঠিয়ে দেন। কয়েক মিনিটের মধ্যে এ ব্যবস্থাপত্র পাওয়া যায়। অধিকাংশ রোগীর সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কথা বলেন চিকিৎসকেরা। গ্লুকোমা, কর্নিয়া আলসার, ছানিসহ জটিল রোগের জন্য ওই চিকিৎসকেরা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব চক্ষু হাসপাতালে যেতে বলেন। সেখানে ওই ২০টি উপজেলার ভিশন সেন্টারের জন্য আলাদা কাউন্টার আছে। ওই হাসপাতালে চোখের অস্ত্রোপচারসহ সব ধরনের চিকিৎসা বিনা মূল্যে দেওয়া হয়।
সাথী রাহা আরও জানলেন, শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব চক্ষু হাসপাতালে তিন-চারজন চিকিৎসক প্রতিদিন নিয়োজিত থকেন ভিশন সেন্টারগুলোতে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য। এই ভিশন সেন্টারে রোগীদের চিকিৎসা, যাবতীয় ওষুধ ও চশমা বিনা মূল্যে দেওয়া হয়। প্রতিদিন সকাল সাড়ে আটটা থেকে বেলা দুইটা পর্যন্ত এভাবে চোখের রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হয়। প্রতিদিন গড়ে ৩৫ জন রোগী আসে এখানে চিকিৎসা নিতে। রোগীদের অনলাইনে নিবন্ধন করা থাকে। তাই পরবর্তী সময়েও আগের ব্যবস্থাপত্র দেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
লোহাগড়া ভিশন সেন্টারের মাধ্যমে শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব চক্ষু হাসপাতাল থেকে চোখের ছানি অস্ত্রোপচার করে লেন্স সংযোজন করেছেন উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি শেখ নজরুল ইসলাম। তিনি জানান, সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে ভালো সেবা পেয়েছেন তিনি।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শরীফ সাহাবুর রহমান বলেন, এই ভিশন সেন্টারের মাধ্যমে গ্রাম এলাকার মানুষ বিনা মূল্যে বিশেষায়িত সেবা পাচ্ছে। সর্বোপরি অসহায় ও দরিদ্র জনগণের জন্য খুবই কার্যকর পদক্ষেপ এটি।