মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র লকডাউনের দাবি, কর্তৃপক্ষ বলছে কাজ চলবে
করোনার সংক্রমণ রোধে কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজ বন্ধের দাবিতে ধর্মঘট করছেন শ্রমিকেরা। শ্রমিকদের একাংশ কাজ বন্ধ রেখেছেন গত বৃহস্পতিবার থেকে। তবে ধর্মঘটি শ্রমিকদের সঙ্গে এখন পর্যন্ত কোনো আলোচনায় বসেনি বিদ্যুৎকেন্দ্রটির তত্ত্বাবধানকারী প্রতিষ্ঠান কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিপিজিসিবিএল)। কর্তৃপক্ষ ধর্মঘটের কথা অস্বীকার করেছে। তারা বলছে কাজ বন্ধ করা হবে না।
এদিকে সেখানকার পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে ধর্মঘটি চারজন শ্রমিক মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘মার্চ মাসের বেতন এখনো আমরা পাইনি। আমাদের হাতে কোনো টাকা নেই। এ অবস্থায় তিন মাসের বেতন ও লকডাউনের দাবি করলে তারা বলছে, গো হোম। নো মানি। এখন পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হচ্ছে।’
গত বৃহস্পতিবার থেকে কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে নির্মাণাধীন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের শ্রমিকেরা বিদ্যুৎ প্রকল্প এলাকাটি লকডাউনের দাবি জানান। শ্রমিকদের আরও দুটি দাবি হলো, লকডাউন অবস্থায় শ্রমিকদের তিন মাস বেতন দিতে হবে ও কোনো শ্রমিককে ছাঁটাই করা যাবে না। এ দাবিতে তাঁরা আজ শুক্রবারও কাজে অংশ নেননি। মাতারবাড়ীতে আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাজ থেকে শ্রমিক নেওয়া হয়েছে মাতারবাড়ী প্রকল্পে। এখানে বর্তমানে প্রায় ৩ হাজার শ্রমিক কাজ করছেন।
তবে ধর্মঘট ও অসন্তোষের তথ্য অস্বীকার করেছেন সিপিজিসিবিএলের নির্বাহী পরিচালক মো. নজরুল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘সেখানে শ্রমিক অসন্তোষ রয়েছে, এ রকম আজগুবি তথ্য কই পান? কে দিল আপনাকে এমন তথ্য? মাতারবাড়ীতে রাতদিন ২৪ ঘণ্টা কাজ হচ্ছে। সেখানে কোনো সমস্যা নেই। কাজ চলবে।’
কেন্দ্রটি বন্ধ থাকবে কি না, তা নিয়ে খোদ বিদ্যুৎ বিভাগ ও সিপিজিসিবিএলের মধ্যে মত পার্থক্য রয়েছে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ প্রথম আলোকে আজ শুক্রবার দুপুরে মুঠোফোনে বলেন, ‘সব নির্মাণকাজ বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। ইতিমধ্যে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। মাতারবাড়ীর কাজও বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। এ জন্য কোনো শ্রমিকের চাকরি যাবে না।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিপিজিসিবিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবদুল মোত্তালিব প্রথম আলোকে বলেন, সেখানে বিদেশি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। আমরা কাজ চালিয়ে নিতে বলেছি। কাজ বন্ধ থাকবে না। কারণ সব ধরনের সামাজিক দূরত্ব মেনেই কাজ চলছে সেখানে।’
বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী সব কাজ বন্ধ রাখতে বলেছেন, এমন সিদ্ধান্তের কথা উদ্ধৃত করলে আবদুল মোত্তালিব প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি তো কাজ চালিয়ে যেতে কোনো সমস্যা দেখছি না। যদি বিদেশিরা কাজ চালিয়ে যেতে চায়, আমরা কেন মানা করতে যাব। কাজ চলবে।’
বাংলাদেশ সরকার ও জাপানের অর্থায়নে ৩৫ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা ব্যয়ে কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট একটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ শুরু হয় ২০১৪ সালে। প্রকল্পের মোট অর্থায়নের ২৮ হাজার ৯৩৯ কোটি টাকা প্রকল্প সাহায্য হিসাবে জাইকা দেবে এবং অবশিষ্ট ৭ হাজার ৪৫ কোটি টাকা সরকার ও সিপিজিসিবিএল দেবে।
ভূমি অধিগ্রহণ ও অন্যান্য কাজ শেষে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হয় ২০১৭ সালে। ২০২৪ সালে এ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হবে বলে মনে করা হচ্ছে। বিদ্যুৎ বিভাগের প্রতিষ্ঠান সিপিজিসিবিএল এ বিদ্যুৎকেন্দ্রটির তত্ত্বাবধান করছে।
শ্রমিক অসন্তোষ নিয়ন্ত্রণে রাখতে স্থানীয় পুলিশের সদস্যদের ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে। ওই দলে থাকা পুলিশ পরিদর্শক মো. শাহাজান প্রথম আলোকে বলেন, শ্রমিকেরা জড়ো হয়ে মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প লকডাউনের দাবি জানিয়েছেন।
এদিকে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের সব উন্নয়নকাজ ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ রাখা হয়েছে। এখানে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। একেকটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে আবার ৬৬০ মেগাওয়াটের দুটি করে ইউনিট রয়েছে। এর মধ্যে ৬৬০ মেগাওয়াটের একটি ইউনিট উৎপাদনে এসেছে। প্রথম বিদ্যুৎকেন্দ্রটির দ্বিতীয় ইউনিট নির্মাণের কাজ চলছিল। ৭ এপ্রিল থেকে সেটির নির্মাণ বন্ধ রাখা হয়েছে। এটির অর্ধেকের মালিক বিদ্যুৎ বিভাগের প্রতিষ্ঠান নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি, বাকি অর্ধেকের মালিক চীনা প্রতিষ্ঠান সিএমসি। বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে বাংলাদেশি সব শ্রমিকের মার্চ মাসের বেতন-ভাতাও পরিশোধ করা হয়েছে।