পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জে চলমান এসএসসি পরীক্ষায় একটি কেন্দ্রে একই বিষয়ে একই দিনে দুইবার পরীক্ষা নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। পরীক্ষা শুরু হওয়ার এক ঘণ্টা পর ভুল কোডের প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়টি নজরে আসে কেন্দ্র কর্তৃপক্ষের। পরে ওই প্রশ্নপত্র ও উত্তরপত্র (খাতা) প্রত্যাহার করে নির্ধারিত সেট কোডের প্রশ্নপত্রে নতুন খাতায় পরীক্ষা নেওয়া হয়।
আজ সোমবার উপজেলার সুবিদখালী সরকারি রহমান ইসহাক মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা বিষয়ের (বিষয় কোড-১৫৩) পরীক্ষায় এ ঘটনা ঘটে। একই বিষয়ে পরপর দুইবার পরীক্ষা দেওয়ায় পরীক্ষার্থী, অভিভাবক ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকেরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
পরীক্ষার্থী ও অভিভাবক সূত্রে জানা যায়, সুবিদখালী সরকারি রহমান ইসহাক মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের ভেন্যুতে সকাল ১০টায় বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা বিষয়ের পরীক্ষা শুরু হয়। এতে ১৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১৯১ জন শিক্ষার্থী অংশ নেয়। ওই কেন্দ্রে সেট কোড-৩-এর প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা হওয়ার কথা থাকলেও, ভুলে পরীক্ষার্থীদের সরবরাহ করা হয় সেট কোড-১-এর প্রশ্নপত্র। পরীক্ষার প্রায় শেষের দিকে কেন্দ্র কর্তৃপক্ষের কাছে ভুলটি ধরা পড়ে। পরে তড়িঘড়ি করে পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে ভুল প্রশ্নপত্র এবং উত্তরপত্র তুলে নিয়ে পুনরায় নির্ধারিত (সেট কোড-৩) কোডের প্রশ্ন সরবরাহ করে সময় বাড়িয়ে পরীক্ষা নেওয়া হয়।
পরীক্ষাকেন্দ্রের ফটকে অপেক্ষারত একজন অভিভাবক মো. হানিফ মুন্সী বলেন, ‘আমার মেয়ের পরীক্ষা সকাল ১০টায় শুরু হয়ে বেলা সাড়ে ১১টায় শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু সাড়ে ১২টা বেজে গেছে, হল থেকে বের হচ্ছে না। শুনলাম, একই পরীক্ষা নাকি দুইবার নেওয়া হচ্ছে।’
বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের অধীনে মির্জাগঞ্জে ২০২১ সালে এসএসসি পরীক্ষায় ২ হাজার ২১২ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিচ্ছে।
পরীক্ষা শেষে মো. আরিফুল ইসলাম, মো. আবদুল্লাহ, তারিকুল ইসলামসহ কয়েকজন পরীক্ষার্থী বলে, পরীক্ষার প্রায় শেষে খাতা জমা দেওয়ার আগমুহূর্তে তাদের খাতা বাতিল করে নতুন করে প্রশ্নপত্র দেওয়া হয়। এরপর তারা পুনরায় পরীক্ষা দেয়। কেন একই বিষয়ে একই দিনে দুইবার পরীক্ষা দিতে হলো, তার কিছুই তারা বুঝতে পারেনি। কেউ কেউ বলছে, প্রথমবার ভালো পরীক্ষা দিয়েছে, দ্বিতীয়বার নতুন প্রশ্নে পরীক্ষা বেশি ভালো হয়নি। তাই ফল আশানুরূপ হবে না।
সুবিদখালী রোকেয়া খানম বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. গোলাম সরোয়ার বলেন, তাঁর প্রতিষ্ঠানের ২৫ জন শিক্ষার্থী এই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে। একই কেন্দ্রের অধীনে দুটি ভেন্যু—আর কে বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও সুবিদখালী রহমান ইসহাক মাধ্যমিক বিদ্যালয়। এর মধ্যে একটি কেন্দ্রে ভুল কোডের প্রশ্নপত্র সরবরাহ করার কারণে দুইবার পরীক্ষা দিতে হলো শিক্ষার্থীদের। এতে পরীক্ষার ফলাফলেও প্রভাব পড়বে। এই ভুলের দায় আসলে কে নেবেন, তিনি জানেন না।
জানতে চাইলে সুবিদখালী সরকারি রহমান ইসহাক মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের সচিব আবদুল জলিল প্রথম আলোকে বলেন, এসএসসি পরীক্ষায় ওই দিন বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যাতা বিষয়ে সঠিক সময়ে সঠিক কোডেই পরীক্ষা শুরু হয়। তবে লিখিত (সৃজনশীল) পরীক্ষায় ভুলে সেট কোড-৩ এর পরিবর্তে সেট কোড-১-এর প্রশ্ন দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কয়েক মিনিটের মধ্যেই আবার ভুল প্রশ্ন এবং খাতা তুলে নিয়ে সঠিক প্রশ্নপত্র দিয়ে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। এতে তেমন কোনো সমস্যা হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানিয়া ফেরদৌস বলেন, বিষয়টি তিনি অবগত হয়েছেন। এ ব্যাপারে তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পরীক্ষার্থীদের ক্ষতির বিষয়ে বোর্ড কর্তৃপক্ষ পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের অধীনে মির্জাগঞ্জে ২০২১ সালে এসএসসি পরীক্ষায় ২ হাজার ২১২ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিচ্ছে। এ ছাড়া সমমানের দাখিল পরীক্ষায় ৫১৮ জন এবং ভোকেশনাল থেকে ২২৪ জন পরীক্ষার্থী রয়েছে।