মহাবিপন্ন বাংলা শকুন উদ্ধার
বাড়ির পাশে বনে বসেছিল শকুনটি। একদল কিশোর সেটিকে ধরে ফেলে। এরপর খেলাচ্ছলে টানাহেঁচড়া করছিল। এ অবস্থায় শকুনটিকে নিয়ে বাড়িতে নিরাপদে রাখা হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এটিকে রক্ষা করার আহ্বান জানানো হয়। আহ্বানে সাড়া দিয়ে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণী অধিকারবিষয়ক সংগঠন ‘প্রাধিকার’ গতকাল বৃহস্পতিবার শকুনটি উদ্ধার করে নিয়ে এসেছে।
প্রাধিকার জানায়, প্রায় এক সপ্তাহ আগে সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার নুরাল্লাপুর গ্রামের পাশের বনে শকুনটি পাওয়া যায়। কিশোরদের কাছ থেকে উদ্ধার করে সেটি বাড়িতে রাখেন রাকিব উদ্দিন নামের একজন তরুণ। ফেসবুকে শকুনটিকে রক্ষার আহ্বান জানিয়ে ছবি প্রকাশ করেন মেহেদী হাসান নামের আরেক তরুণ। সেটি নজরে আসে প্রাধিকারের কোষাধ্যক্ষ তাজুল ইসলামের। তিনি প্রাধিকারের সদস্য প্রশান্ত দেবনাথকে সঙ্গে নিয়ে গতকাল সকালে ঘটনাস্থলে যান। তাঁরা শকুনটি উদ্ধার করে সিলেট বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্রের চিকিৎসাকেন্দ্রে দিয়েছেন।
তাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, এটি বাংলা শকুন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। বর্তমানে এটি মহাবিপন্ন প্রাণীদের তালিকায় রয়েছে। পরিণত বয়সের শকুনটি পরিযায়ী হওয়ায় ওড়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে হয়তো। শকুনটি ক্ষুধার্তও। আপাতত এটিকে টিলাগড় বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্রে রেখে সেবা দেওয়া হচ্ছে। উড়তে সক্ষম হলে শকুনটিকে অবমুক্ত করা হবে।
ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারের (আইইউসিএন) বরাত দিয়ে প্রাধিকার জানায়, বাংলা শকুন মহাবিপন্ন তালিকার প্রাণী। সিলেট অঞ্চলের মধ্যে হবিগঞ্জের রেমা কালেঙ্গায় কিছু শকুন পাওয়া যায়। এ ছাড়া বাংলাদেশের আর কোথাও এটি নেই। একসময় বাংলাদেশে তিন প্রজাতির শকুন স্থায়ীভাবে বসবাস করত। এর মধ্যে রাজশকুন বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বর্তমানে বাংলা শকুনই একমাত্র আবাসিক শকুন হিসেবে টিকে আছে। এটি দক্ষিণ এশিয়ার এনডেমিক পাখি। বাংলা শকুন বর্জ্যভুক হিসেবে ‘প্রাকৃতিক পরিষ্কারক’ হিসেবে পরিচিত। এর বৈজ্ঞানিক নাম Gyps bengalensis। ১৯৯০ সাল থেকে ভারতীয় উপমহাদেশে বাংলা শকুনসহ অন্যান্য শকুনের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমেছে।
সাংগঠনিক পর্যবেক্ষণ সূত্রে প্রাধিকারের সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন রিফাত বলেন, ‘প্রকৃতির ঝাড়ুদার শকুনের সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে কমায় প্রকৃতির ওপরও বিরূপ প্রভাব পড়েছে। সিলেট অঞ্চলে শকুন রক্ষায় আমরা কিছু সাংগঠনিক পদক্ষেপ নিয়েছিলাম। উদ্ধার করা শকুনটিকে বাঁচাতে সক্ষম হলে প্রাধিকার বন বিভাগের কাছে শকুন রক্ষার প্রস্তাবটি আবার উত্থাপন করবে।’